ই কমার্স কি-ই-কমার্স কত প্রকার ও কি কি-ই-কমার্সের সুবিধা ও অসুবিধা

ই-কমার্স বা ইলেকট্রনিক কমার্স ব্যবসায় ক্ষেত্রে ব্যাপক আগ্রহ জাগানোর একটি আলোচ্য বিষয়। E-Commerce বা Electronic Commerce হচ্ছে ইন্টারনেট ভিত্তিক সকল প্রকার বাণিজ্যিক লেনদেন বা ব্যবসা। ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং আর্থিক লেনদেনসমূহ সচল রাখার জন্য টেলিকমিউনিকেশন অথবা ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্কিং-এর ব্যবহারকে ই-কমার্স হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়।

ই কমার্স আর্টিকেলে থাকছেঃ-

ই-কমার্স বা ইলেকট্রটিক কমার্স কি?

ইন্টারনেট, ইন্ট্রানেট এবং এক্সট্রানেট-এর যুগে, ই-কমার্স বলতে অনলাইনে পণ্যসামগ্রী ক্রয়-বিক্রয় ছাড়াও আরও বেশি কিছু বুঝায়। একটি গ্লোবাল ইন্টারনেট কমিউনিটির মাধ্যমে উন্নত বাজারজাতকরণ, সরবরাহ ও পণ্য সেবার অনলাইন প্রক্রিয়া এবং সেবা ক্রয়কেও সংযুক্ত করে। ই-কমার্স সাধারণত ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www) এর মাধ্যমে বাণিজ্য কাজ পরিচালনা করে। ক্রেতা এবং সরবরাহকারীর মাধ্যমে ইনভেন্টরি ডাটাবেসগুলোর এক্সট্রানেট একসেস বিক্রয় এবং ভোক্তা সেবার মাধ্যমে কাস্টমার রেকর্ডস এর এবং ইন্টারনেট নিউজ গ্রুপ এবং ই-মেইল আদান-প্রদানের মাধ্যমে পণ্য উন্নয়নে সম্পৃক্ততা ও ই-কমার্সের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
সহজ কথায়,
আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বিশেষত ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পণ্য বা সেরা মার্কেটিং, বিক্রয়, ডেলিভারী, ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেন ইত্যাদি করাই হচ্ছে ই-কমার্স।

ই কমার্স এর প্রতিষ্ঠাতা কে?

ই-কমার্সের কোনও একক প্রতিষ্ঠাতা নেই, তবে আধুনিক ই-কমার্সের পথিকৃৎ হিসেবে সর্বাধিক স্বীকৃত ব্যক্তি হলেনঃ
মাইকেল অ্যালড্রিচ (Michael Aldrich)
  • তিনি ১৯৭৯ সালে অনলাইন শপিং আবিষ্কার করেছিলেন।
  • তিনি একটি টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে একটি পরিবর্তিত টেলিভিশনকে একটি কম্পিউটার সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত করেছিলেন।
  • এটিই প্রথম সিস্টেম যা গ্রাহকদের ইলেকট্রনিকভাবে পণ্য ক্রয় করার অনুমতি প্রদান করে।
এই কারণে, মাইকেল অ্যালড্রিচ কে প্রায়শই “ই-কমার্সের জনক” বলা হয়।
অতিরিক্ত প্রসঙ্গঃ
  • ১৯৮০-এর দশকে কম্পুসার্ভ (CompuServe) দ্বারা প্রথম অনলাইন মার্কেটপ্লেস (আধুনিক ই-কমার্স সাইটের অনুরূপ) তৈরি করা হয়েছিল।
  • আমাজন {১৯৯৪ সালে জেফ বেজোস (Jeff Bezos) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত} বিশ্বব্যাপী ই-কমার্সকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল।

ই-কমার্স কত প্রকার ও কি কি

ইন্টারনেট, ইন্ট্রানেট এবং এক্সট্রানেট ব্যবসায়ের মূল উপাদান, ক্রেতা, সরবরাহকারী এবং ব্যবসায়িক অংশীদারদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক কমার্স সংযোগ (links) প্রদান করে। পণ্য লেনদেনের প্রকৃতি ও ধরণ অনুসারে ই-কমার্সকে সাধারণত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে ই-কমার্সের প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো।
১. ব্যবসা থেকে ভোক্তা (Business to Consumer-B2C)
২. ব্যবসা থেকে ব্যবসা (Business to Business-B2B)
৩. ভোক্তা থেকে ভোক্তা (Consumer to Consumer-C2C)
৪. ভোক্তা থেকে ব্যবসা (Consumer to Business-C2B)

বিজনেস টু কনজ্যুমার কমার্সঃ

বিজনেস টু কনজ্যুমার (B2C) কমার্স এর ক্ষেত্রে, ভোক্তার নিকট পণ্য ও সেবা বিক্রয়ের জন্য ব্যবসায়ীকে অবশ্যই আকর্ষণীয় ইলেকট্রনিক বাজার ব্যবস্থা (Market Places) উন্নয়ন করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, কোম্পানিগুলো ভারচ্যুয়াল স্টোরফ্রন্টস (Storefronts) এবং ভার্চুয়াল শপিংমল সমৃদ্ধ মাল্টিমিডিয়া ওয়েব সাইটস্, দ্বিপাক্ষিক অর্ডার প্রসেসিং এবং নিরাপদ ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেম-এর প্রস্তাব রাখতে পারে।
উদাহরণঃ
  • আমাজন গ্রাহকদের কাছে ইলেকট্রনিক্স বিক্রি করছে।
  • নেটফ্লিক্স স্ট্রিমিং পরিষেবা প্রদান করছে।
  • একটি পোশাক ব্র্যান্ড তার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করছে।

বিজনেস-টু-বিজনেসঃ

ইলেকট্রনিক কমার্সের বিজনেস টু বিজনেস (B2B) শ্রেণী ব্যবসায়ের মধ্যে ইলেকট্রনিক ব্যবসায়িক বাজার অবস্থান (market place) এবং সরাসরি বাজার সংযোগ উভয়ের সঙ্গে জড়িত। উদাহরণস্বরূপ, অনেক কোম্পানি ওয়াল্ড ওয়াইড ওয়েব/ইন্টারনেট-এ ব্যবসায়িক সম্প্রদায়কে বাজারজাতকরণ বিচিত্রতা এবং পণ্যের তথ্য সম্পর্কে অভিহিত করে। অন্যরা তাদের ক্রেতা এবং সরবরাহকারীদের সাথে সরাসরি কম্পিউটার টু-কম্পিউটার ব্যবসায়িক দলিল আদান-প্রদানের জন্য ইন্টারনেট অথবা এক্সট্রানেট ভিত্তিক ইলেকট্রনিক ডাটা ইন্টারচেঞ্জ (EDI) এর উপরও ভরসা করে।
উদাহরণঃ
  • একজন পাইকার বিক্রেতা, খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বাল্ক পণ্য বিক্রি করে।
  • সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো অন্য কোম্পানিগুলোর কাছে এন্টারপ্রাইজ সফ্টওয়্যার বিক্রি করে।
  • উৎপাদকরা অন্যান্য কোম্পানিগুলোকে কাঁচামাল সরবরাহ করে।

কনজ্যুমার টু কনজ্যুমারঃ

কনজ্যুমার টু কনজ্যুমার (C2C) ব্যবসায় সাধারণত সেকেন্ড-হ্যান্ড পণ্য, বাড়িতে তৈরি জিনিসপত্র বা ব্যবহৃত পণ্য জড়িত থাকে। C2C ব্যবসায় প্ল্যাটফর্ম গুলো বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। এই মডেলটি পিয়ার-টু-পিয়ার বাণিজ্য এবং স্থায়িত্বকে উৎসাহিত করে।
উদাহরণঃ
  • eBay ব্যবহারকারীরা একে অপরের কাছে জিনিসপত্র বিক্রি করছেন।
  • OLX বা Craigslist এ পণ্য লিস্টিং।
  • Facebook Marketplace লেনদেন।

কনজ্যুমার টু বিজনেসঃ

যখন ব্যক্তিরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে পরিষেবা বা পণ্য সরবরাহ করে তখন তাকে কনজ্যুমার টু বিজনেস (C2B) বলে। ফ্রিল্যান্সার, প্রভাবশালী বা ফটোগ্রাফাররা প্রায়শই এই মডেলের অধীনে কাজ করে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তিদের তাদের দক্ষতা, বিষয়বস্তু বা ধারণার জন্য অর্থ প্রদান করে। এই মডেলটির মাধ্যমে কোম্পানিগুলোতে ফ্লেক্সিবল ট্যালেন্ট অ্যাক্সেস করে কোম্পানিগুলোকে উপকৃত করে। এটি ব্যক্তিদের ব্যবসা থেকে সরাসরি আয় করার ক্ষমতা দেয়।
উদাহরণঃ
  • ফাইভার বা আপওয়ার্কে পরিষেবা প্রদানকারী ফ্রিল্যান্সাররা।
  • কোম্পানিগুলোতে ছবি বিক্রিকারী ফটোগ্রাফাররা।
  • ব্র্যান্ড প্রশোশনের মাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারদের অর্থ প্রদান করা।

ই-কমার্সের শেণিবিভাগ (অন্যান্য)

বেশির ভাগ ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং অনেক ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া ইলেকট্রনিক কমার্সের কার্যক্রম দ্বারা প্রভাবিত। উদাহরণস্বরূপ, অনেক আন্তঃসম্পর্কীয় ব্যবসায় (Inter Networked Enterprise) কাস্টমার টু কাস্টমার চালিত এবং বাজারচালিত। তারা নিয়মিতভাবে তাদের ক্রেতা, সরবরাহকারী এবং প্রতিযোগী সংক্রান্ত অনলাইন তথ্যসমূহ তাদের ওয়েব সাইটস্ থেকে এবং ডিসকাশন গ্রুপস্ থেকে পর্যবেক্ষণ করে এবং মূল্যায়ন করে। এই তথ্য সকল ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রাপ্তিসাধ্য এবং এটি কোম্পানির পণ্য উন্নয়নে, বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায়, ক্রেতা/ভোক্তা সেবা প্রদান এবং প্রতিযোগিতামূলক কৌশল প্রণয়নে ব্যবহৃত হয়।

ই-কমার্সের সুবিধা ও অসুবিধা

আধুনিক যুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক হলো ই-কমার্স। ই-কমার্স মানুষের কেনাকাটাকে খুব সহজ করে দিয়েছে। মানুষের জীবনে ই-কমার্সের সুবিধা যেমন রয়েছে, এর অসুবিধাও রয়েছে। নিম্নে ই-কমার্সের সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা করা হলো।

ই-কমার্সের সুবিধাসমূহঃ

ই-কমার্স গ্রাহকদের যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো সময় কেনাকাটা করতে সাহায্য করে, যা কেনাকাটা আরও সুবিধাজনক করে তোলে। এটি ফিজিক্যাল ​​দোকানের প্রয়োজনীয়তা দূর করে ব্যবসায়িক খরচ কমিয়েছে। ই-কমার্সের কারণে ব্যবসাগুলো সহজেই বিস্তার লাভ করে এবং বিশ্বব্যাপী মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। ফলে, গ্রাহকরা পছন্দ এবং দামের তুলনা করার জন্য অনেক পণ্য পেয়ে থাকেন। সামগ্রিকভাবে, ই-কমার্স ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ের জন্য কেনাকাটা দ্রুত, সহজ এবং আরও সাশ্রয়ী করে তুলেছে।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে বাণিজ্য (Commerce on the www):
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www) ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্সের বিশ্ব-বাহনে পরিণত হয়েছে। এটি ব্যবসায়ে একে অন্যের সাথে এবং কাস্টমারের সাথে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার নতুন নতুন পথ বের করছে। সহজ কথায় বলা যায়, ই-কমার্স মানে অনলাইনে ব্যবসা করা এবং বর্তমানে এটা বড় ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ২০০৫ সালে আমেরিকার বানিজ্য বিভাগ একটি পরিসংখ্যানে দেখতে পায় যে সে বছর ই-কমার্সের মাধ্যমে বিক্রয়ের পরিমাণ এক ট্রিলিয়ন ডলারের ও বেশি হয়।
ভোক্তা স্তরে ই-কমার্স (E-commeces at the consumes level):
ভোক্তা স্তরে ই-কমার্সের জন্য প্রায় দশ হাজার ওয়েব সাইট নিয়োজিত আছে। এই ওয়েব সাইটগুলো কাজ হচ্ছে ভোক্তা বা ক্রেতাকে পণ্য ও সেবা সম্পর্কে তথ্য প্রদান, অর্ডার গ্রহণ, পেমেন্ট গ্রহণ এবং অন্য দ্য স্পট (on the spot) অর্থ্যাৎ তাৎক্ষণিক কাস্টমার সার্ভিস প্রদান। কোনো ই-কমার্স সাইট ব্যবহার করা একটি অনলাইন ক্যাটালগের মাধ্যমে ব্রউজ করার মত। উন্নত ধরনের সাইটগুলো আপনাকে নির্দিষ্ট পণ্য সার্চ করার বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট সম্পন্ন পণ্য খুঁজে বের করার বা পণ্যের বৈশিষ্ট্য সনাক্ত করার এবং মূল্য তুলনা করার সুযোগ দেবে।

ঐ সাইটগুলো আপনাকে একটি ইলেকট্রনিক শপিং বা স্কেট বা শপিং কাট দেবে যেখানে আপনি যে সমস্ত আইটেম কিনতে চান সে আইটেমগুলোর তথ্য সাময়িকভাবে জমা রাখতে পারবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি কোনো পণ্য কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি কোনো আইটেম পছন্দ করতে, সেটা শপিং বাস্কেটে রাখতে এবং আপনার শপিং চালিয়ে যেতে পারবেন। আর যখন আপনি কেনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেললেন তখন আপনি সেই পণ্যর মূল্য বেশ কিছু উপায়ে পরিশোধ করতে পারবেন। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত দুটি উপায়ে নিম্নরূপঃ
ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পরিশোধ (এককালীন):
আপনি যদি বিক্রেতার সাথে লেনদেনের একটি স্থায়ীহিসাব খুলতে না চান তাহলে আপনি আপনার ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে একবারে সম্পূর্ণে মূল্য পরিশোধ করতে পারন। এ ক্ষেত্রে আপনি যতবার ক্রয় করবেন ততবার আপনার ব্যক্তিগত এবং কেডিট কার্ডের কিছু তথ্য আপনাকে প্রদান করতে হবে।
অনলাইন হিসাব খোলাঃ
আপনি যদি মনে করেন আপনি ঐ বিক্রেতার কাছ থেকে আরো জিনিস কিনবেন তাহলে আপনি ওয়েব সাইটে একটি হিসাব খুলতে পারেন। তখন বিক্রেতা আপনার ব্যক্তিগত এবং কেডিট কার্ডের তথ্য একটি নিরাপদ সাভারে সংরক্ষণ করবে এবং আপনার কম্পিউটারে একটি বিশেষ ধরনের ফাইল পাঠাবে যাকে কুকী (Cookie) বলা হয়। পরবর্তীতে আপনি যখন আপনার ইউজার সাইডি এবং পাস ওয়ার্ড ব্যবহার করে আপনার হিসাবে ঢুকবেন তখন ওয়েব সাইটটি আপনার কুকীতে সংরক্ষিত তথ্য ব্যবহার করে আপনার হিসাবে প্রবেশ করবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন ব্রোকারেজ হাউজে আপনার অনলাইন হিসাব খোলা বাধ্যতামূলক।
ই-কমার্সের সুবিধাসমূহ নিম্নোক্তভাবে সার-সংক্ষেপ করা যায়-
সুবিধা কারণসমূহ
লেনদেন খরচ কম কাগজের ব্যবহার কমানো এবং শ্রম বাঁচানো।
উন্নত নগদ প্রবাহ তথ্যের বিনিময় এবং দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ।
কম মজুদ ছোট অর্ডার সাইকেল, অর্ডার খরচ কম।
উন্নত তথ্য মান তথ্যের নির্ভুলতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি।
বর্ধিত কর্মদক্ষতা খরচ ও সময় হ্রাসকরণ এবং ভাল তথ্য ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নত আভ্যন্তরীণ কার্যক্রম।
উন্নত গ্রাহক সেবা লেনদেন সম্পর্কে সময়োচিত তথ্য প্রদান এবং কম সময় গ্রহণ।
প্রতিযোগিতা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি নতুন বাজারে প্রবেশে বর্ধিত ক্ষমতা এবং কম মূল্যে ভাল সেবা প্রদান।
উন্নত ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্ক তথ্য সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্বাস স্থাপন এবং সময়োচিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি।

ই-কমার্সের অসুবিধাঃ

আমরা ইতিপূর্বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, পণ্য এবং সেবা আমদানী-রপ্তানী, সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য সংগ্রহের বিশ্বব্যাপী উৎসের অনুসন্ধান এবং এরকম আরো বহু ক্ষেত্রে ই-কমার্স প্রযুক্তির সুফল আলোচনা করেছি। কিন্তু বিষয়টি সম্পূর্ণই কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এমনকি ই-কমার্সের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, পণ্য ও সেবা আমদানী-রপ্তানী এবং পণ্যের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রেও কিছু কিছু সীমাবদ্ধতা বা অসুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। আমরা নিচে সংক্ষেপে কিছু কিছু বিষয়ে আলোকপাত করবো।

ই-কমার্সের অন্যতম প্রধান দুর্বল দিক হলো অনেক লোক হাজার মাইল দূরে অবস্থিত পণ্য কেবলমাত্র ছবি দেখেই কেনার বিষয়টিতে সন্তুষ্ট নাও হতে পারে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, আমদানী, রপ্তানী ও বিশ্বব্যাপী পণ্যের উৎসানুসন্ধানে জড়িত থাকে বিশাল ভৌগোলিক দূরত্ব যা হয়তো এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে বা এক জাতি থেকে অন্য জাতিতে বিস্তৃত। অবস্থানগত এই দূরত্ব অনেক সময় অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। হয়ত, মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবাই যে ই-কমার্সের মাধ্যমে কেবল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, আমদানী-রপ্তানী বা উৎসানুসন্ধান করে থাকে তা নয়। অনেকের কাছে ই-কমার্সের ব্যবহার হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসে কেনাকাটা করা।

এক্ষেত্রে অনেক সময় এই ধরনের কেনাকাটা তাদের সামাজিক প্রয়োজন। যেমন- ছুটি উপভোগ করা ইত্যাদি পূরণ হয় না। আর বিক্রেতার দৃষ্টি ভঙ্গী হলো ই-কমার্স কাস্টমারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ থেকে বঞ্চিত করে। ফলে সরাসরি যোগাযোগের ফলে যা যা সুফল আসতে পারতো তা আসে না। তবে অনেক সময় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বা আমদানী-রপ্তানীর ক্ষেত্রে ই-কমার্সের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয়ের পূর্বে অনেক সময় ব্যক্তিগত বা সরাসরি যোগাযোগের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে ই-কমার্স স্বাভাবিক সরাসরি লেনদেনের বিকল্প হিসেবে কাজ না করে তার একটি বর্ধিত অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়।

আবার অনেক পণ্য এমন ধরনের যে অনলাইনের মাধ্যমে তাদের গুণাগুণ বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবহিত হওয়া সম্ভব নয়। যেমন- কেউ যদি একটি আরামদায়ক সোফাসেট কিনতে চায় তাহলে অনলাইনে সেটির ছবি দেখে বা অন্য কোনো উপায়ে এটা বোঝা সম্ভব নয় যে সেটা আসলে কত খানি আরামদায়ক। কেবলমাত্র সরাসরি সোফার দোকানে গিয়েই সেটা বোঝা সম্ভব হবে। এজন্য এ ধরনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, আমদানী-রপ্তানী বা উৎসানুসন্ধান তখনই সম্ভব হতে পারে। যদি এটি হয় একটি বড় অংকের বিষয় এবং ক্রেতা কোম্পানির কোনো প্রতিনিধি এসে ক্রয় করার আগেই পণ্যটি এসে পরীক্ষা করে যান এবং পণ্যটি পরবর্তীতে সরবরাহ করা হয়।

এ সমস্ত সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় আনার পরও এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, আমদানী-রপ্তানী এবং বিশ্বব্যাপী পণ্যের উৎসানুসন্ধানের অবারিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করার কারণে ই-কমার্স টিকে আছে, টিকে থাকবে এবং সম্প্রসারিত হবে।

ই-কমার্সের কার্যক্রমে কিছু ক্ষুত জড়িত রয়েছে। এগুলো হলো-
▶ ই-কমার্সে পণ্য কেনার আগে সেগুলো ফিজিক্যালি পরীক্ষা করার ক্ষমতা ও সুযোগ নেই, যা অসন্তোষের কারণ হতে পারে।
▶ অনলাইন কেনাকাটা ইন্টারনেট অ্যাক্সেস এবং প্রযুক্তির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে, যা সবার কাছে নেই।
▶ জালিয়াতি, কেলেঙ্কারী এবং নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঝুঁকি রয়েছে।
▶ ডেলিভারি বিলম্ব বা শিপিং সমস্যা অসুবিধার কারণ হতে পারে।
▶ কিছু গ্রাহক ব্যক্তিগত মিথস্ক্রিয়া এবং ফিজিক্যাল দোকানে পাওয়া বিশ্বাস মিস করেন।
▶ অ্যাকসেস, নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার সমস্যা
▶ দক্ষতার অভাব
▶ ক্ষুদ্র ক্যাশ লেনদেনে সমস্যা
▶ ধারণক্ষমতার অভাব
▶ দূরবর্তী স্থানের ক্ষেত্রে অধিক ডেলিভারী খরচ।
▶ বেশিরভাগ দেশের খারাপ তথ্য অবকাঠামোর কারণে ধীরগতিসম্পন্ন ডাউনলোড সময়।
▶ দূরবর্তী স্থানের ক্ষেত্রে অধিক ডেলিভারি সময়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url