জাতিসংঘ কি-জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস-জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য

জাতিসংঘ এর ইংরেজি United Nations। United Nations কে সংক্ষেপে UN বলা হয়। UN হলো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। জাতিসংঘ কোন একক সংগঠন নয়, জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা রয়েছে। জাতিসংঘ সংস্থাটি বিশ্বের প্রায় সকল দেশকে একত্রিত করে বৃহত্তম এবং সর্বাধিক স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সংস্থায় পরিণত করে।
জাতিসংঘ কি-জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস-জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য
জাতিসংঘ প্রধানত আলোচনা করার একটি প্ল্যাটফর্ম। যেখানে জাতিসমূহের জন্য সংঘাত, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক অগ্রগতির মতো বৈশ্বিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।

আর্টিকেলে ষেশে যা জানবেন

জাতিসংঘ কি

জাতিসংঘ (UN) হলো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা ১৯৪৫ সালে বিশ্বের সকল দেশ মধ্যে শান্তি, নিরাপত্তা এবং সহযোগিতা প্রচারের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জাতিসংঘ এমন একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে যেখানে বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশ বিশ্বব্যাপী যেকোন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে এবং সমাধানের জন্য কাজ করতে একত্রিত হতে পারে।

জাতিসংঘ গঠনের পটভুমি

যুদ্ধের সময় যখন মিত্র দেশগুলোর নেতারা জাতিগুলোর মধ্যে সহযোগিতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম খুঁজছিলেন তখন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের ধারণা শুরু হয়েছিল।একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা (জাতিসংঘ/UN) সনদের খসড়া তৈরির জন্য ১৯৪৫ সালের এপ্রিলে, ৫০টি দেশের প্রতিনিধিরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে মিলিত হন। এই খসড়া সনদে সংস্থাটির নীতি এবং কাঠামো নির্ধারণ করা হয়। যুদ্ধ বিরতি, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা, আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবতার কল্যাণের লক্ষ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (World War II) সমাপ্তির পর ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘ গঠিত হয়।

একই তারিখে জাতিসংঘ সনদ কার্যকর হয়, যা জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠার সূচনা করে। “লীগ অফ নেশনস” (League of Nations) যুদ্ধের প্রাদুর্ভাব রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। তাই, জাতিসংঘ এর পূর্ববর্তী সংস্থা “লীগ অফ নেশনস” কে প্রতিস্থাপন করে। জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী কূটনীতি, শান্তিরক্ষা এবং মানবিক প্রচেষ্টার জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামোর প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। জাতিসংঘ রাতারাতি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় নি। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে রয়েছে ১১ টি সম্মেলন যার মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার সম্মেলন

১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং তার পরপরই মোট ১১টি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যুদ্ধের পরে শান্তি, নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করার জন্য মিত্রশক্তিগুলো এই সম্মেলনগুলোর আয়োজন করেছিল। ভবিষ্যতের সংঘাত রোধ এবং জাতিগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে পারে এমন একটি নতুন বিশ্বব্যাপী সংস্থার ভিত্তি স্থাপন করার উদ্দেশ্যে এই সভাগুলোর আয়োজন করা হয়েছিলো।

এই সম্মেলনগুলোতে আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল জাতিসংঘের কাঠামো, সদস্য দেশগুলোর ভূমিকা, নিরাপত্তা পরিষদ এবং শান্তি বজায় রাখার পদ্ধতি। এই ১১টি সম্মেলনের সম্মিলিত ধারণা এবং নীতিগুলো সান ফ্রান্সিসকো সম্মেলনের মাধ্যমে বাস্তব রূপরেখা পায় যেখানে জাতিসংঘের সনদ প্রণয়ন করা হয়েছিল এবং জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১১ টি সম্মেলনের নাম, স্থান, সময় ‍ও ফলাফল নিম্নে দেওয়া হলো।
সম্মেলনের নাম সময়, স্থান ও ফলাফল
লন্ডন ঘোষণা
  • ১৯৪১ সালে অনুষ্ঠিত হয়।
  • ঘোষণা করে ইউরোপের ৯টি দেশের প্রবাসী সরকার।
  • লন্ডনের জেমস প্রাসাদে ঘোষণা করা হয়।
  • জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ।
আটলান্টিক সনদ
  • ১৯৪১ সালে স্বাক্ষরিত হয়।
  • ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিল এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট স্বাক্ষর করেন।
  • “প্রিন্স অব ওয়েলস” নামক ব্রিটিশ রণতরীতে স্বাক্ষরিত হয়।
  • জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রথম চুক্তি।
ওয়াশিংটন ডিসি সম্মেলন
  • ১৯৪২ সালে অনুষ্ঠিত হয়।
  • আমেরিকার ৩২ তম প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট জাতিসংঘের নামকরণ করেন।
কাসাব্লাঙ্কা সম্মেলন
  • ১৯৪২ সালে; মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কায় অনুষ্ঠিত হয়।
  • এটি আফ্রিকার একমাত্র সম্মেলন।
তেহরান সম্মেলন
  • ১৯৪৩ সালে; ইরানের তেহরানে অনুষ্ঠিত হয়।
  • এই বৈঠকে রুজভেল্ট, চার্চিল, স্ট্যালিন জাতিসংঘ গঠনে একমত হন।
  • এই তিন জনকে (বিগ থ্রি) বলা হয়। বিশ্বের সকল দেশকে সদস্য হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
মস্কো সম্মেলন
  • ১৯৪৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়।
  • ৭-দফা ‘মস্কো ডিকলারেশন’ ঘোষণা করে।
ভার্জিনিয়া সম্মেলন
  • ১৯৪৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়।
  • ভার্জিনিয়া আমেরিকার একটি অঙ্গরাজ্য।
  • বিশ্ব খাদ্য সংকট নিরসনে FAO গঠিত হয়।
ব্রিটন উড্স সম্মেলন
  • ১৯৪৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়।
  • এই সম্মেলনের সিদ্ধান্তানুযায়ী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) এবং বিশ্বব্যাংক জন্য লাভ করে।
  • এজন্য এ দুটি সংস্থাকে ‘ব্রিটন উড্স ইনস্টিটিউট’ বলা হয়। আমেরিকার ডলারকে আন্তর্জাতিক মুদ্রায় রূপান্তরিত করা হয়।
ডাম্বারটন সম্মেলন
  • ১৯৪৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়।
  • জাতিসংঘের রূপরেখা, নিরাপত্তা পরিষদ গঠন ও স্থায়ী সদস্য নির্বাচন করা হয়।
ইয়াল্টা সম্মেলন
  • ১৯৪৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়।
  • ইয়াল্টা অবস্থিত ইউক্রেনে।
  • ৫টি স্থায়ী সদস্যের 'ভেটো' ক্ষমতা প্রদান করা হয়।
সানফ্রান্সিসকো সম্মেলন
  • ১৯৪৫ সালের ২৫ এপ্রিল- ২৬ জুন অনুষ্ঠিত হয়।
  • ২৬ জুন ৫০টি দেশের প্রতিনিধিরা সনদে স্বাক্ষর করেন।
  • পোল্যান্ড ৫১ তম দেশ হিসেবে ১৫ অক্টোবর ১৯৪৫ সালে সনদে স্বাক্ষর করে। ২৪ অক্টোবর, ১৯৪৫ সনদ কার্যকর হয়।
  • ২৪ অক্টোবরকে জাতিসংঘ দিবস বলা হয়।

জাতিসংঘের মূলনীতি কয়টি

জাতিসমূহের মধ্যে শান্তি, সমতা এবং সহযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষে জাতিসংঘ (UN) বিভিন্ন মূল নীতি দ্বারা পরিচালিত হয়। এই নীতিগুলোর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সম্প্রীতি ও উন্নয়নের প্রচারের জন্য জাতিসংঘের কাজ এবং এর লক্ষ্যের ভিত্তি তৈরি হয়। জাতিসংঘের মূলনীতি ৭টি। জাতিসংঘ সনদ হলো জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাতা দলিল। জাতিসংঘ সনদের ২নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত জাতিসংঘের (ইউএন) মৌলিক নীতিগুলো নিম্নে দেওয়া হলঃ

সকল সদস্যের সার্বভৌম সমতা (Sovereign Equality of All Members)

জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র, ছোট বা বড়, ধনী বা দরিদ্র, অধিকার এবং কর্তব্যের ক্ষেত্রে সমান।

বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি (Peaceful Settlement of Disputes)

সদস্যদের অবশ্যই তাদের আন্তর্জাতিক বিরোধ শান্তিপূর্ণ উপায়ে শান্তি বা নিরাপত্তার হুমকি না দিয়ে যেমন- আলোচনা, মধ্যস্থতা বা সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে।

শক্তি প্রয়োগ বা হুমকি নিষিদ্ধকরণ (Prohibition of the Use of Force)

কোনও রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতা বা রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দেশগুলোর বলপ্রয়োগ করা বা বলপ্রয়োগের হুমকি দেওয়া উচিত নয়।

জাতিসংঘের পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন (Support for UN Actions)

সকল সদস্য রাষ্ট্রকে জাতিসংঘ সনদের অধীনে গৃহীত যেকোনো পদক্ষেপে সহায়তা করতে হবে এবং জাতিসংঘ যেসব রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক বা প্রয়োগমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেই দেশগুলোকে সাহায্য করা উচিত নয়।

জাতিসংঘের নীতিমালার সাথে অ-সদস্য রাষ্ট্রসমূহের আচরণ নিশ্চিত করা

(Ensuring Non-Members Act Consistently with UN Principles) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য যতদূর প্রয়োজন, অ-সদস্য রাষ্ট্রসমূহ এই নীতিমালা অনুসারে কাজ করবে তা নিশ্চিত করবে সংগঠন।

অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা (Non-interference in Domestic Affairs)

আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে না পড়া পর্যন্ত, যে সকল বিষয় মূলত একটি দেশের অভ্যন্তরীণ এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে জাতিসংঘের এমন কোনও বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।

সৎ বিশ্বাসে বাধ্যবাধকতা পূরণ (Fulfillment of Obligations in Good Faith)

সকল সদস্য সনদের অধীনে তাদের গৃহীত বাধ্যবাধকতা সরল বিশ্বাসে পালন করবেন।

জাতিসংঘের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

জাতিসংঘ যুদ্ধ প্রতিরোধ মানবাধিকার রক্ষা, দারিদ্র্য হ্রাস, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সহ বিভিন্ন বৈশ্বীক সমস্যা নিয়ে কাজ করে যাতে সর্বত্র মানুষ মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারে। জাতিসংঘের এর লক্ষ্য দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে উৎসাহিত করা এবং ক্ষুধা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অবিচারের মতো বিশ্বব্যাপী সমস্যা সমাধানে তাদের একসাথে কাজ করতে সহায়তা করা।

সহজ কথায়, জাতিসংঘের উদ্দেশ্য হল বিশ্বকে সকলের জন্য একটি নিরাপদ, দয়ালু এবং উন্নত স্থান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দেশগুলোকে একত্রিত করা। নিরাপত্তা পরিষদ, সাধারণ পরিষদ, ইউনিসেফ, WHO এবং অন্যান্য সহ বিভিন্ন সংস্থা, কর্মসূচি জাতিসংঘের মাধ্যমে কাজ করে। জাতিসংঘের এর সদর দপ্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত।

জাতিসংঘের মূল উদ্দেশ্য ৪ টি। যথা-
🕊️ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা
🤝 জাতিসমূহের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখা।
🏛️জাতিগুলির কর্মকাণ্ডের সমন্বয় সাধনের কেন্দ্র হওয়া।
🌍 আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অর্জনের জন্য কাজ করা।

জাতিসংঘে ভেটো প্রদানকারী দেশ

জাতিসংঘে ভেটো ক্ষমতার রাষ্ট্র পাঁচটি। জাতিসংঘে ভেটো ক্ষমতা প্রদানকারী দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন। একমাত্র এই পাঁচটি সদস্য দেশের বিশেষ ক্ষমতা (Veto Power) রয়েছে, যে ক্ষমতার বলে এই পাঁচ সদস্যের যে কেউ জাতিসংঘের যেকোন সিদ্ধান্তকে নাকচ করে দিতে পারে। “ভেটো” হলো কোন সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান বা নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা। “Veto” শব্দটি ল্যাটিন ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ “আমি নিষেধ করি” (I forbid)। এটি প্রধানত প্রাচীন রোমান আইনে ব্যবহৃত হতো, যেখানে নির্দিষ্ট কিছু কর্মকর্তার হাতে অন্যদের নেওয়া সিদ্ধান্ত বন্ধ বা প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা ছিল।

বর্তমানে, “Veto” শব্দটি রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে, যেমন- জাতিসংঘ, কোনও প্রস্তাব বা সিদ্ধান্তকে ব্লক করার কর্তৃত্ব বোঝাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যদি এই দেশগুলোর মধ্যে কোনও একটি দেশ যেকোন প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয়, তবে অন্যান্য সদস্যদের ভোট নির্বিশেষে গৃহীত হতে পারে না। ভেটোর উদ্দেশ্য হলো পরাশক্তির দেশগুলোকে তাদের জাতীয় স্বার্থকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করতে পারে এমন সিদ্ধান্ত প্রতিরোধ করার একটি উপায় মাত্র।

সদস্য নয় এবং স্থায়ী পর্যবেক্ষক দেশ ও জাতিসংঘের উদ্যোক্তা রাষ্ট্র

  • ভ্যাটিক্যান সিটি ও কসোভো স্বাধীন সার্বভৌম দেশ কিন্তু জাতিসংঘের সদস্য নয়।
  • ভ্যাটিক্যান সিটি ও ফিলিস্তিন এই দুইটি দেশ জাতিসংঘের স্থায়ী পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করে।
  • তাইওয়ান জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হলেও ১৯৭১ সালে দেশটি চীনের কাছে তাদের সার্বভৌমত্ব হারায়। ফলে তাইওয়ানকে বাদ দিয়ে চীনকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়।

জাতিসংঘের উদ্যোক্তা রাষ্ট্র ৪ টি

  • যুক্তরাষ্ট্র
  • চীন
  • যুক্তরাজ্য
  • রাশিয়া

জাতিসংঘে ব্যবহৃত ভাষা

জাতিসংঘ মোট ৬টি ভাষা ব্যবহার করে। ভাষাগুলো হলো-
◆ ইংরেজি
রুশ
◆ ফরাসি
স্প্যানিশ
চাইনিজ
আরবি
নোটঃ
  • জাতিসংঘের অফিসিয়াল বা কার্যকরী ভাষা- ২টি (ইংরেজি এবং ফরাসি)।
  • জাতিসংঘের ৭ম দাপ্তরিক ভাষার প্রস্তাব করা হয়- বাংলাকে।

জাতিসংঘের সদস্য দেশ

  • জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হলো ৫১ টি।
  • প্রতিষ্ঠাকালীন ৫১ তম সদস্য রাষ্ট্র হলো পোল্যান্ড।
  • জাতিসংঘের বর্তমান সদস্য হচ্ছে ১৯৩ টি।
  • ১৯৩ তম বা সর্বশেষ সদস্য রাষ্ট্র হলো দক্ষিণ সুদান।
  • দক্ষিণ সুদান সদস্যপদ লাভ করে- ১৪ জুলাই, ২০১১।
  • বাংলাদেশ সদস্য- ১৩৬ তম।
  • বাংলাদেশ সদস্যপদ লাভ করে- ২৯ তম অধিবেশনে।

জাতিসংঘে চাঁদার পরিমাণ

বিশ্বের যে কোন দেশ জাতিসংঘকে চাঁদা দিতে পারে তবে চাঁদা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম রয়েছে। চাইলেই যেকোন দেশ ইচ্ছেমত চাঁদার দিতে পারেনা।
  • যে কোন দেশ সর্বোচ্চ তাদের মোট বাজেটের- ২৫% চাঁদা দিতে পারে।
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের মোট বাজেটের ২২% চাঁদা দিয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ চাঁদা প্রদানকারী দেশ।
  • দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চাঁদা প্রদানকারী দেশ জাপান- ৯.৬৮%।
  • তৃতীয় সর্বোচ্চ চাঁদা প্রদানকারী দেশ চীন দেয়- ৭.২%।
  • বাংলাদেশ মোট বাজেটের- ০.০১% চাঁদা প্রদান করে।

জাতিসংঘের নামকরণ

  • জাতিসংঘের নামকরণ করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট।
  • ১৯৪২ সালে ওয়াশিংটন ডিসি সম্মেলনে নামকরণ করা হয়।
  • জাতিসংঘের মূল সনদ লেখক- আর্কিবল্ড ম্যাকলাইশ।
নোটঃ
আর্কিবল্ড ম্যাকলাইশ (Archibald MacLeish) (১৮৯২-১৯৮২) একজন আমেরিকান কবি, লেখক এবং সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন যিনি জাতিসংঘের প্রাথমিক দিনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

জাতিসংঘের অধিবেশন

  • জাতিসংঘের প্রথম নারী ন্যায়পাল- প্যাট্রিসিয়া ডুরাই (জ্যামাইকা)।
  • বার্ষিক অধিবেশন বসে- সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মঙ্গলবার।

জাতিসংঘ ভবন

  • জাতিসংঘ ভবন বা সদর দপ্তর অবস্থিত- ম্যানহাটান, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।
  • যে সাগরের তীরে অবস্থিত- আটলান্টিক মহাসাগর।
  • জাতিসংঘ মূলভবনে কার্যক্রম শুরু হয়- ১৯৫২ সালে।
  • জাতিসংঘ ভবনের জমিদান করেন- রকফেলার।
  • জাতিসংঘ ভবনের প্রধান স্থপতি- অস্কার নাইমিয়ার (ব্রাজিল)।
  • নিউইয়র্ক ছাড়া জাতিসংঘে আঞ্চলিক দপ্তর আছে তিনটি। যথা-
>> জেনেভা (সুইজারল্যান্ড), ভিয়েনা (অস্ট্রিয়া), নাইরোবি (কেনিয়া)
  • নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘ ভবন
  • স্থপতি ব্রাজিলের নাগরিক অস্কার নাইমিয়ার
  • জমিদান করেন রকফেলার।
ভুল নয়, সঠিক তথ্য জানুন বাজারে প্রচলিত অনেক বইতে জাতিসংঘ ভবনের স্থপতি দেয়া আছে রকফেলার। কিন্তু প্রকৃত অর্থে জাতিসংঘ ভবনের স্থপতি ছিলেন ৩ জন। যাদের মধ্যে ব্রাজিলের নাগরিক অস্কার নাইমিয়ার ছিলেন প্রধান। জাতিসংঘ ভবনের জমি দান করেন রকফেলার।

জাতিসংঘের পতাকা ও প্রতীক

  • জাতিসংঘ পতাকা গৃহীত হয়- ৭ ডিসেম্বর, ১৯৪৬।
  • জাতিসংঘের পতাকার রং- ২টি (নীল ও সাদা)।
  • জাতিসংঘের পতাকার নকশা- নীল এর মাঝখানে পৃথিবীর মানচিত্র। আর মানচিত্রের দুইপাশে সাদা রঙ্গের জলপাই গাছের দুটি শাখা রয়েছে।
  • জাতিসংঘের প্রতীক ও পতাকার ডিজাইনার- জোনাল ম্যাগলিন (যুক্তরাষ্ট্র)
  • নীল রঙের মাঝখানে পৃথিবীর মানচিত্র দুইপাশে সাদা রঙের জলপাই গাছের দুটি শাখা।

সারাংশ

জাতিসংঘ সংস্থাটি বিশ্বের প্রায় সকল দেশকে একত্রিত করে, যা এটিকে বৃহত্তম এবং সর্বাধিক স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সংস্থায় পরিণত করে। তার বিশেষায়িত সংস্থা, কর্মসূচি এবং শান্তিরক্ষা মিশনের মাধ্যমে, জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং এমন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যা কোনও একক দেশের পক্ষে একা সমাধান করা সম্ভব নয়।
তথ্যসূত্রঃ
উইকিপিডিয়া

সচরাচর জিজ্ঞাসা

জাতিসংঘের ৭টি মূলনীতি কি কি?
জাতিসংঘ সনদের ২নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত জাতিসংঘের (ইউএন) মূলনীতি ৭ টি।
1. সকল সদস্যের সার্বভৌম সমতা (Sovereign Equality of All Members)
2. সৎ বিশ্বাসে বাধ্যবাধকতা পূর্ণ করা (Fulfillment of Obligations in Good Faith)
3. বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি করা (Peaceful Settlement of Disputes)
4. হুমকি বা বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকা (Refrain from the Threat or Use of Force)
5. জাতিসংঘের সহায়তা (Assistance to the United Nations)
6. জাতিসংঘের নীতির সাথে ধারাবাহিকভাবে সদস্য নয় এমন আইন নিশ্চিত করা (Ensuring Non-Members Act Consistently with UN Principles)
7. অভ্যান্তরীন এখতিয়ারে অ-হস্তক্ষেপ (Non-Intervention in Domestic Jurisdiction)
জাতিসংঘের উদ্দেশ্য কয়টি ও কি কি?
জাতিসংঘ সনদের (১৯৪৫) অনুচ্ছেদ ১ এ বলা হয়েছে, জাতিসংঘের (UN) চারটি প্রধান উদ্দেশ্য রয়েছে। 🕊️ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা।
🤝 জাতিগুলির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা।
🌍 আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অর্জনের জন্য কাজ করা।
🏛️ জাতিগুলির কর্মকাণ্ডের সমন্বয় সাধনের কেন্দ্র হওয়া।
জাতিসংঘের কয়টি শাখা আছে?
🏛️ সাধারণ পরিষদ (General Assembly)
🕊️ নিরাপত্তা পরিষদ (Security Council)
⚖️ আন্তর্জাতিক বিচার আদালত {(ICJ) International Court of Justice}
💼 সচিবালয় (Secretariat)
📊 অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (ECOSOC-Economic and Social Council)
🌎 ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল (Trusteeship Council)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url