স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন কি-স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেমের সুবিধা ও অসুবিধা
স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেম বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের মেরুদণ্ডে
পরিনত হয়েছে। এই কম্যুনিকেশন সিস্টেমের ফলে সারা বিশ্বে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে
তথ্য আদান প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। ব্রডকাস্টিং এবং নেভিগেশন থেকে শুরু করে
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত যে দূরত্বে ট্রাডিশনাল নেটওয়ার্কগুলো পৌঁছাতে
পারে না সেখানে দূরত্ব দূরীকরণে স্যাটেলাইটগুলো ব্রিজ হিসেবে কাজ করে।
স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন আর্টিকেলে থাকছেঃ
- প্রাথমিক আলোচনা
- স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন কী?
- স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেম কী?
- স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন ও স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেম কি একই?
- স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেমের বৈশিষ্ঠ্য
- স্যাটেলাইট ট্রান্সমিশনের কিছু সমসা
- মাইক্রোওয়েভ কম্যুনিকেশন সিস্টেম
- স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেমের সুবিধা ও অসুবিধা
- সারসংক্ষেপ
প্রাথমিক আলোচনা
প্রযুক্তির বিকশিত হওয়ার সাথে সাথে, স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেমগুলো আমরা
কীভাবে ডেটা শেয়ার করি এবং বিশ্বের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করি তা পুনর্নির্মাণ
করে চলেছে। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেমগুলোর
ভূমিকা উপলব্ধি করার জন্য তাদের শক্তি এবং সীমাবদ্ধতাগুলো বোঝা অপরিহার্য।
স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন কী?
স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন হলো পৃথিবীর চারপাশে অবিরত ঘুরতে থাকা কৃত্রিম উপগ্রহ
ব্যবহার করে তথ্য প্রেরণের একটি মেথড। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, একটি গ্রাউন্ড
স্টেশন থেকে একটি উপগ্রহ/স্যাটেলাইটে সংকেত পাঠানো হয়, যা পরে স্যাটেলাইটটি
সেই সংকেতগুলোকে গ্রহের অন্য একটি স্থানে ফেরত পাঠায়। এই এই প্রক্রিয়ার ফলে,
ডেটা, ভয়েস এবং ভিডিও দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্যভাবে দীর্ঘ দূরত্ব ভ্রমণ করতে
পারে, এমনকি দূরবর্তী বা দুর্গম অঞ্চলেও পাঠানো যায়। স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন
বিশ্বব্যাপী সম্প্রচার, নেভিগেশন, ইন্টারনেট পরিষেবা এবং জরুরি যোগাযোগের
ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেম কী?
স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেম হলো একটি সম্পূর্ণ কাঠামো বা ফ্রেমওয়ার্ক যা
স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগকে সক্ষম করে। স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেমের
মধ্যে রয়েছে কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইট, গ্রাউন্ড স্টেশন, অ্যান্টেনা,
ট্রান্সপন্ডার এবং সংকেত প্রেরণ, গ্রহণ এবং প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহৃত সমস্ত
সম্পর্কিত সরঞ্জাম। এই সিস্টেমটি পৃথিবী থেকে সংকেত সংগ্রহ করে, মহাকাশে
সেগুলোকে প্রশস্ত (Amplify) করে বা পুনঃনির্দেশিত (Redirect) করে এবং তারপর
ভূমির নির্দিষ্ট স্থানে ফেরত পাঠায়। এই উপাদানগুলো মিলে একটি সম্পূর্ণ কাঠামো
বা ফ্রেমওয়ার্ক যা একটি নির্ভরযোগ্য নেটওয়ার্ক তৈরি করে বিশ্বব্যাপী
সম্প্রচার, নেভিগেশন, রিমোট সেন্সিং, ইন্টারনেট সংযোগ এবং জরুরি যোগাযোগ
পরিষেবাগুলোকে সাপোর্ট করে।
স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন ও স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেম কি একই?
স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন এবং স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন সিস্টেম এক অন্যের ক্ষেত্রে
রিলেটেড টার্ম। তারা একই জিনিস মনে হলেও তাদের মধ্যে সামান্য পার্থক্য
রয়েছে।
স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন বলতে স্যাটেলাইট ব্যবহার করে তথ্য প্রেরণের প্রক্রিয়া
বা পদ্ধতিকে বোঝানো হয়। এটি মহাকাশ-ভিত্তিক প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগের
সামগ্রিক ধারণা বর্ণনা করে।
অন্যদিকে, স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন সিস্টেম বলতে সেই সম্পূর্ণ সেট-আপকে বোঝায় যা
এই যোগাযোগকে সম্ভব করে তোলে। এর মধ্যে রয়েছে স্যাটেলাইট নিজেই, গ্রাউন্ড
স্টেশন, অ্যান্টেনা, ট্রান্সপন্ডার এবং সমস্ত সহায়ক সরঞ্জাম।
সহজ ভাষায়ঃ- স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন = কম্যুনিকেশনের কার্যকলাপ বা প্রক্রিয়া।
- স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেম = সমগ্র অবকাঠামো বা সেট-আপ যা সেই কার্যকলাপকে সক্ষম করে।
স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেমের বৈশিষ্ঠ্য
স্যাটেলাইট কম্পিউনিকেশনস সিস্টেমগুলো গিগাহার্জ রেঞ্জে সিগন্যাল ট্রান্সমিট
করে যা প্রতি সেকেন্ডে বিলিয়ন সাইকেল। স্যাটেলাইটকে অবশ্যই পৃথিবী পৃষ্ঠের
২২৩০০ মাইল উপরে পৃথিবীর সমকালীন কক্ষপথে স্থানান্তর করতে হবে। তবে, এটি
পৃথিবীকে দিনে একবার পরিক্রমণ করবে। একজন পর্যবেক্ষকের নিকট, এটিকে সবসময় একটি
অঞ্চলে স্থির বলে মনে হবে। স্যাটেলাইট হলো সোলার-পাওয়ার চালিত ইলেকট্রনিক
ডিভাইস যার একশ-এর বেশি ট্রান্সপোন্ডার (ক্ষুদ্রাকৃতির বিশেষ বেতার যন্ত্র)
বিদ্যমান যেগুলো সিগন্যাল গ্রহণ করে, সম্প্রসারিত (Amplify) করে এবং পুনরায়
ট্রান্সমিট/সম্প্রচার করে।
এটি ভূমিতে অবস্থিত স্যাটেলাইট ট্রান্সমিশন স্টেশনগুলোর (যাকে আর্থ স্টেশন বলে)
মধ্যে রিলে (Relay) স্টেশন হিসাবে কাজ করে। যদিও স্যাটেলাইট সিস্টেম স্থাপন
ব্যয়সাধ্য (স্যাটেলাইটের ব্যয়, পৃথিবী পৃষ্ঠের উপরে কক্ষপথে স্থানান্তরের সাথে
সম্পর্কিত সমস্যা এবং হারিয়ে যাওয়ার ক্ষতিপূরণ প্রদান ইত্যাদি কারণে), তবুও
স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনস সিস্টেমগুলো দূরবর্তী স্থানে বিরাট পরিমাণ ডাটা পাঠানোর
ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যয়সাধ্য কার্যকর পদ্ধতি।
স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে প্রাথমিক সুবিধা হচ্ছে একটি স্যাটেলাইট
এককভাবে বৃহৎ একটি তালিকা কভার করে। নির্দিষ্ট কক্ষপথে তিনটি স্যাটেলাইট
স্থানান্তরিত হলে তা কিছু বর্ধিত অংশসহ পুরো পৃথিবী পৃষ্ঠকে কভার/আবৃত করে।
স্যাটেলাইট ট্রান্সমিশনের কিছু সমসা
(১) দূরবর্তী স্থানের ক্ষেত্রে সিগন্যাল/সংকেত ক্ষীণ হতে পারে এবং
আবহাওয়া পরিস্থিতি এবং সোলার কার্যক্রম ব্যতিচার (Noise Interfenence)
সৃষ্টি করতে পারে।
(২) স্যাটেলাইট সাত থেকে দশ বছর কার্যকর থাকে। এরপর এটি তার কক্ষপথ
হারিয়ে ফেলে।
(৩) যে কেউ স্যাটেলাইট বার্তা/সংকেত শুনতে পারে। ফলে স্পর্শকাতর বা
গোপনীয় ডাটা লুকিয়ে (গোপনে) বা এনক্রাইপট্ (Encrypted) ফরমেটে
পাঠানো উচিত।
(৪) স্যাটেলাইটের ট্রান্সমিশন ফ্রিকোয়েন্সির উপর নির্ভর করে, পৃথিবীতে
অবস্থিত মাইক্রোওয়েভ স্টেশনগুলো একই ফ্রিকোয়েন্সিতে ট্রান্সমিশনের
ক্ষেত্রে জ্যাম বা বাধার সম্মুখীন হতে পারে।
(৫) যদি সংকেতগুলো অনেক দূরবর্তী স্থানে প্রেরিত হয় সিগন্যাল
ট্রান্সমিশন ধীরগতিসম্পন্ন হতে পারে।
কোম্পানিগুলোর সরবরাহকারীদের কাছ থেকে স্যাটেলাইট
কমিউনিকেশন টাইম (স্যাটেলাইটের মাধ্যমে
যোগাযোগ সময়) ইজারা নেয়া আবশ্যক। যেমন- Intelsat, Comsat, Inmarsat,
Utelsat এবং Telstar (AT & T) বড় কোম্পানিগুলো যাদের
পৃথিবীব্যাপী অফিস রয়েছে তারা স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পায়।
মাইক্রোওয়েভ কম্যুনিকেশন সিস্টেম
মাইক্রোওয়েভ কম্যুনিকেশনের প্রধান সমস্যা হচ্ছে প্রথিবীর গোলোত্ব। পাহাড়-পর্বত
এবং অন্যান্য কাঠামো প্রায়শই লাইন-অব-সাইট ব্যহত করে। এই জন্য দীর্ঘ দূরুত্বে
ট্রান্সমিশনের জন্য বেশ কিছু রিপিটার প্রয়োজন হয় যা দুটি পয়েন্টের মধ্যে ডাটা
ট্রান্সমিশনের খরচ বেশ বাড়িয়ে দেয়। এই সমস্যাটি স্যাটেলাইট ব্যবহার করার
মাধ্যমে সমাধান করা যায়।
কম্যুনিকেশন স্যাটেলাইট কি?
কম্যুনিকেশন স্যাটেলাইট হলো মূলত শূন্যে স্থাপিত একটি মাক্রোওয়েভ রিলে স্টেশন
(Microwave Relay Station)। এই স্যাটেলাইট গুলো উৎক্ষেপণ করা হয় রকেট বা স্পেস
শাটল (Space Shuttle) এর মাধ্যমে। এই স্যাটেলাইট গুলো নিরক্ষ রেখার ঠিক ৩৬০০০
কি.মি. উপরে স্থাপন করা হয়। এদের কক্ষগতি থাকে পৃথিবীর ঘূর্ণনগতির সমান। যেহেতু
স্যাটেলাইট গুলো একটি জিওসিংক্রোনাস (Geosyncronous) অরবিটে বা কক্ষপথে স্থাপন
করা হয় পৃথিবীর নিকট সেগুলো স্থির থাকে অর্থাৎ পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে সেগুলো
সমান্তরাল গতিতে ঘূর্ণন করে।
ফলে পৃথিবী থেকে সেগুলো স্থির মনে হয় এবং ভূমি থেকে সব সময় একটি নির্দিষ্ট
উচ্চতায় নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে। যার ফলে পৃথিবীতে অবস্থিত কোনো স্টেশন
তার এন্টেনা নির্দিষ্ট ভাবে তাক করতে পারে। প্রতিটি স্যাটেলাইট পৃথিবী পৃষ্ঠের
অর্ধেকের চেয়ে একটু কম স্থানের সিগন্যাল গ্রহণ ও প্রেরণ করতে পারে। তাই পুরো
পৃথিবীব্যাপী ডাটা ট্রান্সমিশনের জন্য কমপক্ষে তিনটি স্যাটেলাইট প্রয়োজন হয়।
বর্তমানে শত শত স্যাটেলাইট আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয়ডাটা ভয়েস এবং ভিডিও
কম্যুনিকেশনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমনঃ ভারতের INSAT সিরিজের স্যাটেলাইট যা
এমন ভাবে স্থাপন করা হয়েছে যাতে ভারতের যে কোনো স্থান থেকে একসেস (Acces) বা
প্রবেশ করা যায়।
স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশনে মাইক্রোওয়েভ সিগন্যাল
স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশনে মাইক্রোওয়েভ সিগন্যাল পৃথিবী পৃষ্ঠের ট্রান্সমিটার
থেকে ৬ বা ১৪ গিগাহার্জ গতিতে শূন্যে অবস্থিত স্যাটেলাইটে পৌঁছায়। স্যাটেলাইটে
পৌঁছাতে পৌছাতে সিগন্যাল গুলো বেশ দূর্বল হয়ে যায় কারণ এরা ৩৬০০ কি.মি পথ
অতিক্রম করে স্যাটেলাইটে পৌঁছে। তখন স্যাটেলাইটে স্থাপিত একটি ট্রান্সপন্ডার
(Trasponder)-এর মাধ্যমে সেগুলো আবার শক্তিশালী করা হয় এবং পৃথিবীর কোনো
রিসিভারে পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে গতি সাধারণত হয়ে থাকে ৪ গিগাহার্টজ বা ১১
গিগাহার্টজ।
লক্ষ্যণীয়, সিগন্যাল পৃথিবী থেকে স্যাটেলাইটে পৌঁছার গতি আর স্যাটেলাইট থেকে
পৃথিবীতে পাঠানোর গতিতে পার্থক্য বিদ্যমান। আর এ পৃথক গতির কারণ হলো, যাতে
ইনকামিং সিগন্যাল আর আউটগোয়িং সিগন্যাল একে অন্যের সাথে ইন্টারকেয়ার না করে।
একটি ট্রান্সপোন্ডার সাধারণত প্রতিটি ৪৮০০ bps (বিট পার সেকেন্ড) এর ১২০০ ভয়েস
চ্যানেল অথবা প্রতিটি ৬৪ kbps (কিলোবাইট পার সেকেন্ড) এর ৪০০ ডিজিটাল চ্যানেল
সাপোর্ট করে। একটি স্যাটেলাইটে অনেক গুলো ট্রান্সপোডার থাকে। ফলে একটি সিগন্যাল
স্যাটেলাইটের ডাটা কম্যুনিকেশন ক্ষমতা ব্যপক হয়।
স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেমে মাইক্রোওয়েভ সিগন্যাল আদান প্রদানের জন্য ৪
গিগাহার্য থেকে ৬ গিগাহার্য ব্যান্ডের ফ্রিকোয়েন্সীর ব্যবহারকে বলা হয় C-band
ট্রান্সমিশন। অন্যদিকে ১১ গিগাহার্য থেকে ১৪ গিগাহার্য ব্যান্ডের।
ফ্রিকোয়েন্সীকে বলা হয় Ku-band ট্রান্সমিশন।
ব্যবহারকারীদের একটি বড় সংখ্যাকে স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশনের সুবিধার আওতায় আনার
জন্য পৃথিবীস্থ গ্রাহক-প্রেরক স্টেশনের আকার এবং খরচ কমিয়ে আনার বিষয়টি অনুভূত
হয়। যার ফলে কেউ যেন সহজেই একটি প্রাইভেট স্টেশন ইন্সটল করতে পারে। এই
প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার জন্য অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকার ডিস এন্টেনা তৈরী করা হয়।
এতে ছিলো স্বল্পশক্তির ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার। এটা ব্যবহারকারী সাইটেই
ইন্সটল করা সম্ভব। এই ডিস এন্টেনা সিস্টেম ভিস্যাট (VSAT-Very Small Aperture
Terminals) নামে পরিচিতি পায়। ডিস এন্টেনার ডায়া মিটার ১ থেকে ২ মিটার পর্যন্ত
হয়ে থাকে।
স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেমের সুবিধা ও অসুবিধা
সমুদ্র, পর্বত এবং প্রত্যন্ত অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত কভারেজ প্রদানের ক্ষেত্রে
যেখানে ট্রেডিশনাল নেটওয়ার্কগুলোর পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব সেখানে, স্যাটেলাইট
কম্যুনিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সংযোগ সাথাপন করা সহজ হয়েছে।
তবে, যেকোনো উন্নত প্রযুক্তির মতো, এগুলোরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে যা খরচ,
কর্মক্ষমতা এবং নির্ভরযোগ্যতাকে প্রভাবিত করে। এই স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন
সিস্টেম গুলোর সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়ই বোঝা আধুনিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কগুলোর
উপর তাদের প্রকৃত প্রভাব মূল্যায়ন করতে সহায়তা করে। নিম্নে স্যাটেলাইট
কম্যুনিকেশন সিস্টেমের সুবিধা ও অসুবিধা বর্ণনা করা হলোঃ
স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেমের সুবিধা
(১) একটি স্যাটেলাইট যা অবশ্যই মাইক্রোওয়েভ রিলে স্টেশন এবং অনেক বড়
এরিয়ার যে কোনো স্থান থেকে দৃশ্যমান, তা ঐ এরিয়ার যে কোনো দুটি পয়েন্টের মধ্যে
ডাটা ট্রান্সমিশনের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব।
(২) যে কোনো দুটি পয়েন্টের দূরুত্ব যাই-ই হোকনা কেন সে দুটি পয়েন্ট যদি
কোনো স্যাটেলাইটের আওতায় থাকে তবে তাদের মধ্যে ডাটা ট্রান্সমিশনের খরচ একই
পরিমাণ হয়।
(৩) স্যাটেলাইটে অনেকগুলো ট্রান্সপন্ডার থাকে যার কারণে ব্যাপক পরিমান
ডাটা আদান প্রদান করা সম্ভব।
(৪) স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশনের ক্ষেত্রে এরর ডিটেকশন বা ভ্রান্তি
সনাক্তকরণ নগন্য বিষয়। কারণ প্রেরক স্টেশন তার প্রেরিত ডাটা স্যাটেলাইট থেকে
নামিয়ে এনে পরীক্ষা করে দেখতে পারে যে স্যাটেলাইটটি ঠিকমত ট্রান্সমিট করেছে
কিনা। যদি না করে স্টেশন থেকে পুণরায় ডাটা নতুন করে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে
পাঠানো যেতে পারে।
স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেমের অসুবিধা
(১) একটি স্যাটেলাইটকে তার কক্ষপথে স্থাপন করার প্রাথমিক ব্যয় অনেক
বেশী।
(২) মাইক্রোওয়েভ সিগন্যাল প্রেরক স্টেশন থেকে স্যাটেলাইট এবং স্যাটেলাইট
থেকে গ্রাহক স্টেশনে ভ্রমনের ক্ষেত্রে ২৭০ msec প্রোপাগেশন ডিলে (Propagation
delay) তথ্যের প্রেরক এবং গ্রাহকের মধ্যে সংঘটিত হয়।
(৩) স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেম যেভাবে কাজ করে সেই পদ্ধতিতে কোনো
ডাটা যা স্যাটেলাইটে ট্রন্সমিশন করার জন্য পাঠানো হয়, সেই ডাটা আপনা আপনি ঐ
স্যাটেলাইটের রেঞ্জে যত গ্রাহক স্টেশন আছে সে সকল গ্রাহক স্টেশনে পৌছে। এজন্য
অনাকাংক্ষিত হস্তক্ষেপের হাত থেকে ডাটাকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ
প্রয়োজন।
বায়ুমন্ডলীয় বিপর্যয় যেমন বজ্রপাত এবং বিদ্যুতের চমক বা বিদ্যুৎ চমক Ku-band
ট্রান্সমিশনকে আক্রান্ত করে। এই জন্য C-band ট্রান্সমিশনকে খারাপ আবহাওয়ায়
সুপারিশ করা হয়।
সারসংক্ষেপ
স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিক যোগাযোগের একটি অপরিহার্য স্তম্ভ হয়ে
উঠেছে। স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেম গোটা বিশ্বকে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে ট্রেডিশনাল নেটওয়ার্ক
পৌঁছাতে পারে না। যদিও ট্রেডিশনাল নেটওয়ার্ক বিস্তৃত কভারেজ এবং নির্ভরযোগ্য
দূর-দূরান্তের যোগাযোগ প্রদান করে, তবুও তারা উচ্চ খরচ এবং আবহাওয়া-সম্পর্কিত
ব্যাঘাতের মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সিস্টেমের
সুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা উভয়ই বোঝার মাধ্যমে, আমরা বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ গঠনে
তাদের ভূমিকা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে পারি। উদ্ভাবনগুলো
এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে, এই ব্যবস্থাগুলো আরও দক্ষ, অ্যাক্সেসযোগ্য এবং
আমাদের সংযুক্ত ভবিষ্যতের সাথে অবিচ্ছেদ্য হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url