ওয়ার্ডপ্রেস কী || ওয়ার্ডপ্রেসের কাজ || ওয়ার্ডপ্রেসের সুবিধা ও অসুবিধা

বর্তমান ডিজিটাল যুগে, ওয়েবসাইট তৈরি করা আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গেছে। আপনি একজন ব্লগার, ব্যবসার মালিক হোন না কেন, সম্ভবত আপনি ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে শুনেছেন। কিন্তু ওয়ার্ডপ্রেস আসলে কী? এটি কীভাবে কাজ করে? এবং এটি কি সত্যিই ওয়েবসাইট তৈরির জন্য পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে? এই আর্টিকেলে, আমরা ওয়ার্ডপ্রেসের মূল কার্যকারিতা, সুবিধা এবং সীমাবদ্ধতাগুলো বিস্তারিত জানার করার চেষ্টা করব। এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে ওয়ার্ডপ্রেস আপনার প্রয়োজনের জন্য সঠিক প্ল্যাটফর্ম কিনা।

সূচি পত্র:- ওয়ার্ডপ্রেস কী || ওয়ার্ডপ্রেসের কাজ || ওয়ার্ডপ্রেসের সুবিধা ও অসুবিধা

  • ওয়ার্ডপ্রেস কী?
  • ওয়ার্ডপ্রেসের প্রকারভেদ/ভার্শন
  • ওয়ার্ডপ্রেসের কাজ বা মূল ফাংশন
  • ওয়ার্ডপ্রেসের সুবিধা ও অসুবিধা
  • ওয়ার্ডপ্রেস কাদের ব্যবহার করা উচিত?
  • পরিশেষ

ওয়ার্ডপ্রেস কী?

ওয়ার্ডপ্রেস হলো একটি ফ্রি, ওপেন-সোর্স কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (𝗖𝗠𝗦)। ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে ওয়েবসাইট এবং ব্লগ তৈরি এবং ম্যানেজমেন্ট করা যায়।উন্নত প্রযুক্তিগত দক্ষতা না থাকলেও ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে একজন ব্যবহারকারীর ওয়েবসাইট এবং ব্লগ তৈরি এবং ম্যানেজমেন্ট করতে পারেন। ম্যাট মুলেনওয়েগ এবং মাইক লিটল (𝗠𝗮𝘁𝘁 𝗠𝘂𝗹𝗹𝗲𝗻𝘄𝗲𝗴 𝗮𝗻𝗱 𝗠𝗶𝗸𝗲 𝗟𝗶𝘁𝘁𝗹𝗲), একটি সহজ ব্লগিং টুল হিসাবে 𝟮𝟬𝟬𝟯 সালে সর্বপ্রথম ওয়ার্ডপ্রেস চালু করেন। ওয়ার্ডপ্রেস প্লাটফর্মটি মুলত '𝗣𝗛𝗣' 𝗟𝗮𝗻𝗴𝘂𝗮𝗴𝗲 ব্যবহার করে বানানো (𝗣𝗛𝗣 𝗕𝗮𝘀𝗲𝗱) জনপ্রিয় ফ্রী ওয়েবসাইট বিল্ডার। বছরের পর বছর ধরে, বিবর্তনের ফলে ওয়ার্ডপ্রেস বর্তমানে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। 𝟮𝟬𝟮𝟱 সালের হিসাবে বর্তমানে ইন্টারনেটে যত ওয়েবসাইট রয়েছে তার মধ্যে 𝟰𝟯.5% এরও বেশি ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে বানানো হয়েছে।
সে হিসেবে ইন্টারনেটে প্রায় 1.21 বিলিয়ন ওয়েবসাইটের মধ্যে 529 মিলিয়ন ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরি।ওয়ার্ডপ্রেসের CMS মার্কেট শেয়ার প্রায় (পরিচিত CMS গুলোর মধ্যে) 61–62%। ওয়ার্ডপ্রেসে রয়েছে ইউজার-ফ্রেন্ডলী ইন্টারফেস এবং ওয়ার্ডপ্রেসের কার্যকারিতা, কাস্টমাইজেশন সুবিধা এবং সিকিউরিটি বৃদ্ধি করার জন্য থিম এবং প্লাগইনের একটি বিশাল স্টোর রয়েছে (ফ্রী ও পেইড)। ওয়ার্ডপ্রেসের প্রধান কাজ হলো কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট করা, যার ফলে ব্যবহারকারীরা নুন্যতম কোডিং জ্ঞান ছাড়াই ওয়েব পেজ তৈরি, এডিট এবং পাবলিশ করতে পারেন।

ওয়ার্ডপ্রেসের প্রকারভেদ/ভার্শন

আমরা অনেকেই ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে জানি এবং ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে ওয়েবসাইটও বানিয়ে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা ওয়ার্ডপ্রেস কয় ধরনের বা ওয়ার্ডপ্রেস কয় প্রকার। ওয়ার্ডপ্রেসের দুটি সংস্করণ/ভার্শন রয়েছে। যেমন-
𝗪𝗼𝗿𝗱𝗣𝗿𝗲𝘀𝘀.𝗼𝗿𝗴: এটি স্ব-হোস্টেড সংস্করণ, যেখানে আপনার হোস্টিং এবং ওয়েবসাইটের উপর আপনার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। 𝗪𝗼𝗿𝗱𝗣𝗿𝗲𝘀𝘀.𝗼𝗿𝗴 ব্যবহারের জন্য আপনাকে আপনার নিজস্ব হোস্টিং এবং ডোমেন কিনতে হবে।
𝗪𝗼𝗿𝗱𝗣𝗿𝗲𝘀𝘀.𝗰𝗼𝗺: এটি একটি হোস্টেড প্ল্যাটফর্ম যেখানে আপনার হোস্টিংয়ের যাবতীয় কাজ 𝗪𝗼𝗿𝗱𝗣𝗿𝗲𝘀𝘀.𝗰𝗼𝗺 কর্তৃক পরিচালিত হয়। এই প্ল্যাটফর্মে হোস্টিং কেনার প্রয়োজন হয় না। যেহেতু এটি একটি ফ্রি প্লাটফর্ম সেহেতু এই প্ল্যাটফর্মে ওয়েবসাইটে বানিয়ে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আপনার ওয়েবসাইটের উপর কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকলেও হোস্টিংয়ের উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তবে, আপনি যদি পেইড প্লানে আপগ্রেড করেন তাহলে অন্যান্য সকল সুবিধা পেতে পারেন।

ওয়ার্ডপ্রেসের কাজ বা মূল ফাংশন

আপনার ওয়েবসাইট সঠিকভাবে পরিচালনা এবং সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্য ওয়ার্ডপ্রেসের প্রধান কাজ/কার্যাবলী জানা ও বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ার্ডপ্রেস একটি বহুমুখী এবং শক্তিশালী কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (𝗖𝗠𝗦)। ওয়েবসাইট পরিচালনা ও কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন ওয়ার্ডপ্রেসে অনেক ফাংশন রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক ওয়ার্ডপ্রেসের মূল ফাংশনগুলো যা ওয়ার্ডপ্রেসকে এত জনপ্রিয় ওয়েবসাইট তৈরির হাতিয়ার করে তুলেছে।

১. কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট

ওয়ার্ডপ্রেসের প্রধান কাজ হলো দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে কন্টেন্ট ম্যানেজ/পরিচালনা করা। ওয়ার্ডপ্রেসে রয়েছে ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস/ড্যাশবোর্ড যার মাধ্যমে আপনি নতুন ব্লগ পোস্ট তৈরি, বিদ্যমান কন্টেন্ট এডিট, কন্টেন্ট ড্রাফট, কন্টেন্ট পাবলিশ এবং বিভিন্ন ধরণের মিডিয়া যেমন- ছবি, ভিডিও এবং ডকুমেন্ট খুব সহজেই ম্যানেজ/পরিচালনা করতে পারবেন। ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্টকে বিভিন্ন ক্যাটাগরি ও ট্যাগে বিভক্ত করা যায় ফলে আপনার ওয়েব সাইটের দর্শকরা/ভিজিটর তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পাওয়ার জন্য খুব সহজে নেভিগেট করতে পারে। আপনার ওয়েবসাইটের পেজের লে-আউট ও স্ট্রাকচার ঠিক করার ক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রসেসর কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফিচার গুলো বেশ ফ্লেক্সিবল। পূর্বের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ছাড়াই আপনি আপনার প্রয়োজন ও চাহিদা অনুসারে কাস্টমাইজ করতে পারবেন। নির্বিঘ্নে ওয়েব কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট করার জন্য একটি কার্যকর সমাধান হলো ওয়ার্ডপ্রেস।

২. থিম এবং ডিজাইন কাস্টমাইজেশন

ওয়ার্ডপ্রেস আপনার জন্য হাজার হাজার থিম (ফ্রী ও পেইড) প্রদান করে, যা তাৎক্ষণিকভাবে আপনার ওয়েবসাইটের রুপ, চেহারা এবং ফিলিংস পরিবর্তন করতে দেয়। আপনার টপিক বা নিশের সাথে মানানসই এমন থিম বেছে নিতে পারেন। যেমন- পোর্টফোলিও, ব্লগ, ই-কমার্স স্টোর, অথবা নিউজ সাইট ইত্যাদি। আপনার বেছে নেওয়া থিমকে, ওয়ার্ডপ্রেসের বিল্ট-ইন সেটিংস অথবা এলিমেন্টর (𝗘𝗹𝗲𝗺𝗲𝗻𝘁𝗼𝗿) বা 𝗪𝗣𝗕𝗮𝗸𝗲𝗿𝘆 এর মতো পেজ বিল্ডার ব্যবহার করে পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী কাস্টমাইজ করতে পারেন।

৩. প্লাগইন এবং এক্সটেনসিবিলিটি

ওয়ার্ডপ্রেসের সবচেয়ে শক্তিশালী দিকগুলোর মধ্যে একটি হল এর প্লাগইন সিস্টেম। প্লাগইনগুলো আপনার ওয়েবসাইটের জন্য অ্যাপের মতো কাজ করে। ওয়েবসাইটে প্রয়োজন অনুযায়ী ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্লাগইন ব্যবহার করা হয়। মনে করুন, আপনি আপনার ওয়েবসাইটে কন্ট্যাক্ট/যোগাযোগ ফর্ম যোগ করতে চান। সে জন্য কন্ট্যাক্ট ফর্ম প্লাগইন রয়েছে। আবার, 𝗦𝗘𝗢 কাজের জন্য প্লাগইন রয়েছে। প্রতিটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য আলাদা আলাদা প্লাগইন পাওয়া যায়। অফিসিয়াল ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগইন ডিরেক্টরিতে ৬০,০০০ এরও বেশি প্লাগইন পাওয়া যায়, যা আপনাকে কোডিং ছাড়াই আপনার ওয়েবসাইটের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

৪. 𝗦𝗘𝗢 ফ্রেন্ডলি

সার্চ ইঞ্জিনের কথা মাথায় রেখে ওয়ার্ডপ্রেস ডিজাইন করা হয়েছে। গুগল এবং অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে আপনার কন্টেন্টের ভিজিবিলিটি উন্নত করতে 𝗬𝗼𝗮𝘀𝘁 𝗦𝗘𝗢 বা 𝗥𝗮𝗻𝗸 𝗠𝗮𝘁𝗵 এর মতো সঠিক 𝗦𝗘𝗢 প্লাগইন ব্যবহার করতে পারেন। 𝗦𝗘𝗢 প্লাগইন ব্যবহার করে আপনি সহজেই আপনার কন্টেন্ট, মেটা ট্যাগ, সাইটম্যাপ এবং আরও অনেক কিছু অপ্টিমাইজ করতে পারেন।

৫. মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট

ওয়ার্ডপ্রেসে মিডিয়া (ছবি, অডিও, ভিডিও, পিডিএফ) আপলোড এবং ম্যানেজ করা সহজ। মিডিয়া লাইব্রেরি থেকে সহজে ড্র্যাগ-এন্ড-ড্রপ করে কন্টেন্ট আপলোড, বেসিক এডিটিং এবং 𝗦𝗘𝗢 এর জন্য অল্টারনেটিভ টেক্সট (𝗮𝗹𝘁 𝘁𝗲𝘅𝘁) যোগ করার সুযোগ রয়েছে।

৬. ইউজার ম্যানেজমেন্ট/ব্যবহারকারী ব্যবস্থাপনা

ওয়ার্ডপ্রেস মাল্টিপল ইউজার রোল সাপোর্ট করে। যেমন- 𝗔𝗱𝗺𝗶𝗻𝗶𝘀𝘁𝗿𝗮𝘁𝗼𝗿, 𝗘𝗱𝗶𝘁𝗼𝗿, 𝗔𝘂𝘁𝗵𝗼𝗿, 𝗖𝗼𝗻𝘁𝗿𝗶𝗯𝘂𝘁𝗼𝗿, এবং 𝗦𝘂𝗯𝘀𝗰𝗿𝗶𝗯𝗲𝗿 ইত্যাদি। যাদের ওয়েবসাইটে টিম/অনেক জন কাজ করে বা 𝗦𝘂𝗯𝘀𝗰𝗿𝗶𝗯𝗲𝗿 থাকে তাদের কাছে ওয়ার্ডপ্রেসের ফিচারটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ার্ডপ্রেসের ইউজার ম্যানেজমেন্ট ফাংশনের মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীদের অ্যাক্সেস এবং রোল/ভূমিকার উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন। ওয়ার্ডপ্রেসের এই ফিচারের মাধ্যমে আপনি ইউজার অ্যাকাউন্ট তৈরি এবং ম্যানেজ করতে পারেন। ইউজারদের রোল/ভূমিকার উপর ভিত্তি করে ইউজারকে নির্দিষ্ট অ্যাক্সেস অধিকার প্রদান করতে পারেন। এটি ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে এবং আরও দক্ষ কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট এবং সিকিউরিটি টিমওয়ার্ক সক্ষম করে। রোল ও পার্মিশন সেট করার মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটের কোন ইউজার কি কাজ করতে পারবে তা নির্ধারণ করে দিতে পারেন। যেমন - কে কন্টেন্ট এডিট করতে পারবে, কে কন্টেন্ট ডিলিট করতে পারবে বা কে কন্টেন্ট আপলোড করতে পারবে ইত্যাদি। ইউজার ম্যানেজমেন্ট ফাংশনের ফলে ওয়েবসাইটগুলো আরও কাঠামোগত এবং নিরাপদ পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়।

৭. ই-কমার্সের জন্য উপযুক্ত

ই-কমার্স ওয়েবসাইটের জন্য রয়েছে শক্তিশালী 𝗪𝗼𝗼𝗖𝗼𝗺𝗺𝗲𝗿𝗰𝗲 প্লাগইন। 𝗪𝗼𝗼𝗖𝗼𝗺𝗺𝗲𝗿𝗰𝗲 প্লাগইনের সাহায্যে আপনি সহজেই আপনার ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েব সাইটটিকে একটি সম্পূর্ণ কার্যকরী অনলাইন স্টোরে পরিণত করতে পারেন। 𝗪𝗼𝗼𝗖𝗼𝗺𝗺𝗲𝗿𝗰𝗲 ব্যবহার করে আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটে নির্মূল ভাবে প্রোডাক্ট পেজ, শপিং কার্ট, পেমেন্ট গেটওয়ে এবং অর্ডার ম্যানেজমেন্ট করতে পারেন।

ওয়ার্ডপ্রেসের সুবিধা ও অসুবিধা

প্রতিটি জিনিসের ভালো দিক, মন্দ দিক এবং সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। ওয়ার্ডপ্রেসের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানেও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। নিম্নে ওয়ার্ডপ্রেসের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ওয়ার্ডপ্রেসের সুবিধা

এখন আমরা জানি ওয়ার্ডপ্রেস কী করতে পারে, আসুন এর অনেক সুবিধা জানান চেষ্টা করি।

১. বিনামূল্যে এবং ওপেন সোর্স

ওয়ার্ডপ্রেসের সবচেয়ে বড় সুবিধা ও জনপ্রিয়তার পেছনের অন্যতম বড় কারণ হল এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। ওয়ার্ডপ্রেস একটি ওপেন সোর্স প্লাটফর্ম তাই বিশ্বব্যাপী ডেভেলপাররা এর ফিচার এবং সিকিউরিটি উন্নত করতে অবদান রাখে।

২. নতুনদের জন্য উপযুক্ত

ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে একটি সুন্দর ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য আপনাকে ডেভেলপার বা ডিজাইনার হতে হবে না। স্বজ্ঞাত সেটিংস, ভিজ্যুয়াল এডিটর এবং এক-ক্লিক ইনস্টলেশনের মাধ্যমে, প্রায় যে কেউই একটি সাইট তৈরি করতে পারে।

৩. কাস্টমাইজেবল

থিম থেকে প্লাগইন পর্যন্ত, ওয়ার্ডপ্রেসের সব কিছুই কাস্টমাইজে করার সুযোগ রয়েছে। আপনি আপনার চাহিদা অনুযায়ী একটি সাধারণ ব্লগ বা একটি জটিল এন্টারপ্রাইজ সাইট তৈরি করতে পারেন।

৪. বৃহৎ কমিউনিটি সাপোর্ট

বিশ্বব্যাপী ওয়ার্ডপ্রেসের একটি বিশাল কমিউনিটি রয়েছে।আপনার যেকোনো সমস্যার সমাধান বা নতুন কৌশল শিখতে আপনাকে সাহায্য করার জন্য হাজার হাজার টিউটোরিয়াল, ফোরাম, ইউটিউব ভিডিও এবং ডেভেলপার রয়েছে।

৫. 𝗦𝗘𝗢 ক্ষমতা

বলতে গেলে, সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন ওয়ার্ডপ্রেসের ডিএনএ-তে অন্তর্নির্মিত আছে। এছাড়াও, 𝗦𝗘𝗢 প্লাগইন ব্যবহার করে, আপনি রিয়েল-টাইম 𝗦𝗘𝗢 অ্যানালাইসিস, কীওয়ার্ড সাজেশনস এবং কন্টেন্টকে আকর্ষণীয় ও উন্নত করার টিপস পেতে পারেন।

৬. মোবাইল-ফ্রেন্ডলি

ওয়ার্ডপ্রেসের বেশিরভাগ থিমগুলো রেসপন্সিভ বা মোবাইল-ফ্রেন্ডলি, অর্থাৎ আপনার ওয়েবসাইট ডেস্কটপ এবং মোবাইল উভয় ডিভাইসেই কোন ঝামেলা ছাড়াই ভালো দেখাবে। ডেস্কটপ এবং মোবাইল উভয়ের জন্য পৃথক ডিজাইন করার প্রয়োজন পড়েনা।

৭. নিয়মিত আপডেট এবং সিকিউরিটি

পার্ফরম্যান্স নতুন ফিচার এবং সিকিউরিটি উন্নত করতেওয়ার্ডপ্রেস ঘন ঘন আপডেট ভার্শন প্রকাশ করে। এছাড়াও, আপনি ওয়ার্ডফেন্স বা সুকুরির (𝗪𝗼𝗿𝗱𝗳𝗲𝗻𝗰𝗲 বা 𝗦𝘂𝗰𝘂𝗿𝗶) মতো প্লাগইন ব্যবহার করে আপনার সাইটের সিকিউরিটি উন্নত করতে পারেন।

৮. মাল্টিলিংগুয়াল (বহু ভাষা) সাপোর্ট

ওয়ার্ডপ্রেস একাধিক ভাষা সাপোর্ট করে। আপনি 𝗪𝗣𝗠𝗟 বা 𝗣𝗼𝗹𝘆𝗹𝗮𝗻𝗴 এর মতো প্লাগইন ব্যবহার করে একটি বহুভাষিক ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে পারেন অথবা কন্টেন্ট অনুবাদ করতে পারেন।

ওয়ার্ডপ্রেসের অসুবিধা

ইতোমধ্যেই আপনারা জেনেছেন ওয়ার্ডপ্রেস একটি শক্তিশালী ওয়েবসাইট বিল্ডার। শক্তিশালী হওয়ার পরেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা ও কিছু সাধারণ অসুবিধা রয়েছে। ওয়ার্ডপ্রেসের অসুবিধা গুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো।

১. নিরাপত্তা দুর্বলতা

ওয়ার্ডপ্রেসের জনপ্রিয়তা এবং ওপেন-সোর্স হওয়ার কারণে, ওয়ার্ডপ্রেস প্রায়শই হ্যাকারদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিলে, দুর্বল কোডেড প্লাগইন, পুরানো থিম এবং দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে বা নিয়মিত ওয়ার্ডপ্রেস, থিম, প্লাগইন আপডেট না করলে সহজেই আপনার ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটটি হ্যাকড বা ক্রাশ করতে পারে।

২. ঘন ঘন মেইনটেনেন্স

ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটগুলোর থিম, প্লাগইন এবং ওয়ার্ডপ্রেস কোরের নিয়মিত আপডেট প্রয়োজন হয়। এই আপডেটগুলো নিয়মিত না করলে ওয়েবসাইটের পারফরম্যান্স সমস্যা বা নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।

৩. পারফরম্যান্স সমস্যা

যদি সঠিকভাবে অপ্টিমাইজ, নিয়মিত আপডেট না করা হয়, তাহলে ওয়ার্ডপ্রেস সাইটগুলো স্লো /ধীর হয়ে যেতে পারে। ওয়েবসাইট স্লো বা ধীর হওয়ার কারণ হল অনেক প্লাগইন, বড় ছবি বা সস্তা হোস্টিং ব্যবহার করা। ওয়েবসাইটের গতি ঠিক রাখার জন্য আপনাকে ক্যাশিং প্লাগইন ইনস্টল করতে হবে এবং অপ্টিমাইজড থিম ব্যবহার করতে হবে।

৪. হাই কাস্টমাইজেশনের জন্য শিখতে হবে

যদিও এটি নতুনদের জন্য উপযুক্ত, হাই লেভেল কাস্টমাইজেশন করার জন্য আপনাকে প্রায়শই 𝗛𝗧𝗠𝗟, 𝗖𝗦𝗦, 𝗣𝗛𝗣, অথবা 𝗝𝗮𝘃𝗮𝗦𝗰𝗿𝗶𝗽𝘁 সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। এরচেয়ে কমপ্লেক্স প্রজেক্টের জন্য একজন দক্ষ ডেভেলপার প্রয়োজন হতে পারে।

৫. প্লাগইন কনফ্লিক্ট

কখনও কখনও প্লাগইনগুলো একসাথে ভালোভাবে কাজ নাও করতে পারে, যার ফলে ত্রুটি বা ওয়েবসাইট ক্র্যাশ হতে পারে। নতুন বা যাদের কোডিং জ্ঞান নেই তাদের পক্ষে সমস্যাগুলো সনাক্ত এবং সমাধান করা হতাশাজনক হতে পারে।

৬. হিডেন কস্ট/খরচ

যদিও ওয়ার্ডপ্রেস নিজেই একটি ফ্রি প্লাটফর্ম, আপনি প্রিমিয়াম থিম, প্লাগইন, হোস্টিং, ডোমেন নাম এবং সিকিউরিটি টুলসগুলো ব্যবহার করতে চান তাহলে সেগুলোর জন্য আপনাকে অর্থ ব্যয় করতে হতে পারে। এই প্রিমিয়াম জিনিসগুলোর খরচও দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

ওয়ার্ডপ্রেস কাদের ব্যবহার করা উচিত?

ওয়ার্ডপ্রেস যেকেউ ব্যবহার করতে পারে। পৃথিবীতে অনেক বড় বড় ও জটিল ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলো ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে বানানো। ওয়ার্ডপ্রেস কাদের জন্য ব্যবহার করা উচিত তার কিছু নমুনা দেওয়া হলো।
  • ব্লগার এবং লেখক যারা নিয়মিত কন্টেন্ট প্রকাশ করতে চান।
  • ছোট ব্যবসা যারা পেশাদার অনলাইন কাস্টমার/ক্লায়েন্টে/ভিজিটর খুঁজছেন।
  • ই-কমার্স স্টোর মালিক যারা তাদের দোকানের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চান।
  • ফ্রিল্যান্সার এবং ক্রিয়েটিভস যাদের পোর্টফোলিও প্রয়োজন।
  • অলাভজনক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাদের সাশ্রয়ী মূল্যের সমাধান খুঁজছেন।
  • বড় এন্টারপ্রাইজ যাদের স্কেলেবল প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজন (কাস্টম ডেভেলপমেন্ট সহ)।

পরিশেষ

ওয়ার্ডপ্রেস একটি শক্তিশালী, ফ্লেক্সিবল এবং বহুল ব্যবহৃত প্ল্যাটফর্ম যা মানুষের পক্ষে ওয়েবসাইট তৈরিকে সহজ করেছে। আপনি একজন সম্পূর্ণ শিক্ষানবিস বা অভিজ্ঞ ডেভেলপার হন না কেন, ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রেস আপনার জন্য উপকারী। ওয়ার্ডপ্রেসের মেইনটেনেন্স ও সিকিউরিটির ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জের আছে, তবে এর সুবিধাগুলো, অসুবিধাগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। কারণ, ওয়ার্ডপ্রেস ইকোসিস্টেমে আপনি যেকোন সমস্যা সমাধানের জন্য সাপোর্ট ও সাহায্য পাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url