সেরা হোস্টিং চেনার উপায় কি || কিভাবে সেরা ওয়েব হোস্টিং নির্বাচন করবেন
অনলাইনে আপনার ব্যবসা শুরু করতে হলে অবশ্যই একটি ওয়েবসাইট প্রয়োজন হবে।
ওয়েবসাইট হোস্ট করার জন্য সঠিক ওয়েব হোস্টিং মডেল নির্বাচন করা একটি
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ আপনার ওয়েবসাইটের কর্মক্ষমতা এবং স্কেলেবিলিটির বৃদ্ধি
করার জন্য ভালোভাবে পরিচালনার জন্য ভালো মানের ওয়েব হোস্টিং দরকার। ওয়েব
হোস্টিং এর প্রতিটি মডেলেরই নিজস্ব সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। তাই ওয়েব হোস্টিং
কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার ব্যবসার চাহিদা, বাজেট এবং আপনার প্রযুক্তিগত
ক্ষমতা মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ।
আর্টিকেলে যা জানবেনঃ- সেরা হোস্টিং চেনার উপায়
প্রাথমিক পরিচিতি
প্রাথমিক পর্যায়ে আপনি যেকোন হোস্টিং নিতে পারেন, কোন সমস্যা নাই। কিন্তু আপনার
ওয়েবসাইটটি যখন বড় হবে, তখন আপনার অতিরিক্ত স্টোরেজ স্পেস, ব্যান্ডউইথ এবং
অন্যান্য ধরণের রিসোর্সের প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে, আপনি ক্লাউড হোস্টিং বা
ভিপিএসের মতো আরও অ্যাডভান্সড হোস্টিং প্ল্যান করেন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সেজন্য
আপনাকে সেরা ওয়েব হোস্টিং প্রোভাইডার খুঁজে বের করতে হবে যারা আপনার প্রয়োজনে
যেকোনো মুহূর্তে আপগ্রেড করার সুবিধা প্রদান করবে। এই আর্টিকেলে ওয়েব হোস্টিং
কেনার আগে আপনাকে যে বিষয়গুলো জানতে হবে এবং বিবেচনা করতে হবে সেই বিষয়গুলো
বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
ওয়েব হোস্টিং কেনার আগে বিবেচ্য বিষয়
আপনার ওয়েব সাইটকে বাধাহীন ভাবে পরিচালোনা করার জন্য আপনাকে অবশ্যই একটি ভালো
মানের ওয়েব হোস্টিং বিবেচনা করতে হবে। সেরা হোস্টিং চেনার ক্ষেত্রে কিছু
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ করতে হবে। আপনি কিভাবে সেরা ওয়েব হোস্টিং নির্বাচন করবেন
গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো নিচে আলোচনা করা হলো।
কন্ট্রোল প্যানেল
ওয়েব হোস্টিং সেবা প্রদানকারী প্ল্যাটফর্ম গুলো ইউজারদের হোস্টিং কন্ট্রোল
প্যানেল প্রদান করে।হোস্টিং কন্ট্রোল প্যানেলের সাহায্যে, আপনি ওয়েব সার্ভারে লগ
ইন না করেই হোস্টিং অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারবেন। এমন ওয়েব হোস্টিং
প্রোভাইডার বাছাই করা উচিত যারা সহজ ও সরল ইউজার ইন্টারফেস প্রদান করে। যেন
দক্ষতার যেকোনো স্তরের ইউজাররা সহজেই হোস্টিং কন্ট্রোল প্যানেল পরিচালনা করতে
পারে।
ওয়েব হোস্টের আপটাইম
ওয়েব হোস্টিং আপটাইম (Uptime) বলতে বোঝায় — একটি ওয়েবসাইট বা সার্ভার কতক্ষণ
বাঁধাহীনভাবে অনলাইনে সচল থাকে এবং ইউজারদের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য থাকে। সহজভাবে
বললে, আপনার ওয়েবসাইট কত শতাংশ সময় ডাউন না হয়ে অনলাইনে সচল থাকে তার একটি
পরিমাপ।
🔹 উদাহরণ:
যদি কোনো হোস্টিং কোম্পানি বলে যে তাদের আপটাইম 99.9%, তাহলে এর মানে হলো— ১ বছরে
আপনার ওয়েবসাইট প্রায় ৮ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মতো সময় অফলাইন থাকতে পারে। বাকি সময়
(প্রায় পুরো বছর) ওয়েব সাইটটি সচল থাকবে। ওয়েবসাইটের রক্ষণাবেক্ষণ এবং দুর্বল ওয়েব সার্ভারের কারণে আপটাইম কমে গেলে
আপনার ওয়েবসাইটের উপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি ঘন ঘন এবং অপ্রত্যাশিত
ডাউনটাইমের কারণে আপনার ব্যবসা এবং ইউজাররা আপনার ওয়েবসাইটের ওপর আস্থা হারাতে
পারে। তাই ওয়েব হোস্টিং কেনার সময় হোস্টিং প্রোভাইডারের আপ টাইম এবং ডাউন
টাইম কেমন তা বিবেচনা করা উচিত।
🔹 আপটাইমের মানে বোঝার সহজ চার্টঃ
আপটাইম শতাংশ | বছরে সম্ভাব্য ডাউনটাইম |
---|---|
99% | প্রায় 3.65 দিন |
99.9% | প্রায় 8 ঘণ্টা 45 মিনিট |
99.99% | প্রায় 52 মিনিট |
99.999% | প্রায় 5 মিনিট |
🔹 কেন আপটাইম গুরুত্বপূর্ণ?
- বিশ্বাসযোগ্যতা (Reliability): উচ্চ আপটাইম মানে আপনার সাইট সর্বদা অনলাইনে সচল থাকে, ফলে ভিজিটর হারানোর সম্ভাবনা কমে।
- SEO প্রভাব: যদি আপনার ওয়েবসাইটটি বারবার ডাউন হয়, গুগল সেটিকে অনির্ভরযোগ্য হিসেবে গণ্য করতে পারে।
- ব্যবসার ক্ষতি রোধ: ই-কমার্স বা সার্ভিস সাইটের ক্ষেত্রে প্রতিটি মিনিটের ডাউনটাইম মানে সম্ভাব্য বিক্রয় ক্ষতি।
- ব্র্যান্ড ইমেজ: বারবার ডাউন হলে ব্যবহারকারীরা সাইটের প্রতি আস্থা হারায়।
সাধারণত 99.9% বা তার বেশি আপটাইমকে ভালো হোস্টিং মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা
হয়। বিশেষ করে ব্যবসা বা ই-কমার্স সাইটের জন্য 99.99% আপটাইম সেরা।
অ্যাডমিন্সট্রেটিভ ইন্টারফেস
একটি ওয়েব সার্ভার কনফিগার এবং পরিচালনা করার ক্ষেত্রে অনেক প্রযুক্তিগত বিষয়
বিবেচনা করতে হয়। সেবা প্রদানকারী কোম্পানি আপনার প্রয়োজনমত নিয়ন্ত্রন সুবিধা ও
ইন্টারফেস দিচ্ছে কিনা খেয়াল করুন এবং আপনার সিস্টেমের ব্যাকআপ সংরক্ষন করছে
কিনা সেটাও বিবেচনা করুন।
স্টোরেজ স্পেস এবং ব্যান্ডউইথ
হোস্টিং প্রোভাইডার গুলো বিভিন্ন ধরনের হোস্টিং প্যাকেজ তৈরি করে প্রতিটি
প্যাকেজের জন্য খরচ পরিমাপ করে এবং সে অনুযায়ী প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করে
থাকে। হোস্টিং প্রোভাইডার প্রায়শই টায়ার্ড হোস্টিং প্যাকেজগুলিতে খরচ পরিমাপ
করে এবং চার্জ করে। অনেক হোস্টিং প্রোভাইডার "আনলিমিটেড স্টোরেজ এবং ব্যান্ডউইথ"
এর প্রতিশ্রুতি দেয়, তবে আপনি যদি এর উপর নির্ভর করার পরিকল্পনা করেন তবে শর্ত ও
পলিসি গুলো ভালোভাবে পড়ুন। আরও প্রফেশনাল ডেডিকেটেড এবং ক্লাউড ওয়েব হোস্টিং
প্যাকেজগুলো সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে, অথবা আপনার ব্যবহার বৃদ্ধি এবং হ্রাসের
সাথে সাথে প্রতি সপ্তাহে বা মাসে স্টোরেজের জন্য একটি উদ্ধৃত হার চার্জ করে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ভালো ওয়েব হোস্টিং এর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সিকিউরিটি ব্যবস্থা। হোস্টিং
প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গুলো আপনার সাইটকে ম্যালওয়্যার বা DDoS আক্রমণ থেকে রক্ষা
করার জন্য উন্নত সুরক্ষা ব্যবস্থা দিচ্ছে কিনা সে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে।
সিকিউরিটি ব্যবস্থার মধ্যে অ্যাক্সেস ম্যানেজমেন্ট, ম্যালওয়্যার সনাক্তকরণ,
স্বয়ংক্রিয় ব্যাকআপ এবং আপডেট এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন
পর্যাপ্ত ডিস্ক স্পেস, প্রসেসিং পাওয়ার এবং ব্যান্ডউইথ সহ হোস্টিং পরিষেবাগুলো
বেছে নেওয়ার পাশাপাশি, আপনার ওয়েবসাইটটি অবিচ্ছিন্নভাবে চালাতে সহায়তা করে এমন
সব বৈশিষ্ট্যগুলো খুজতে হবে।
সফ্টওয়্যার টুলস সাপোর্ট
ওয়েব হোস্টিং গুলোর মধ্যে পার্থক্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোর
মধ্যে একটি হলো সফ্টওয়্যার টুলস সাপোর্ট। অনেক হোস্টিং কোম্পানির হোস্টিং
প্যাকেজের মধ্যে একটি ওয়েবসাইট বিল্ডার অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই ওয়েবসাইট
বিল্ডার একটি অনলাইন টুল যার মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের স্ট্রাকচার এবং
ডিজাইন করতে পারেন। অনেক হোস্টিং কোম্পানির কিছু প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে
WordPress, PHP, ASP.net এবং অন্যান্য সফ্টওয়্যার, অন্যগুলোতে ডাটাবেস
সার্ভার, MySQL এর মতো ওপেন সোর্স অথবা মাইক্রোসফ্ট SQL এর মতো বাণিজ্যিক
পণ্য রয়েছে। তবে, বেশিরভাগ হোস্টিং প্যাকেজে কিছু পরিমাণে ম্যালওয়্যার এবং
স্প্যাম সুরক্ষা থাকে।
পারফরম্যান্স
আপনি যদি ডেডিকেটেড এবং ক্লাউড হোস্টিং মডেলগুলো না নিয়ে থাকলে সার্ভার রিসোর্স
এবং কর্মক্ষমতার উপর প্রতিশ্রুত সাপোর্ট পাওয়া কঠিন হতে পারে। হাই লেভেল
প্যাকেজগুলোতে ডেডিকেটেড সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (CPU) কোর (অথবা ভার্চুয়ালি
সমমানের), পৃষ্ঠা লোড সময় এবং অন্যান্য কর্মক্ষমতা-সম্পর্কিত মেট্রিক্সের
স্পেসিফিকেশন অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
২৪/৭ কাস্টমার সাপোর্ট
আপনার ওয়েবসাইটটি যদি অপ্রত্যাশিত ল্যাগ, ক্র্যাশ, এমনকি নিরাপত্তা হুমকির
সম্মুখীন হয়, তাহলে হোস্টিং সেবা প্রদানকারীরা প্রযুক্তিগত ২৪/৭ কাস্টমার
সাপোর্ট সহায়তা প্রদান করে কিনা সে বিষয় বিবেচনা করুন। হোস্ট রিলেটেড
টিউটোরিয়াল এবং জ্ঞান ভিত্তিক সহায়তা সরবরাহ করে কিনা তা পরীক্ষা করুন।
ডোমেইন এবং সাবডোমেইন
অনেক সময় আপনার একাধিক ওয়েবসাইট, অথবা একাধিক ডোমেইন নামের প্রয়োজন হতে
পারে যা একই সাইট বা সাইটে রিডিরেক্ট করা হয়। ওয়েব হোস্টিং প্রদানকারী
প্লাটফর্মগুলো সাধারণত অল্প খরচে এই সাপোর্ট দিয়ে থাকে।
ইমেল পরিষেবা
কিছু কিছু ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি অল্প পরিমাণে ইমেল হোস্টিং ক্ষমতা প্রদান
করে থাকে। আপনার চাহিদা ও অন্যান্য ব্যবস্থা উপর নির্ভর করে এটির প্রয়োজন
হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। এই সেবার মধ্যে অনুমোদিত ইমেল অ্যাকাউন্টের
সংখ্যা, স্পেস কোটা এবং মেইল সেবার ইন্টারফেস সাপোর্ট অন্তর্ভুক্ত থাকতে
পারে।
অনলাইন রিভিউস
বিভিন্ন ওয়েব হোস্টিং পরিষেবা প্রদানকারী প্রতষ্ঠিান থেকে সেবা গ্রহনকারীরা যে
সকল রিভিউ দিয়ে থাকে সেগুলো ভালো ভাবে পর্যালোচনা করুন। বেশিরভাগ অনলাইন রিভিউ
গুলোতে আপটাইম এবং গতি সম্পর্কে তথ্য থাকে সেগুলো দেখে আপনি বুঝতে পারবেন ওয়েব
হোস্টিং পরিষেবা প্রদানকারী সার্ভারগুলো আসলে কীভাবে কাজ করে।
অতিরিক্ত পরিষেবা
ভালো হোস্টিং প্রভাইডারগুলো প্যাকেজ প্ল্যানের সাথে বিনামূল্যের অ্যাড-অন এবং
একটি SSL সার্টিফিকেট, একটি বিসনেস ইমেল অ্যাকাউন্ট, অথবা একটি কন্টেন্ট
ডেলিভারি নেটওয়ার্ক (CDN) প্রদান করে থাকে।
মূল বার্তা
একটি নতুন ওয়েবসাইট তৈরি করতে হলে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। একটি
অনলাইন ব্যবসা, ব্লগ, বা অন্য যে কোনও ধরণের ওয়েবসাইট, অনলাইনে
আপনার উপস্থিতি তৈরির জন্য প্রথমে আপনার প্রয়োজন হবে একটি ডোমেইন এবং
একটি হোস্টিং। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার ওয়েব সাইটটি কোথায় এবং কীভাবে হোস্ট
করবেন। ওয়েব হোস্টিং এমন একটি সেবা যা আপনার ওয়েবসাইটকে সবসময় অনলাইনে লাইভ
রাখতে সাহায্য করে। তাই, আপনার ওয়েবসাইটের জন্য একটি সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য
ওয়েব হোস্টিং কেনার আগে উপরের বিষয়গুলো অবশ্যই বিচেনা করুন।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url