IQ মানে কি - কালানুক্রমিক বয়স ও মানসিক বয়স কি

মনস্তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিমত্তা অভিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল বিষয়। চাকরি পরীক্ষার সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় মনস্তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিমত্তা অভীক্ষা থেকে প্রশ্ন করা হয়। আইকিউ এমন একটি পরীক্ষা যার মাধ্যমে একটি শিশু বা একজন ব্যক্তির বুদ্ধিমান নিরূপণ করা হয়। আই কিউ পরীক্ষায় সাধারণত এমন কিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়, যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান বা সাধারণ জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না।
IQ মানে কি - কালানুক্রমিক বয়স ও মানসিক বয়স কি
বিচক্ষণতা, দ্রুততা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তর প্রদানের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে আই কিউ নির্ধারণ করা হয়। শিশুদের শেখার অক্ষমতা সনাক্ত করার প্রয়োজন থেকেই আইকিউ অভীক্ষার এর সৃষ্টি। আজকের এই পোস্টে বুদ্ধিমত্তা কি বা আই কিউ কি এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।

সূচিপত্রঃ-IQ মানে কি - কালানুক্রমিক বয়স ও মানসিক বয়স কি

ভুমিকাঃ

প্রতিটি মানুষ জন্মগতভাবে বুদ্ধিমত্তা নিয়ে জন্মায়। কিন্তু ভবিষ্যতে খাদ্য গ্রহণ, লাইফ স্টাইল, পরিবেশ, মনস্তাত্ত্বিক ও স্নায়বিক প্রভাবের কারণে বুদ্ধিমত্তার পরিবর্তন হতে পারে। আমরা অনেকেই আই কিউ এর পূর্ণ অর্থ জানিনা।

নোটঃ বাংলা আই কিউ প্রশ্ন ও উত্তর পড়তে মেনু থেকে মানসিক দক্ষতা ও গানিতিক যুক্তি অংশ পড়ুন।
বুদ্ধিমত্তা পরিমাপ সম্পর্কে বলার পূর্বে কয়েকটি বিষয় জানা জরুরি। যেমন- Chronological Age (কালানুক্রমিক বয়স), মানসিক বয়স (Mental Age), মনস্তত্ত্ব (Psychology), বুদ্ধিমত্তা (Intelligence). আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।

IQ মানে কিঃ

আমরা অনেকেই I Q মানে Intelligent Question বলে থাকি। যেটি আসলে ভুল।আসলে, I = Intelligence (বুদ্ধিমত্তা) Q = Quitient (ভাগফল) তাহলে I Q এর Elaboration হল= Intelligence Quotient (বুদ্ধিমত্তার ভাগফল) বা বুদ্ধ্যঙ্ক।

কালানুক্রমিক বয়স ও মানসিক বয়স কিঃ

কালানুক্রমিক বয়সঃএকটি শিশুর জন্মের পর থেকে সময়ের সাথে তার বয়স বাড়তে থাকে। সময়ের সাথে এই বয়স বৃদ্ধিকে কালানুক্রমিক বয়স বা Chronological Age বলে। (সংক্ষেপে- C A বলে)
মানসিক বয়সঃঅন্যদিকে শিশুর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তার বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক বয়স ও বৃদ্ধি পায়। এই বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক বয়সকে মানসিক বয়স (Mental Age) বলে। (সংক্ষেপে- M A বলে)

অথবা, কোনো ছেলে বা মেয়ে যে বয়সের উপযোগী পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে সে বয়সই হবে তার ‘মানসিক বয়স’ (Mental Age). এই মানসিক বয়স সেই ছেলে বা মেয়ের মানসিক পরিণতি নির্দেশ করে। একজন মানুষ কতটুকু বুদ্ধিসম্পন্ন তা তার মানসিক বয়সের উপর নির্ভর করে। আর এই বুদ্ধিমত্তা পরিমাপ করার জন্য ব্যবহৃত হয় আই কিউ টেস্ট।

Psychology (মনস্তত্ব)

PSYCHOLOGY হল জ্ঞানের এমন একটি শাখা যে শাখায় মন ও মন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা করা হয়। মন এমন একটি সত্তা যা মানুষের চিন্তা (thinking), অনুভূতি (feeling), ইচ্ছা (willing), এই তিনটি প্রক্রিয়া প্রকাশ করে।অর্থাৎ চিন্তা, অনুভূতি ও ইচ্ছা প্রভৃতি মানসিক প্রক্রিয়াগুলো মনেরই প্রতীয়মান রূপ।

Intelligence (বুদ্ধিমত্তা)

বিখ্যাত মনোবিদ Robert S. Woodworth বলেছেন “Intelligence means intellect put to use.” বুদ্ধিবৃত্তিকে বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য যে মানসিক শক্তি কাজ করে তাকেই বুদ্ধি বলে। বুদ্ধি হচ্ছে সহজাত মানসিক ক্ষমতা এবং জ্ঞান হচ্ছে অর্জিত বিদ্যা। বুদ্ধির দ্বারা জ্ঞান অর্জন করে আমরা সেই জ্ঞানকে ব্যবহারিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করি। জ্ঞানকে যথোপযুক্ত ভাবে ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করায় হচ্ছে বুদ্ধি।

বুদ্ধির সাথে জ্ঞানের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণত ব্যক্তির বুদ্ধি পরিমাপ করার জন্য আমরা তার অর্জিত বিদ্যা বা জ্ঞানকে ব্যবহার করি। যদিও বুদ্ধির অভিক্ষা এবং অর্জিত বিদ্যা সম্পর্কিত অভিক্ষা গুলোর (Achievement Test) মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তবে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের বুদ্ধির পরীক্ষায় অর্জিত বিদ্যাকে একেবারে বর্জন করা সম্ভব হয় না।

বুদ্ধি অভীক্ষা বা বুদ্ধি পরীক্ষা (Intelligence Test)

যদিও বুদ্ধির যথার্থ ও সর্বজনগ্রাহ্য সংখ্যা নিরূপণ করা কঠিন এবং বুদ্ধির স্বরূপ সম্পর্কেও বিভিন্ন মনোবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে, তবুও বুদ্ধি পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন মনোবিদ বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধি অভীক্ষা (Intelligence Test) রচনা করেছেন। ফ্রান্সের মনোবিজ্ঞানী Alfred Binet ও Theodore Simon কেই বিজ্ঞানসম্মত বুদ্ধি অভীক্ষার উদ্ভাবক হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়।

১৯০৪ সালে Alfred Binet ও তার সহকর্মী Theodore Simon বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিমান নির্ণয় করার জন্য একটি বুদ্ধি মাপক অভীক্ষা আবিষ্কার করেন। তার এই অভীক্ষাটি (Binet–Simon test) নামে পরিচিত। এই পরীক্ষাগুলো করা হয়েছিল শিশুদের মানসিক বয়স মূল্যায়ন করে শেখার অক্ষমতা সনাক্ত করার জন্য। এই অভীক্ষায় ৩০ টি সহজ প্রশ্ন করা হতো।

প্রশ্নগুলো সহজ থেকে কঠিন এবং কঠিন থেকে কঠিনতর এভাবে ধাপে ধাপে সাজানো ছিল। সেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা হতো। এই অভীক্ষায় প্রশ্নগুলো বয়স ভিত্তিক পর্যায়ক্রমে সাজানো থাকে। এ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, শিশুদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের মানসিক ক্ষমতা বা বুদ্ধিও বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং বিভিন্ন শিশুর মানসিক ক্ষমতার মধ্যেও তারতম্য আছে।

Binet-র বুদ্ধি অভিক্ষার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় 'মানসিক বয়স' (Mental age)-এর ব্যবহার। নির্দিষ্ট বয়সের ছেলে মেয়েদের জন্য প্রশ্ন নির্ধারিত থাকতো। প্রশ্নগুলোর মধ্যে শতকরা ৫০ টির অধিক উত্তর দিতে পারলে ওই শিক্ষার্থীর ‘প্রকৃত বয়স’ (Chronological age) যাই হোক না কেন, তার ‘মানসিক বয়স’ (Mental Age) ঐ বছরের (প্রশ্নগুলো যে বয়সের উপযোগী ছিল) ধরা হয়।
নির্দিষ্ট বয়সের ছেলেমেয়েদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নের শতকরা পঞ্চাশটির অধিক উত্তর দিতে পারলে ঐ শিক্ষার্থীর 'প্রকৃত বয়স' (Chronological age) যাই হোক না কেন, তার মানসিক বয়স ঐ বছরের (প্রশ্নগুলো যে বয়সের উপযোগী ছিল) ধরা হয়। যেমন— ৬ বছরের শিক্ষার্থী ৯ বছরের শিক্ষার্থীর উপযোগী প্রশ্নের শতকরা পঞ্চাশটির অধিক উত্তর দিতে পারলে তার প্রকৃত বয়স ৬ বছর হলেও মানসিক বয়স ৯ বছর ধরা হয়।

বিপরীতপক্ষে, ৯ বছরের শিক্ষার্থী যদি ৭ বছরের শিক্ষার্থীর জন্য নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হয়। তবে তার প্রকৃত বয়স ৯ বছর হলেও মানসিক বয়স ধরা হয় ৭ বছর। অর্থাৎ, প্রথম উদাহরণের শিক্ষার্থী বুদ্ধির দিক থেকে কিছুটা এগিয়ে আর দ্বিতীয় শিক্ষার্থী বুদ্ধির দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছে ৷
শিশু বা একজন ব্যক্তি সমবয়স্কদের তুলনায় বুদ্ধির দিক থেকে কতটা এগিয়ে বা পিছিয়ে আছে তা জানার জন্য তার প্রকৃত বয়সের তুলনায় তার মানসিক বয়স নির্ধারণ করা দরকার। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে জার্মান মনোবিজ্ঞানী William Stern ১৯১২ সালের সর্বপ্রথম আই কিউ বা বুদ্ধ্যাঙ্ক বা বুদ্ধির ভাগফল (Intelligence Quotient) বা I Q কথাটি ব্যবহার করেন।

উপসংহারঃ

মানুষের বুদ্ধি হলো মস্তিষ্কের একটি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়া। শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে এই বুদ্ধির প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের বয়স ও অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এবং চিন্তাভাবনার মাধ্যমে বুদ্ধি প্রয়োগ করে সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে ক্ষমতার উৎকর্ষ সাধিত হয়।

একজন শিক্ষার্থীর বুদ্ধির বিকাশ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এর দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও শিক্ষা পরবর্তী জীবনে সফলতার প্রধান নির্ধারক হচ্ছে বুদ্ধিমত্তা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url