জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব
বর্তমান বিশ্বের আলোচিত বিষয়বস্তুর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে
জলবায়ুর পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তন কি? জলবায়ু পরিবর্তনের কারণসমূহ এবং
বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
প্রকৃতি তার নিজের গতিতে চলবে এটাই স্বাভাবিক। পৃথিবীতে প্রাকৃতিক কারণে
জলবায়ুতে স্বাভাবিকভাবে কিছু পরিবর্তন হয়।
![জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjvVIJOk8csFxwzDikX-qaNPkiGsQP0MFYEmIFGTAccyKZe89xUHSAgLqaSGHS98jlXp6MTU8iFC1DvSCfO2pr3Y0tFqocLHtD2lpB6Bsp8ftQclTFGoPLEpwIhSzGAH9dbn7mZZs6rEQDCGC4X257b7QrDhiOtwwfVYEMNxs1ocwy-WS2C_MqvaZC7k7u5/s16000-rw/%E0%A6%9C%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%81%20%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A3%20%E0%A6%93%20%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC.webp)
কিন্তু বর্তমানে গোটা বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য প্রধানত মানুষের কর্মকান্ডই
দায়ী। সভ্যতার বিকাশের ফলে যুগে যুগে মানুষের প্রয়োজনে কলকারখানা, যানবাহন সহ
বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এইসব কলকারখানা থেকে কালো ধোঁয়া নির্গত হয় যার
ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কলকারখানা আবিষ্কারের পর থেকে
পৃথিবীর তাপমাত্রা এখন পর্যন্ত ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গিয়েছে।
সূচিপত্রঃ- জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব
ভুমিকাঃ
জলবায়ুর পরিবর্তন কি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সমূহ, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর
প্রভাব, ইত্যাদি সম্পর্কে আমাদের সবারই স্বচ্ছ এবং স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত।
বিশ্ব উষ্ণায়নের
জন্য আমরা মানুষটাই প্রধানত দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে
বাঁচার জন্য কি কি পদক্ষেপ নেয়া উচিত এই দায়িত্ব আমাদেরকেই গ্রহণ করতে হবে।
উন্নত দেশগুলোর বড় বড় কলকারখানা থেকে নির্গত কালো ধোয়ার ফলে উদ্ভিদ ফুল এবং
প্রাণীকুল উভয়ই হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে। পেট্রোল কয়লা জীবাশ্ম জ্বালানি ইত্যাদি
প্রতিনিয়ত পোড়ানোর ফলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস যেমন কার্বন-ডাই-অক্সাইড
কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, সিএফসি বাতাসের সাথে মিশ্রিত হচ্ছে।
জলবায়ু কি
জলবায়ু (Climate)ঃ কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের (সাধারণত বৃহৎ এলাকা জুড়ে) সুদীর্ঘ
সময়ের, সাধারণত ৩০-৩৫ বছরের আবহাওয়ার (বায়ু, তাপ, বৃষ্টিপাত প্রভৃতির) গড়কে বা
সামগ্রিক অবস্থার হিসাবকে জলবায়ু বলা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন কি
কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের আবহাওয়ার যে চিরাচরিত ধরন তার পরিবর্তনকেই জলবায়ু
পরিবর্তন বলে। জলবায়ু পরিবর্তন আবহাওয়ার পরিবর্তনের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।
তাই কোন স্থানের আবহাওয়া পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক ঘটনা। আবহাওয়া পরিবর্তন
পৃথিবীর বিভিন্ন নিয়ামকের উপর নির্ভরশীল যেমন ঐ স্থানের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা,
বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, জৈব প্রক্রিয়াসমূহ, পৃথিবী কর্তৃক গৃহীত সৌর বিকিরণের
পরিবর্তন, ভূত্বক গঠনের পাততত্ত্ব (plate tectonics), আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত,
ইত্যাদি। আর তাই কোন স্থানের আবহাওয়ার উপাদানগুলি স্থায়ী পরিবর্তন ঘটলে তখন
তাকে জলবায়ু পরিবর্তন বলা হয়। কোন স্থানের জলবায়ু হঠাৎ পরিবর্তিত হয় না।
এটি একটি ধীর এবং চলমান প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের জলবায়ু মোটামুটি উষ্ণ আদ্র এবং
সমভাবাপন্ন। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবের আধিক্য থাকার কারণে এ অঞ্চলের জলবায়ুকে
“ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু” বলা হয়। বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন কারণে জলবায়ু
পরিবর্তন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতি এবং
পরিবেশে
মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমানে সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে
জলবায়ু পরিবর্তন বলতে সারা বিশ্বের মানুষের কার্যকর্মের কারণে জলবায়ুতে যে
পরিবর্তন ঘটছে তাকে বোঝানো হয়। যার ফলে ভূমন্ডলীয় উষ্ণতা দিন দিন বৃদ্ধি
পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে
গ্রীনহাউজ ইফেক্ট।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ
- প্রাকৃতিক কারণ
- আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত
- মহাদেশীয় ড্রিফট
- মনুষ্য সৃষ্ট কারণসমূহ
- পৃথিবীর গতি পরিবর্তন
- সামুদ্রিক স্রোত ও ঘূর্ণিঝড়
- খনিজ ও জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার
- কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি /কার্বন নিঃসরণ
- বাতাসে নাইট্রাস অক্সাইড আধিক্য
- পাহাড় নিধন
- গাছপালা ও বন্যভূমি উজাড়
সভ্যতার পরিবর্তনে মানুষের প্রয়োজনে শক্তি উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন কলকারখানায়
ডিজেল, পেট্রোল কয়লা এবং জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলের বায়ুমণ্ডলের কার্বন
ডাই অক্সাইড নাইট্রোজেন সহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি
পাচ্ছে। এই ক্ষতিকারক গ্যাস গুলো আমাদের বায়ুমণ্ডল কে উত্তপ্ত করছে।
যার ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করেছে এবং সমুদ্রের উচ্চতা দিন দিন বৃদ্ধি
পাচ্ছে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চল বা উপকূলীয়
অঞ্চল নিমজ্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ার
ফলে মেরু অঞ্চলের জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়তে পারে। বর্তমানে বিশ্বে এসিড
বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, অতি বৃষ্টি, অনা বৃষ্টি বা খরা এগুলোর অন্যতম কারণ হচ্ছে
বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি।
মানুষের প্রকৃত বন্ধু হচ্ছে গাছপালা এই গাছপালা বাতাসের ক্ষতিকর গ্যাস যেমন
কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন
সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু বর্তমানে সভ্যতার বিকাশের ফলে মানুষের প্রয়োজনে দিন দিন
গাছপালা সহ বন, জঙ্গল উজার করে ফেলা হচ্ছে। বর্তমানে নতুন নতুন শিল্প কারখানা ও
ভবন তৈরির জন্য বন জঙ্গল কেটে উজাড় করে ফেলা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, জলবায়
পরিবর্তনের জন্য আমরা মানুষরাই প্রধানত দায়ী।
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
সারাবিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের ওপর স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী,
নেতিবাচক কিংবা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে তাকে বোঝানো হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের উপরও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব
পড়েছে। একথা অনস্বীকার্য যে সারা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য শুধুমাত্র
প্রাকৃতিক কারণ গুলোই যে দায়ী তা নয় এর মধ্যে মানব সৃষ্ট কারণগুলো রয়েছে।
![জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgiXQht0FbgjEjgp83o6CHu253ojDqwa7mUZaGrpcjziCP3Ir71DDmGKg61KyPBPPgqvllSADhH6CsuBeTHCqQoBpFj9GReTwi7sDcloozjskQMJzxM2GpRF-PSNrbgCXZ8S0dj2maJSD2cfsV7BiBad3ZnDSiUUf1oMy3-tKjDI2pA0Z3O2iA14Dl6Qvxk/s16000-rw/%E0%A6%9C%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%81%20%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A3%20%E0%A6%93%20%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC2.webp)
বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৯০ এর দশকে প্রণীত “ন্যাশনাল
এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যান” এ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে
পরিবেশের যে বিপর্যয় এই ঘটনাকে একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কোন দেশে পড়েছে কিনা তা চারটি মানদন্ডে
বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
১. জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
২. কোথায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হচ্ছে।
৩. কোথায় সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
৪. ক্ষতিগ্রস্ত দেশটি ক্ষতি মোকাবিলায় বা অভিযোজনের জন্যে ইতোমধ্যে কী কী
পদক্ষেপ নিয়েছে।
আরো পড়ুনঃ
জলবায়ু পরিবর্তন রোধের উপায়
জলবায়ু পরিবর্তন তথা বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি,
লবণাক্ত সমস্যা, হিমালয়ের বরফ গলা, নদীর দিক পরিবর্তন, বন্যা, অতিবৃষ্টি, অনা
বৃষ্টি, খরা ইত্যাদি সবগুলো দিক দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সম্ভাবনা
অনেক বেশি। এই চারটি মানদন্ড পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যেমন মালদ্বীপ, ভ্যালুট,
টোব্যাগো এদের ক্ষেত্রে সমান ভাবে কার্যকর নয়। যেমন মালদ্বীপের মোট জনসংখ্যা
বাংলাদেশের অনেক জেলার জনসংখ্যা থেকে অনেক কম।
তাই এই চারটি মানদণ্ডের বিচারে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর
তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘জার্মান ওয়াচ’ কর্তৃক
১৯৯০ থেকে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ১৯৩টি দেশের উপর একটি সমীক্ষা চালানো হয়।
এবং ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স (Global Climate
Risk Index) অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শীর্ষ ১০ টি দেশের
মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার প্রথমে রয়েছে।
উল্লেখ্য একই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশিত ২০০৭ এবং ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের
প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সারা বিশ্বের সাথে সাথে বাংলাদেশেও জলবায়ু পরিবর্তন
এর প্রভাব দেখা দিয়েছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিঃ
জাতিসংঘের জলবায়ুর পরিবর্তন বিষয়ক সংস্থা (IPCC) এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে
যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারণে এই শতাব্দীর মধ্যভাগে বাংলাদেশের
এক-তৃতীয়াংশ এলাকা বিশেষ করে সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল সমুদ্রের পানির নিচে চলে
যেতে পারে। ফলাফল হিসেবে, বাংলাদেশের ১৯ টি জেলার প্রায় ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটার
এলাকা সমুদ্রতলে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের প্রায় দুই কোটি
মানুষ গৃহীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পার্বত্য এলাকায় অতিবৃষ্টিঃ
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক তথ্য মতে, গত বছর অক্টোবর মাসে চট্টগ্রাম বিভাগের
স্বাভাবিকের চেয়ে ৭০ ভাগ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। মাসের প্রথম সপ্তাহে কক্সবাজার,
টেকনাফসহ এই বিভাগের অনেক জায়গায় স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বৃষ্টিপাত
হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপের কারণে পাহাড়ি এলাকার মাটির
বুনন হালকা হয়ে যায়, যার ফলে অতিবৃষ্টির কারণে মাটি নরম হয়ে পাহাড় ধস বা
ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি বা রাস্তা নির্মাণ পাহাড়
বা ভূমিধসের অন্যতম কারণ।
বজ্রপাতঃ
প্রতিবছরের বজ্রপাতে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা বেড়েই চলেছে কোন জায়গার তাপমাত্রা
এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলে সেখানে বজ্রপাতের পরিমাণ ১২ শতাংশ বেড়ে যায়
যেহেতু গত ৩০ বছরের সারা বিশ্বে তাপমাত্রা প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে
গিয়েছে সেহেতু বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে
প্রাকৃতিক দুর্যোগ
যেমন-বন্যা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা
দিচ্ছে। বন্যা এবং অতি দৃষ্টির প্রভাবে প্রতি বছরই বাংলাদেশের অনেক পরিবার
গৃহহীন, ভূমিহীন হয়ে পড়ছে সে সঙ্গে কৃষি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন হচ্ছে।
তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে বঙ্গোপসাগরে বেশি ঘূর্ণিঝড় দেখা দিচ্ছে। ইতোমধ্য
সিডর, আইলা, মহাসেন, রোয়ানু , মোরা ও মোখা নামের ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত
হেনেছে।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
নির্দিষ্ট কোন দেশ বা জনগোষ্ঠীর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শিকার হয়নি। সারা
বিশ্বের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে সম্মুখীন হয়েছে। গত 20 বছরের
প্রায় বিশ্বের সব কয়টি মহাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ছড়িয়ে
পড়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (Centre For Research and Information) (CRI)
এর একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত
দেশের শীর্ষে রয়েছে হন্ডুরাস এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মিয়ানমার, তৃতীয়
স্থানে হাইতি, চতুর্থ অবস্থানে আছে নিকারাগুয়া, পঞ্চম ফিলিপাইন ও ষষ্ঠ অবস্থানে
বাংলাদেশ।
![জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgY__R8c1R0aAgElH31qtSi0oJ_jlAnej7DkcE4L8uM3etqd7sM6IgC_nxdqdQKRgPWQ524gBAIrYGu_FCNJYEwsZSekzHLu3CXWC3joBeyG-kP_bD7B3HWLYvz-FQRI9_j4nUmSrEERgEIfNSm7hrm3jndGYlUlLb9vVYRQuCZas-jFqx1zgI8qgTnqx80/s16000-rw/%E0%A6%9C%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%81%20%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A3%20%E0%A6%93%20%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC3.webp)
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গত ২০ বছরের প্রায় ৫ লাখ ২৮ হাজার এরও বেশি মানুষ
মৃত্যুবরণ করেছে এবং ৩.৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২০১৩ সালের
UN Environment Programme (UNEP) ‘Adaptation Gap’ রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছিল যে,
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বা ফলাফলের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক খরচের
পরিমাণ বর্তমানে চেয়ে ২ থেকে ৩ গুণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে
আশঙ্কা করা হচ্ছে যে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক খরচ ৪ থেকে ৫ গুণ বেড়ে যেতে
পারে। এবং ওই রিপোর্টে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর নিচে রাখার জন্য
বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
২০০৮ সালে মিয়ানমারে ‘ঘূর্ণিঝড় নার্গিস'-এর কারণে যে পরিমাণ মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির
ঘটনা ঘটে, তা গত দুই দশকের অন্যান্য ঘটনার চেয়ে ৯৫ ভাগ বেশি। একইভাবে হন্ডুরাসে,
১৯৯৮ সালের ‘হ্যারিকেন মিচ'-এর কারণে ৮০ ভাগের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়। সবচেয়ে
ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় ১০তম স্থানে থাকা থাইল্যাণ্ডে ২০১১ সালের বন্যায়
ব্যাপক ক্ষতি হয়। ২০১২ সালের ‘হ্যারিকেন প্যাট্রিসিয়া'র ক্ষয়ক্ষতি অতীতের সব
রেকর্ড ভেঙে ফেলে। এই সময়ে সাইক্লোনের ঘটনা ঘটেছে ২৭টি। জলবায়ু পরিবর্তনের
প্রভাব ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে এ কথা বলা যায় যে, জলবায়ুর পরিবর্তনের
কারনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে স্বল্পোন্নত দেশগুলো এবং ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলো।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার সংযোগ
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া চরম ভাবনীয় হয়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন
পরবর্তী ঝুঁকি গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দাবদহ অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, উপকূল
এলাকায় বন্যা যেগুলো ইতোমধ্যেই দেখা দিয়েছে। ২০১৪ সালের গঠিত বিভিন্ন দেশের
সরকারের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটির মূল্যায়নে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উঠে
এসেছে। এশিয়া, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ায় দাবদাহের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। একই
সাথে, উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপে ভারী বৃষ্টিপাতের তীব্রতাও বাড়ছে।
পরিশেষে বলা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন তথা বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য আমরা মানুষটাই
প্রধানত দায়ী। যেহেতু আমরা মানুষরা জলবায় পরিবর্তন এর জন্য দায়ী সেহেতু এই
জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করার দায়িত্ব মানুষেরই। জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করার জন্য
প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করতে হবে এবং সেই সাথে কলকারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর
গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা কমাতে হবে। যেহেতু বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য অধিকাংশ
উন্নত দেশগুলো দায়ী কিন্তু উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলো তাদের দায় এড়াতে
পারে না। সেহেতু জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে হলে সকলকে কাজ করতে হবে।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url