ডাটা ট্রান্সমিশন মোড কি-ডাটা ট্রান্সমিশন মোড কত প্রকার ও কি কি

ডাটা ট্রান্সমিশন মোড এর মাধ্যমে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ডাটা স্থানান্তরিত হয়। ডাটা ট্রান্সমিশন বা কমিউনিকেশন মোড বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। নেটওয়ার্ক যেমনই হোক না কেন প্রতিটি নেটওয়ার্কে সবচাইতে অপরিহার্য জিনিসটি হল নেটওয়ার্কিং মিডিয়া বা লিংক।
ডাটা ট্রান্সমিশন মোড কি-ডাটা ট্রান্সমিশন মোড কত প্রকার ও কি কি
আজকের আর্টিকেলে আমরা ডাটার ট্রান্সমিটার মোড কি, ডাটা ট্রান্সমিশন মোড কত প্রকার ও কি কি, এবং ক্যাবলিং মেথড সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

সূচিপত্রঃ-ডাটা ট্রান্সমিশন মোড কি-ডাটা ট্রান্সমিশন মোড কত প্রকার ও কি কি

প্রাথমিক আলোচনাঃ

নেটওয়ার্কিং মিডিয়া বা লিংক মাধ্যমে ডাটা বা ইনফরমেশন এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে স্থানান্তরিত হয়। এই কাজকে সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মিডিয়া ব্যবহৃত হয়।

ডেটা কমিউনিকেশনের মাধ্যমঃ

ডেটা চলাচলের মাধ্যম গুলোকে কমিউনিকেশন মাধ্যম বলে। যেমন-
(১) ক্যাবল বা তার
(২) সাধারণ টেলিফোন লাইন
(৩) বেতার তরঙ্গ
(৪) ভু উপগ্রহ ব্যবস্থা
(৫)মাইক্রোওয়েভ
(৬) ইনফ্রারেড ব্যবস্থা ইত্যাদি

ক্যাবলিং মেথডঃ

মিডিয়া গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ক্যাবল মিডিয়া। Cabling Method এরমধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্যাবল মিডিয়া রয়েছে।এ সকল মিডিয়া ব্যবহার করে তথ্য এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে স্থানান্তরিত হয়। নেটওয়ার্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে বর্তমানে বহুল প্রচলিত Cabling Method এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু মেথড নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল (Twisted Pair Cable)
২. কো-এক্সিয়াল ক্যাবল (Co-axial Cable)
৩. সাবমেরিন ক্যাবল (Submarine Cable).
৪. ফাইবার অপটিক ক্যাবল (Fibre Optic Cable)
৫. ওয়্যারলেস লিংকস (Wireless Links )

টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলঃ

নেটওয়ার্কিং এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল মিডিয়া। প্রধানত চারটি বা আটটি আলাদা আলাদা কপার ওয়্যার এর মাধ্যমে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল তৈরি করা হয়। প্রত্যেকটি তারই আলাদা আলাদা প্লাস্টিক দ্বারা আবৃত করা থাকে এবং প্রত্যেক জোড়া পরস্পরের সাথে  টুইস্টেড বা প্যাচানো অবস্থায় থাকে। এই প্যাঁচানো তারের পরিমাপ এক মিলিমিটার পুরু হয়ে থাকে।
এবং সমস্ত প্যাঁচানো তার গুলো আলাদা একটি প্লাস্টিক আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে। এই ক্যাবল এর মাধ্যমে এনালগ এবং ডিজিটাল উভয় ধরনের তথ্য বা সংকেত প্রেরণ করা হয়ে থাকে। তারের ভেতর দিয়ে পরিবাহিত ডাটা গুলোর স্পিড এর ওপর ভিত্তি করে নেটওয়ার্ক মিডিয়াগুলোকে তুলনা করা হয়। এটি প্রধানত Bandwidth নামে পরিচিত। অর্থাৎ Bandwidth নির্ভর করে ক্যাবলের পুরুত্বের ওপর। ক্যাবল যত পুরু হবে ডাটা ট্রান্সমিশন তত বেশি এবং দ্রুত হবে।

পূর্বে Twisted Pair Cable, Low Banwidth মিডিয়া হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই মিডিয়ার স্পিড ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এই টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল 150 Mbps (Megabits Per Second) পর্যন্ত স্পিড সাপোর্ট করে। ব্যবহারের দিক থেকে টুইস্টেড পেয়ার কেবল বেশ কয়েক ভাগে বিভক্ত। এই কেবলের মধ্যে তার দুইটি ইনসুলেটিং করা থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে। সাধারণত পেয়ার কেবল দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-

(ক) আনশিল্ডেড টুইস্টেড পেয়ার/Unshielded Twisted Pair (UTP) :

নেটওয়ার্কিং এর ক্ষেত্রে আনশিল্ডেড টুইস্টেড পেয়ার কেবল ব্যবস্থা সবচাইতে বেশি ব্যবহৃত হয়। এই কেবল ব্যবস্থায় শুধুমাত্র বাইরে একটি প্লাস্টিক আবরণী দ্বারা আবৃত থাকে। ভান্তরের তার গুলোতে কোন আলাদা আবরণ দেয়া হয় না। অর্থাৎ এই কেবলগুলো অনাবৃত থাকে। সাধারণত টেলিফোন কোম্পানিগুলো এই ধরনের কেবল ব্যবহার করে থাকে। এই কেবলের দাম কম এবং সহজে বহন করা যায় বিধায় লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক এর ক্ষেত্রে কি ক্যাবলের ব্যবহার বেশি লক্ষ্য করা যায়।

(খ) শিল্ডেড টুইস্টেড পেয়ার ( Shielded Twisted Pair (STP):

শিল্ডেড টুইস্টেড পেয়ার হোয়ার এর মধ্যে প্লাস্টিকের আবরণের সাথে সাথে এক বিশেষ ধরনের মেটাল শিট দ্বারা আবৃত করা থাকে। সাধারণ কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এর ক্ষেত্রে UTP ওয়্যার এর ব্যবহারই সর্বাধিক। তবে এটি আনশিল্ডেড ক্যাবলের চেয়ে দামী এবং স্থাপনও বেশ জটিল।

কো-এক্সিয়াল ক্যাবল (Co-axial Cable) :

দুটি পরিবাহী এবং অপরিবাহী বা পরাবৃত্তিক পদার্থের মাধ্যমে এই কেবল তৈরি করা হয়। পরিবাহীকে আবরণ দেয়ার জন্য এবং বাইরের পরিবাহীর থেকে ভেতরের পরিবাহীকে পৃথক রাখার জন্য মাঝখানে এক ধরনের অপরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করা। বাইরের পরিবাহীকে আবার প্লাস্টিকের জ্যাকেট দ্বারা আবৃত রাখা হয়।
ভেতরের পরিবাহী টি সোজা রাখা হয় এবং বাইরের পরিবাহী দিকে চারিদিক থেকে প্যাচানো হয়। এটি প্রধানত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এবং কেবল টেলিভিশনে বেশি ব্যবহৃত হয়। এটি Coax নামেও পরিচিত। তবে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ব্যবহৃত Coaxial ক্যাবল-এ প্রধানত দুইটি পরিবাহী থাকে। একটি থাকে মাঝখানে এবং অপরটি থাকে চারপাশে।

মধ্যবর্তী পরিবাহী টি Single Wire এবং চারপাশের পরিবাহী টি Wire Mesh Shild. এবং দুই পরিবাহীর মাঝখানে ইনসুলেটর থাকে। নেটওয়ার্কিং এর ক্ষেত্রে সাধারণত দুই ধরণের Coaxial Cable ব্যবহৃত হয়। একটি হলো Thick এবং অপরটি হল Thin. এদের মধ্যে Thick কেবলটি অনেক পুরাতন এবং বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির পথে।

সাবমেরিন ক্যাবল (Submarine Cable) :

সাবমেরিন ক্যাবল বর্তমান আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে তথ্য বহনের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রেখে চলেছে। এই সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে একটি তথ্য কয়েক লক্ষ কিলোমিটার দূরে পৌঁছাতে পারে। যে কেবল এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের দ্বারা তথ্য দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছানো যায় তাকে সাবমেরিন ক্যাবল বলে। এই কেবল প্রধানত সমুদ্রের নিচ দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাথে সংযুক্ত রয়েছে।

অন্য অর্থে, সমদ্বয়ের নিচ দিয়ে এই কেবল সংযোজন করা হয়েছে বলে এটি সাবমেরিন কেবল বলে। যেকোনো কারণে বা দুর্যোগের ফলে সমুদ্রের নিচের এই কেবল ফিরে গেলে বা কেটে গেলে সেই দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবে। এই কেবল ব্যবস্থার মাধ্যমে শুধু ইন্টারনেটের উন্নতি হয়নি টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে।

ফাইবার অপটিক ক্যাবলঃ

যে কেবল এর ভেতর দিয়ে আলোক সংকেত প্রেরণের মাধ্যমে তথ্য বা উপাত্য প্রেরণ করা হয় তাকে অপটিক্যাল ফাইবার বা ফাইবার অপটিক কেবল বলে। ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা খুবই ব্যয়বহুল। কার্ডের সুক্ষ প্যাকের মাধ্যমে এই কেবল এর নেটওয়ার্কিং মিডিয়া তৈরি করা হয়। এবং এর মধ্য দিয়ে আলোক রশ্মির সাহায্যে তথ্য বা উপাত্ত স্থানান্তরিত হয়। এই কেবলে উচ্চ ক্ষমতার লেজার কাটার ব্যবহার করা হয়।

এই কেবলার ভেতর মূলত আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন এর মাধ্যমে সংকট এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। এ কেবল এর এক প্রান্তে আলোকরশ্মি সরবরাহ করলে খুব দ্রুতগতিতে আলোকরশ্মি অন্য প্রান্তে পৌঁছে যায় যার ফলে খুব দ্রুত ডাটা স্থানান্তরিত হয়। ডাটা ট্রান্সমিশনের গতি সাধারণত ১৩০০ Mbps-এর কাছাকাছি। এছাড়া এ ধরণের ক্যাবলে রূপার ওয়ার এর মতো ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক নয়েজ তৈরি হবার সম্ভাবনা থাকে না।

ওয়ারলেস লিঙ্কস (Wireless Links):

ওয়ারলেস নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তির মাধ্যমে দুটি বা তার বেশি কম্পিউটারের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড নেটওয়ার্ক প্রটোকল ব্যবহারের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করা হয়। কিন্তু এটিতে নেটওয়ার্কিং কলের প্রয়োজন হয় না। এটি মূলত দূর থেকে নিয়ন্ত্রিত যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যবহৃত তার বিহীন লোকাল এরিয়ার নেটওয়ার্ক।
এই নেটওয়ার্কিং সিস্টেম প্রধানত রেডিও ইনফ্লারেড সিগনাল এর মাধ্যমে কম্পিউটার গুলোর মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা এবং তথ্য আদান প্রদান করে।

ওয়্যারলেস সার্ভিস রেডিও লিংক এর মাধ্যমে Bandwidth এর প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো সম্ভব। এই মাধ্যমটির সর্বোচ্চ Bandwidth 11 Mbps হয়ে থাকে। এই নেটওয়ার্কের Bandwidth জন্য ধীরে ধীরে অন্যান্য নেটওয়ার্ক মিডিয়াকে প্রতিস্থাপন করছে। সাধারণত অফিস, কলকারখানা, বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান এর মোবাইল এবং কম্পিউটারে এই নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়।

শেষ কথাঃ

ডাটা ট্রান্সমিশন বা কমিউনিকেশন মোড কি, কত প্রকার ও কি কি। এবং ডাটা কমিউনিকেশন গুলোর মধ্যে আজকে আমরা কেবল মিডিয়া সম্পর্কে জানলাম। অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করব। আজকের এই ডাটা ট্রান্সমিশন মডেল আর্টিকেলটি আপনাদের পছন্দ হলে সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url