ওয়েব বা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব কি-ইন্ট্রানেট বা এক্সট্রানেট এর পার্থক্য
ইন্টারনেট হলো কিছু পরস্পর সংযুক্ত কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক বা সংযোগ। একক কোনো প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেটের স্বত্তাধিকারী নয়। এটি হচ্ছে একটি সমন্বিত এবং সমবেত প্রচেষ্টার ফল যা একটি স্ট্যান্ডার্ড বা নিয়মের আওতায় পরিচালিত হয়। বিভিন্ন কম্পিউটারকে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করার উদ্দেশ্য হলো তথ্য আদান-প্রদান করা। বিভিন্ন পন্থায় তথ্য এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে স্থানান্তর করা যেতে পারে। যেমন-ই-মেইল, ফাইল ট্রান্সফার প্রসেস্ (FTP) এবং আরো অনেক বিশেষায়িত পদ্ধতি। নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডাটা বা ডকুমেন্ট ট্রান্সফার করার এই সমস্ত সুসংহত পদ্ধতিকে বলা হয় প্রটোকল (Protocol)।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (যাকে সংক্ষেপে 'ওয়েব' বলা হয়) হলো অনেকগুলো মাধ্যমের একটি মাধ্যম যার সাথে ইন্টারনেট ব্যবহার করে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। এর বিশেষত্ব হচ্ছে- এটি হাইপারটেক্সট্ লিংক ব্যবহার করে একটি ডকুমেন্টকে অন্য একটি ডকুমেন্টের সাথে সংযুক্ত (Linked) করার সুযোগ দেয় এবং এভাবে পরস্পর সংযুক্ত তথ্যের একটি বিশাল জাল তৈরি করে।
ওয়েব হাইপার টেক্সস ট্রান্সফার প্রটোকল (Hyper Text Transfer Protocol) সংক্ষেপে-HTTP নামক একটি প্রটোকল ব্যবহার করে। আপনি যদি কখনো ওয়েব ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনি অবশ্যই HTTP শব্দটির সাথে পরিচিত হয়েছেন। কারণ সকল ওয়েব এড্রেসের প্রথমে HTTP শব্দটি অন্তর্ভুক্ত থাকে।
ওয়েবের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ওয়েব ১৯৮৯ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের একটি পদার্থবিজ্ঞান ল্যাবরেটরী CERN এ জন্ম হয়। সেখানে "টিম বার্নার" নামক একজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ সর্বপ্রথম, নেটওয়ার্কের মাধ্যমে হাইপার টেক্সট পদ্ধতিতে বিভিন্ন ডকুমেন্টকে পরস্পর সংযুক্ত করার প্রস্তাব দেয়। সে এবং তার বন্ধু "রবার্ট সেইলি" মিলে পরীক্ষামূলকভাবে এ রকম একটি হাইপার টেক্সট সংযোগ তৈরি করে এবং তা যাচাই করার জন্য উন্মুক্ত করে। প্রথমে কয়েক বছর ওয়েব পেজ ছিলো কেবল টেক্সেটের। বিশ্বে ওয়েবের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় ১৯৯২ সালে যখন প্রথম গ্রাফিকাল ব্রাউজার-NCSA Mosaic উদ্ভাবিত হয়। এটি ওয়েবকে ব্যাপক বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। বর্তমানে ওয়েবের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন এবং পরিবর্তন তদারকীর দায়িত্বে আছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব কনসর্টিয়াম (W3C) নামক একটি আন্তজার্তিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান।
আপনি যদি ওয়েবের ইতিহাস আরো বিশদভাবে জানতে চান তাহলে নিচের সাইটগুলো ব্রাউজ করুন।
www.w3.org/history.html
WDVL.com/Internet/History
ইন্টারনেট কীভাবে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে সচরাচর সামনে
যে সমস্ত কম্পিউটার চাহিদা মোতাবেক তথ্য 'সার্ভ' (Serve) করে বা সরবরাহ করে সে সমস্ত কম্পিউটারকে বলা হয় সার্ভার। আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে, সার্ভার হচ্ছে একটি সফ্টওয়্যার (ঐ কম্পিউটার নয়) যা একটি কম্পিউটারকে অন্য একটি কম্পিউটারের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করার সুযোগ করে দেয়। যাহোক, সাধারণভাবে ঐ কম্পিউটারটিকে বোঝানোর কাজ হলো-কোনো তথ্য প্রদানের অনুরোধ পাবার অপেক্ষায় থাকা, সেই তথ্যটি উদ্ধার করা (Retrieve) অর্থাৎ খুঁজে বের করা এবং যত দ্রুত সম্ভব তা প্রেরণ করা।১০
ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে কম্পিউটার নয় বরং সফ্টওয়্যারই প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। কোনো কম্পিউটারকে যদি ইন্টারনেট সংযুক্ত করতে হয় তাহলে সেই কম্পিউটারটিতে অবশ্যই বিশেষ ওয়েব সার্ভার সফ্টওয়্যার ইন্সটল করতে হবে যা কিনা হাইপার টেক্সট ট্রান্সফার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। ওয়েব সার্ভারকে HTTP সার্ভারও বলা হয়।
বর্তমানে বেশ কয়েকটি সার্ভার সফ্টওয়্যার প্রচলিত আছে। তবে, সবচেয়ে জনপ্রিয় দু'টি হচ্ছে এ্যাপাচী (Apache) এবং মাইক্রোসফ্ট ইন্টারনেট ইনফরমেশন সার্ভিস (IIS) এ্যাপাচী একটি ওপেন সোর্স (Open Source) সফ্টওয়্যার।
নোটঃ ওপেন সোর্স সফটওয়্যার বলতে বুঝায় এমন একটি সফ্টওয়্যার যার সোর্স কোড সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে এবং কেউ ইচ্ছা করলে সেটি নিজের সুবিধামত পরিবর্তন করে নিতে পারে। সাধারণত ওপেন সোর্স সফ্টওয়্যার বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
এ্যাপাচী সাধারণত ইউনিক্স (UNIX) ভিত্তিক কম্পিউটারের জন্য বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয় এবং Mac OS X এর সাথে ইন্সটল করা থাকে। এর একটি Windows ভার্সনও আছে। মাইক্রোসফ্ট IIS মাইক্রোসফ্ট সার্ভার পরিবারের একটি অন্যতম সদস্য।
ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত সকল কম্পিউটারকে একটি অনন্য সাংখ্যিক (Numeric) IP এড্রেস বা ইন্টারনেট প্রটোকল এড্রেস প্রদান করা হয়। যেমন ধরুণ, একটি কম্পিউটার IP এড্রেস হলো 208.201.239.37 এই সমস্ত নাম্বার কাজে কর্মে এবং মনে রাখতে বেশ অসুবিধা সৃষ্টি করে। এই জন্য ডোমেইন নেইম সিস্টেম (Domain Name System সংক্ষেপে-DNS) উদ্ভাবন করা হয়েছে। এখন ঐ কম্পিউটারকে সেটির ডোমেইন নেইম-এ (ডোমেনের নামে) চিহ্নিত করা সম্ভব। যেমন ধরুণ, Oreilly.com নামে কম্পিউটারকে চিহ্নিত করা যাবে। সংখ্যাভিত্তিক IP এড্রেস কম্পিউটারের জন্য উপযোগী, আর ডোমেইন নেইম মানুষের ব্যবহারের জন্য উপযোগী। কোনো কম্পিউটারের এই অক্ষরভিত্তিক ডোমেইন নামের সাথে তার সংখ্যাভিত্তিক IP এড্রেস মিলানোর কাজটি করে থাকে একটি পৃথক DNS সার্ভার।
এটাও সম্ভব যে, আপনার ওয়েব সার্ভারকে এমনভাবে কনফিগার (Configure) করবেন যে, একটি একক আইপি এড্রেসের জন্য আপনি একাধিক ডোমেইন নাম আরোপিত হয় এবং এভাবে একটি সার্ভারে কয়েকটি সাইট শেয়ার করা
ব্রাউজার সংক্রান্ত কিছু কথা
যে সফ্টওয়্যার তথ্য পাঠাবার অনুরোধ করে থাকে তাকে বলা হয় ক্লায়েন্ট (Client)। ওয়েবের ক্ষেত্রে, ব্রাউজার হচ্ছে একটি ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার যা সার্ভারকে কোনো তথ্য প্রেরণের অনুরোধ করে। তখন সার্ভার ব্রাউজারকে চাহিদাকৃত ডকুমেন্ট প্রেরণ করে।
এই রিকোয়েস্ট এবং রেসপব্দি অর্থাৎ তথ্য প্রদানের অনুরোধ এবং তার প্রত্যুত্তর পাঠানো সংক্রান্ত কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে HTTP নামক প্রটোকল। আমরা যদিও কেবল ডকুমেন্ট আদান-প্রদানের কথা বলেছি, HTTP ইমেজ বা ছবি, মুভি, অডিও ফাইল এবং অন্যান্য সকল ওয়েব রিসোর্স (Web Resource) আদান-প্রদান করতে পারে।
আমরা যখন কোনো ব্রাউজারের কথা চিন্তা করি তখন আমাদের মনের পর্দায় ভেসে আসে কম্পিউটার মনিটরে একটি উইন্ডোর চিত্র যেখানে এক বা একাধিক ওয়েব পেজ প্রদর্শিত হচ্ছে। এ ধরণের ব্রাউজারকে গ্রাফিক্যাল ব্রাউজার বা ডেস্কটপ ব্রাউজার বলা হয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রাফিক্যাল ব্রাউজার হলো ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার (Internet Explorer) তবে আরো কিছু জনপ্রিয় ব্রাউজার আছে। যেমন-Firefox, Safari (ম্যাকিনটোশ OS X এর জন্য শুধুমাত্র), Opera এবং Netscape.
যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রাফিক্যাল ব্রাউজারের মাধ্যমে ওয়েব ব্যবহার করা বা দেখা হয়, তথাপি আরো অনেক ধরণের ওয়েব ব্রাউজার বিদ্যমান। যাদের দৃষ্টিশক্তি নেই তাঁরা ওয়েব পেজ স্ক্রীণ রিডারের মাধ্যমে পড়তে পারেন। কিছু কিছু ব্রাউজার এত ছোট যে সেগুলো মোবাইল ফোনে বা PDA-তে কাজ করতে সক্ষম। যে ওয়েব সাইটই তৈরি করা হোক না কেন তা উপরোক্ত সকল ক্ষেত্রে পড়ার মতো উপযোগী হতে হবে। তবে লক্ষ্যণীয় যে, আপনার ওয়েব পেজ একেক ব্রাউজারে একেক রকম দেখা যেতে পারে বা সেগুলো ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কাজ করতে পারে। এর কারণ হচ্ছে ওয়েব টেকনোলোজীর ভিন্নতা এবং ব্যবহারকারীর বিভিন্নভাবে ব্রাউজিং সেট করার অপশন বা সুযোগ।
নোট: ইন্ট্রানেট বা এক্সট্রানেট
আপনি যখন কোনো ওয়েব সাইটের কথা চিন্তা করেন, আপনি সাধারণত ধরে নেন যে তা সকলের প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত। তবে অনেক কোম্পানি এমন ধরণের ওয়েব সাইট ব্যবহার করে যার তথ্য আদান-প্রদান কেবলমাত্র ঐ কোম্পানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই ধরণের বিশেষ ওয়েব-ভিত্তিক নেটওয়ার্ককে বলা হয় ইন্ট্রানেট (Intranet)। এরা সাধারণ ওয়েব সাইটের মতই তৈরি হয় এবং কাজ করে। পার্থক্য হলো এতে একটি বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকে যাকে বলা হয় Firewall। এই ফায়ারওয়াল ঐ ওয়েব সাইটে অন্যদের প্রবেশ করা হতে বিরত রাখে। ইন্ট্রানেটের আরো অনেক ব্যবহার আছে, যেমন-মানবসম্পদ সংক্রান্ত তথ্য, আদান-প্রদান বা কাঁচামাল সংক্রান্ত তথ্যে প্রবেশ ইত্যাদি।
এক্সট্রানেটও অনেকটা ইন্ট্রানেটের মতো, পার্থক্য হলো এতে কেবলমাত্র বাছাইকৃত ব্যবহারকারী প্রবেশ করতে পারে উদাহরণস্বরূপ, কোনো ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি হয়তো তার কাস্টমারদেরকে একটি পাসওয়ার্ড প্রদান করতে পারে যার মাধ্যমে কাস্টমাররা ঐ কোম্পানির ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে কেবল তার অর্ডারে কোন পর্যায়ে আছে সে বিষয়ে জানতে পারে। অবশ্যই ঐ পাসওয়ার্ডে নির্ধারণ করা থাকবে বাইরের কেউ কেবল কোন ধরণের তথ্য পেতে পারে। নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করার সুযোগ, প্রকৃতপক্ষে অনেক কোম্পানি ব্যবসা করার পদ্ধতিই পরিবর্তন করে দিচ্ছে।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url