জলবায়ু পরিবর্তন বলতে কি বোঝায় - জলবায়ু পরিবর্তন রোধের উপায়

জলবায়ু পরিবর্তন হলো প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়মের পরিবর্তন। বা তাপমাত্রা বা বৃষ্টিপাতের দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তন রোধের উপায় গুলো নির্ণয় করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধের উপায় গুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু টপিক সম্পর্কে আজকে আলোচনা করব।
জলবায়ু পরিবর্তন বলতে কি বোঝায় - জলবায়ু পরিবর্তন রোধের উপায়
বর্তমানে সারা পৃথিবীতে আলোচিত বিষয় গুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ গুরুত্বপূর্ণ।

সূচিপত্রঃ- জলবায়ু পরিবর্তন বলতে কি বোঝায় - জলবায়ু পরিবর্তন রোধের উপায়

ভুমিকাঃ

শিল্প বিপ্লব শুরুর পর থেকে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। তাপমাত্রার এই বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে সারা পৃথিবী জলবায়ু পরিবর্তনে থেকে সামান্য হলেও রক্ষা পেত।যার ফলে সারা পৃথিবীর মানুষ সহ প্রকৃতি, পরিবেশিত সবকিছু ক্ষতির সম্মুখীন হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের দায় মানুষ এড়াতে পারে না। তাই জলবায়ু পরিবর্তন রোধের জন্য মানুষ কেই কাজ করতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন বলতে কি বোঝায়ঃ

জলবায়ু পরিবর্তন বলতে কোন এক বিশেষ অঞ্চলের ৩০ থেকে ৪০ বছরের আবহাওয়ার গড় কে বোঝানো হয়। আর এই জলবায়ুর দীর্ঘমেয়াদী ও অর্থপূর্ণ বা তাপমাত্রা বা বৃষ্টিপাতের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনকে পরিবর্তনকে জলবায়ু পরিবর্তন বলে।

জলবায়ু পরিবর্তন রোধের উপায়ঃ

জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন কোপ-২৬ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো ও শহরে। এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের নেতারা একত্রিত হয়েছিলেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোদধর উপায় চিহ্নিত করার লক্ষ্যে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। বহুবিধ আলোচনা শেষে বিশ্ব নেতারা জলবায়ু পরিবর্তন রোধের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন
বিশ্ব নেতারা বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ০১.৫° সেলসিয়াস এর নিচে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে একটি প্রশ্ন রয়ে যায় যে, শুধুমাত্র সম্মেলন, আলোচনা বা ফটোসেশনের মাধ্যমে কি প্রকৃত অর্থে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা সম্ভব হবে? জলবায়ু পরিবর্তন রোধের জন্য যে সকল উপাদান বা কাজকর্ম জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী সেগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে।

এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই কেবল বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি হ্রাস পাবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে সারা বিশ্ব রক্ষা পেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধের গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপায় নিচে বর্ণনা করা হলো।

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাসঃ

জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান উপায় হলো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করা। তাই জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানে পোড়ালে প্রচুর পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। এই জীবাশ্ম জ্বালানি হিসেবে আমরা প্রতিনিয়ত ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, কয়লা বিভিন্ন জ্বালানি ব্যবহার করে আসছি। সূর্য থেকে আসা তাপ ভোমন্ডল থেকে উপরে যেতে বাধা প্রদান করে এই কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস।
যার ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের তাপমাত্রা ১.৫° সেলসিয়াস এর নিচে রাখতে হলে অবশ্যই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, যে সকল দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে যেমন-যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া এই দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন এবং ব্যবহার রাশির বিপক্ষে। এবং এরা কপ- ২৬ সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার হ্রাস করার পক্ষে স্বাক্ষর করেনি।

মিথেন গ্যাস নিগর্মন হ্রাসঃ

জলবায়ু পরিবর্তন রোধের অন্যতম উপায় হল মিথেন গ্যাসের নির্গমন হ্রাস করা। সাম্প্রতিক জাতিসংঘের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি মিথেন গ্যাসের নির্গমন রাশ করা সম্ভব হয় তাহলে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা অনেকাংশে সম্ভব হবে। এ মিথেন গ্যাস বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মিথেন গ্যাস নির্গমনের অন্য একটি কারণ হলো তেল নিষ্কাশন ব্যবস্থা।
তেল নিষ্কাশনের জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহৃত হয়। এই প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানোর কারণে ব্যাপক মাত্রায় মিথেন গ্যাস এর নির্গমন হয়। তাই প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানোর পরিবর্তে বিকল্প হিসেবে পরিবেশ বান্ধব উপায় এর উদ্ভাবন করা প্রয়োজন। তাহলেই মিথেন গ্যাসের নির্গমন হ্রাস করা সম্ভব হবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধিঃ

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রভাবক হলো জ্বালানি শক্তির ব্যবহার। জলবায়ু পরিবর্তন রোধের উপায় হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। বিশ্বের যে পরিমাণ পরিবেশ দূষণকারী গ্যাস নির্গত হয় তার মধ্যে সবচাইতে বেশি গ্যাস উৎপাদনকারী খাত হলো বিদ্যুৎ এবং তাপ শক্তি উৎপাদন খাত। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ুতে যে পরিবর্তনে ঘটেছে কোন দেশের একার পক্ষে এই পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

তাই সকল দেশকে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে একত্রে কাজ করতে হবে। বিজ্ঞানের অবদানে সভ্যতার উন্নতির ফলে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ এবং তাপ শক্তি ব্যবহার বাড়ছে। সে তুলনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে না। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করা সম্ভব হলে জলবায়ু পরিবর্তন অনেকাংশে লাঘব করা সম্ভব হবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি সম্ভব হলে বিদ্যুৎ তাপের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে এবং পরিবেশ জলবায়ু দূষণের প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে।তাই বিদ্যুৎ এবং তাপ উৎপাদনের ক্ষেত্রে জ্বালানির পরিবর্তন আনতে হবে। তবে সম্পূর্ণ জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা থেকে ক্লিন এনার্জি তথা ডিকার্বোনাইজেশন প্রযুক্তি নির্ভরতার দিকে ঝুঁকতে হতে পারে।

তবে সিদ্ধান্ত নেয়াটা অনেক কঠিন হবে। বায়ু এবং সৌরশক্তি ব্যবহার করে জ্বালানোর চাহিদা মেটানোর পরিকল্পনা করা যেতে পারে। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্ব নেতাদের প্রস্তাবিত নিট জিরো বাস্তবায়নে নবায়নযোগ্য তথা বায়ু ও সৌরশক্তির ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। তবে বায়ু ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অনেকটা কঠিন।

কেননা বাতাসের গতি কম হলে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে যাবে। বিজ্ঞানীরা যদি উন্নত মানের ব্যাটারি উদ্ভাবনে সক্ষম হন যাতে প্রয়োজনীয় শক্তি তথা বিদ্যুৎ সঞ্চয় করে রাখা সম্ভব হবে এবং পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা যাবে।

পেট্রোল ও ডিজেলের ব্যবহার হ্রাস করতে হবেঃ

একটি দেশের উন্নয়নের জন্য ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশের দিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত। সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও সমৃদ্ধ হয়েছে। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন যানবাহনের উদ্ভাবন ঘুরছে। এবং সেগুলো সড়ক, নৌ এবং আকাশ পথে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন বলতে কি বোঝায় - জলবায়ু পরিবর্তন রোধের উপায়
এই যানবাহন গুলোতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন এর মত ক্ষতিকারক গ্যাস উৎপাদনকারী জ্বালানি। জলবায়ু পরিবর্তন রোধের জন্য অবশ্যই যানবাহনে ডিজেল ও পেট্রোলের ব্যবহার হ্রাস করতে হবে। এ সকল জ্বালানি ব্যবহৃত যানবাহনের পরিবর্তে ইলেকট্রিক যানবাহনের সংখ্যা বাড়ানো জলবায়ু পরিবর্তন রোধের একটি পদক্ষেপ হতে পারে। তবে ইলেকট্রিক যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধি একটি জটিল প্রক্রিয়া।

ডিজেল, পেট্রোল এবং অকটেনের পরিবর্তে হাইড্রোজেনকে যানবাহনের উৎকৃষ্ট জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদিত হাইড্রোজেন জ্বালানি আগামীতে পরিবেশবান্ধব পরিবহন খাতের স্বপ্ন দেখাতে পারে। এছাড়াও বিজ্ঞানীরা বিমানের জন্য বিশুদ্ধ জ্বালানি উৎপাদনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যদিও পরিবেশবিদরা মনে করছেন যে আকাশপথে দূষণ কমাতে হলে অবশ্যই বিমানের সংখ্যা কমাতে হবে।

গণপরিবহনের ব্যবহার বাড়ানোঃ

গণপরিবহনের ব্যবহার বাড়ানো জলবায়ু পরিবর্তন রোধের অন্যতম একটি উপায় হতে পারে। ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার পরিহার করে পায়ে হাটা, সাইকেল চালানো বা গণপরিবহন ব্যবহার করলে কার্বন নিঃসরণের হার কমানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি নিজের শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখা সম্ভব হবে। আইপিসিসি এর উপ চেয়ারম্যান ড. ডেব্রা রবার্টস বলেছেন, "আমরা শহরে চলাচলের বিকল্প উপায় বেছে নিতে পারি।

যদি গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে আমাদের প্রবেশাধিকার না থাকে। তবে নিশ্চিত করুন যে আপনি এমন রাজনীতিবিদদের নির্বাচন করছেন যারা গণপরিবহনের বিকল্প ব্যবস্থাগুলো সরবরাহ করবে।" এছাড়া দূরবর্তী কোনো জায়গায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে উড়োজাহাজ এর ব্যবহার না করে বৈদ্যুতিক যানবাহন বা ট্রেনযাত্রাকে আপনার পছন্দের যাত্রা হিসেবে নিতে পারেন। এছাড়া ব্যবসায়ী সফর বাতিল করে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবহার করতে পারেন।

বৃক্ষরোপণের হার বৃদ্ধিঃ

জলবায়ু পরিবর্তন রোধের হাতিয়ার হল উদ্ভিকুল। পৃথিবীতে গাছপালা কমে যাওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ। তাই এই গাছপালায় পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। সেজন্য বৃক্ষ রোপনের কোন বিকল্প নেই। পৃথিবীর তাপমাত্রা কমানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে গাছপালা রোপনের চেয়ে উৎকৃষ্ট পন্থা আর হতে পারে না। মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে গাছপালা কেটে বন জঙ্গল উজাড় করে ফেলছে।

কিন্তু নিজেদের প্রয়োজনে, নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য আমরা পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণ করছি না। জাতিসংঘের ২০১৮ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে,“বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে হলে বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস দূর করতে হবে”। ভূপৃষ্ঠের বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমাতে হলে বৃক্ষ রোপনের কোন বিকল্প নেই।

বায়ু থেকে গ্রিন হাউস গ্যাস দূরীকরণঃ

জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হলো গ্রীন হাউস গ্যাস। এই গ্রিন হাউজ গ্যাস গুলো সূর্য থেকে আসা তাপ ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্যে ফেরত যেতে বাধা প্রদান করে। যার ফলে ধরণী দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ফলে পৃথিবীতে স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হচ্ছে। গ্রীন হাউস গ্যাসের মাত্রা যদি বাড়তে থাকে তাহলে একসময় পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীতে গ্রীন হাউস গ্যাসের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে হলে বায়ুমন্ডল থেকে অবশ্যই গ্রিন হাউস গ্যাস দূর করতে হবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশ বায়ুমণ্ডল থেকে গ্রিনহাউজ দূর করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে টেক্সাসের ‘কার্বন ইঞ্জিনিয়ারিং’ এবং সুইজারল্যান্ডের ‘ক্লাইমওয়ার্কস’ অন্যতম।

বিজ্ঞানীরা একটি বিশাল ফ্যানের মাধ্যমে একটি রাসায়নিক পদার্থের ফিল্টারের ভেতর দিয়ে বায়ুমন্ডলে বাতাস নির্গত করে যার মাধ্যমে বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড শোষিত হয়। আরেকটি পদ্ধতি হলো, কার্বন বন্দী ও সংরক্ষণ (capture and storage) পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কার্বন-ডাইড অক্সাইডের উৎস যেমন কয়লার জ্বালানি প্লান্ট থেকে একটি বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে গ্যাসকে শোষণ করা হয় এবং এই শোষণকৃত গ্যাস ও গর্বের অভ্যন্তরে পাঠানো হয়। তবে এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং ব্যয়বহুল।

শক্তির অপচয় রোধ করুনঃ

আমরা অনেকেই কাপড় ধোয়ার জন্য ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আপনি চাইলেই ওয়াশিং মেশিনের ব্যবহার বন্ধ করতে পারেন। যদি কাপড়চোপড় ওয়াশিং মেশিনেই ধুতে হয় তাহলে শুকানোর জন্য মেশিনের টাম্বেল ড্রয়ার ব্যবহার না করে বাইরে রোদে বা বাতাসে শুকাতে পারেন। যার ফলে আপনার কাপড় শুকাতে বিদ্যুতের অপচয় হবে না। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার কমবে।

এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঘরকে ঠান্ডা রাখার জন্য তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি রাখুন। এবং শীতের সময় ঘরকে গরম করার জন্য হিটারের তাপমাত্রা কমিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এ সকল ইলেকট্রনিক্স পণ্য কেনার আগে পণ্যটি ভক্তি সঞ্চয় দক্ষ কিনা, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কিনা, পরিবেশবান্ধব কিনা, অথবা ইনভার্টার যুক্ত আছে কিনা এই সকল জিনিস বিবেচনা করে কিনতে পারেন। প্রয়োজনীয় বিশেষ কাজের জন্য আপনি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহার করতে পারেন।

যেমন- পানি গরম করতে সৌরশক্তিতে চালিতে সোলার ওয়াটার হিটার ব্যবহার করতে পারেন। শীতকালে বাড়ির স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ছাদে ঠাণ্ডা প্রতিরোধক স্তর স্থাপন করুন। গরমকালেও ছাদ ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থা নিন। যখন বৈদ্যুতিক সামগ্রীর ব্যবহার প্রয়োজন হবে না সেগুলোকে সুইচ অফ করে আনপ্লাগ করে রাখুন। এ সকল ছোট ছোট কাজ করে আপনি শক্তি সঞ্চয় করার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেন।

পানির অপচয় বন্ধ করুনঃ

পানির অপচয় রোধ করে এর পুন:ব্যবহারের চেষ্টা করুন। অরোমার রেভির মতে, " আমাদের পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা উচিত। যেকোনো কাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের পরিবর্তে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে সেই পানি ব্যবহার করতে পারেন।
জলবায়ু পরিবর্তন বলতে কি বোঝায় - জলবায়ু পরিবর্তন রোধের উপায়

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শাক সবজি খাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হনঃ

মাংস খাওয়ার প্রবণতা কমানঃ

খাবারের তালিকায় মাংসের পরিমাণ কমিয়ে শাক সবজির পরিমাণ বৃদ্ধি করুন। কারণ, শাকসবজি বা শস্য, মুরগির মাংস এবং ফলমূলের উৎপাদনের চেয়ে লাল মাংসের উৎপাদনের ক্ষেত্রে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বেশি ঘটে। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ১১৯টি দেশ কৃষিখাতে কার্বন নির্গমন কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল। তবে এই প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সে বিষয়ে কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি।

দুগ্ধজাত খাবার হ্রাস করাঃ

দুগ্ধ রাত খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে আপনি জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ভূমিকা রাখতে পারেন। কারণ এ সকল খাদ্য উৎপাদন এবং পরিবহন করতে প্রচুর পরিমাণে গ্রীন হাউজ গ্যাস উৎপন্ন হয়। আমদানি করা খাবারের পরিবর্তে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মৌসুমি খাদ্য বেছে নিন। এবং খাবারের অপচয় এড়িয়ে চলুন।

দরিদ্র দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান

জলবায়ু পরিবর্তন রোধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ২০০৯ সালে ওপেনহেগেনে জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে ২০২০ সালের মধ্যে দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। পরবর্তীতে এই সহায়তা প্রদানের মেয়াদ ২০২৩ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দরিদ্র দেশগুলোকে গ্রিন এনার্জির দিকে ধাবিত হয় এবং এই প্রক্রিয়া চলমান রাখে সেজন্য আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকায় কয়লা নির্ভরতা কমাতে ৮.৫ বিলিয়ান ডলার প্রদান করেছে।

উপসংহারঃ

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়ন থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে হলে আমাদেরকে নিজ নিজ স্থান থেকে ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শুধুমাত্র একটি দেশ বা একটি সরকারের পক্ষে এত বড় সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার কোন বিকল্প নেই।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url