ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা

“ডিজিটাল বাংলাদেশ” (Digital Bangladesh) বলতে বাংলাদেশের সকল স্তরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে প্রযুক্তির দিক দিয়ে দেশকে উন্নত করাকে বোঝানো হয়। বিশেষ করে দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উন্নয়ন করা, শিক্ষিত বেকারদের জন্য দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করার দিকে বিশেষ লক্ষ প্রদান করা হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা
২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নির্বাচনী ইশতেহারে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনার বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন।ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারনাটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার চারটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ের দিক গুরুত্বারোপ করেছিলো, সেগুলো হল: (১) মানব সম্পদ উন্নয়ন, (২) জনগণের সম্পৃক্ততা, (৩) সিভিল সার্ভিস, (৪) দৈনন্দিন জীবনের তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার।

সূচিপত্রঃ- ডিজিটাল বাংলাদেশ

ভূমিকা

“ডিজিটাল বাংলাদেশ” বর্তমান সময়ে রাজনীতিতে একটি উচ্চকিত স্লোগান। ২০২১ সালে পালিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। তাই এ সময়ের মধ্যে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়। উন্নত দেশসমূহের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এটি একটি সময়োচিত পদক্ষেপ। পৃথিবীর প্রায় সকল জাতিই জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশকেও এর থেকে বাইরে থাকলে চলবে না। কিন্তু একটি দেশকে ডিজিটাল হিসেবে তৈরি করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন সহজ নয়।

“ডিজিটাল বাংলাদেশ” অর্থ

ইন্টারনেটের সুফল সমাজের সকল কাজে ব্যবহারের মাধ্যমে একটি সমাজ বা দেশকে ডিজিটাল করা যেতে পারে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কী? এ বিষয়কে বুঝতে হলে আমাদের আগেই জানতে হবে একটি দেশ কীভাবে ডিজিটাল দেশে পরিণত হতে পারে।
একটি দেশকে তখনই ডিজিটাল দেশ (Digital Country) বলা যাবে, যখন দেশটি 'ই-স্টেট' (e-state)-এ পরিণত হবে। অর্থাৎ ওই দেশের যাবতীয় কার্যাবলি যেমন- সরকারব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি প্রভৃতি কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা

সর্বপ্রথম ২০০৮ সালে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” উত্থাপন করা হয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগ বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে  “ডিজিটাল বাংলাদেশ” শব্দদ্বয় উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আগামী ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ পরিণত হব ।” তার পরিকল্পনায় প্রধান , “লক্ষ্য ছিল, একটি উন্নত দেশ, সমৃদ্ধ ডিজিটাল সমাজ, ডিজিটাল যুগের জনগোষ্ঠী, রূপান্তরিত উৎপাদনব্যবস্থা, নতুন জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি - সর্বোপরি একটি জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক দেশ গঠন করা।”

২০০৯ সালের ১২ থেকে ১৭ নভেম্বর, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি কতৃক আয়োজিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ সামিট’ নামক সম্মেলনে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং অগ্রাধিকারের বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এই সম্মেলনের পর থেকেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কর্মসূচি গৃহীত হতে থাকে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বর্তমান বিশ্ব রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পরিচালিত হয়। যার ফলে রাজনৈতিক দলের মেনিফেস্টোই ডিজিটাল বাংলাদেশকে তুলে ধরেছে। ২০০৮ সালে সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার। ফলে একটা বিশালসংখ্যক তরুণ ভোটার তাদেরকে ভোট দিয়েছে। এখন যদি সরকার বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ। ও বাস্তবায়ন করে, তবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য তা হবে আশীর্বাদস্বরূপ।
ডিজিটাল বাংলাদেশের পূর্বশর্ত: একটি ডিজিটাল সমাজ নিশ্চিত করবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, যেখানে সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের কর্মকান্ডে পর্যাপ্ত অনলাইন প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটবে। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ নিশ্চয়তা দেবে দ্রুত ও কার্যকর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি সুশাসিত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার। এ ক্ষেত্রে শক্তিশালী তথ্যপ্রযুক্তি কাঠামো মূলভিত্তি। কঠিন বাস্তবতাকে অতিক্রম করে বাংলাদেশকে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' হিসেবে গড়তে গেলে এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিশেষ নজর দিতে হবে। যেমন-

শিক্ষাঃ

বাংলাদেশে শিক্ষার হার বাড়ছে। এই হারকে আরও বাড়িয়ে নিরক্ষরতার হারকে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে হবে। কেননা, শিক্ষিত মানুষ ছাড়া ডিজিটাল শব্দটি অর্থপূর্ণ হবে না। কারণ অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে প্রযুক্তি তুলে দিয়ে গণমানুষকে তার আওতায় আনা যায় না, বিষয়টি সকল মানুষকে বুঝতে হবে।

বিদ্যুৎ ঘাটতিঃ

পাওয়ার সেলের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫,৬৮২ মেগাওয়াট হলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। একটি পরিপূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তি কাঠামো গড়ে তোলার জন্য যথাযথ বিদ্যুতের ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ ঘাটতি কমাতে হবে।

নেটওয়ার্ক কাঠামো উন্নয়নঃ

ঢাকার বাইরে এখনো খুবই কমসংখ্যক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কাঠামোর আওতায় আসতে পেরেছে। ঢাকা শহরের বাইরের কিছু উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করে তথ্য পাওয়া গেছে যে, বেশিরভাগ LAN (লেন) ঢাকাকেন্দ্রিক। এই পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের পার্থক্যকে প্রতীয়মান করে।

ইন্টারনেট ব্যবহার সম্প্রসারণঃ

তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য একটি দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ খারাপ।
তবে আশার কথা হলো এই সংখ্যা প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি তথ্য মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার প্রায় ৫০ শতাংশ। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় তা যথেষ্ট কম।

ইংরেজি শিক্ষার হার বৃদ্ধিঃ

মূলত ইংরেজি ভাষা ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার বিশ্বায়নকে ত্বরান্বিত করছে। অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারিনি। এজন্যই আমাদের দেশে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন করতে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।

সমুদ্রের তলদেশের সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগঃ

২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সুপার হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমুদ্র তলদেশের সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে। কিন্তু এই সাবমেরিন ক্যাবল প্রায়ই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটি চালু হলেও তা পরীক্ষামূলক পর্যায়েই রয়েছে।

ভাষান্তরঃ

কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংক্রান্ত বিষয় ও ধারণাগুলো বাংলায় ভাষান্তর করতে হবে। যাতে কম শিক্ষিত মানুষও এসব কার্যক্রম চালাতে পারে। এ ছাড়া আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর সঙ্গে জড়িত। তবে উপর্যুক্ত বিষয়গুলো নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে।

অনলাইনের সুবিধাসমূহঃ

বাংলাদেশের মানবসম্পদ যত বেশি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ছে, ততই অনলাইনের গুরুত্ব বাড়ছে। আজকের দিনে মানুষ ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে যাবতীয় প্রয়োজনীয় কাজ সমাধান করছে। মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ঘরে বসেই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে। পৃথিবীর বিভিন্ন তথ্য সহজেই পেয়ে যাচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে।
চাকরি প্রার্থীরা খুব সহজেই ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করছে। অনলাইন ব্যাংকিং চালু হওয়ার ফলে এখন গ্রাহক যেকোনো ব্যাংক থেকেই টাকা জমাদান, উত্তোলন, বিল পরিশোধ ইত্যাদি কাজ ঘরে বসেই করতে পারছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জন ও বাস্তবতা

বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি দ্রুত প্রসারের ফলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বহির্বিশ্বে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। আজ তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়ো সাফল্য মোবাইল ফোনের ক্রমবর্ধিত ব্যবহার। এটি বাংলাদেশের যোগাযোগ মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তির অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন অনেক কম।

দেরিতে হলেও বাংলাদেশ SEA-ME-WE4 এবং SEA-ME-WES সাবমেরিন ফাইবার অপটিক ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তবে শহরের কিছু উচ্চবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ জনগণই ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে দূরে আছে। বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন তা বাস্তবায়ন করতে হলে ইন্টারনেট ব্যবহারকে সহজলভ্য করতে হবে।

অগ্রযাত্রা ও অর্জন

  • বাংলাদেশে ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত ১৮ হাজার ৯৭৫ কি.মি. অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন করা হয়। ইউনিয়ন পর্যায়ে ২০০৪ টি ইউনিয়নে ওয়াইফাই রাউটার সংস্থাপন এবং ১ হাজার ৪৮৩ টি ইউনিয়নকে নেটওয়ার্ক মনিটরিং সিস্টেমে যুক্ত করা হয়।
  • বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন তথ্য ও দিকনির্দেশনা সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য ওয়েবসাইট বা ওয়েব পোর্টাল প্রকাশ করা হয়েছে। সরকারি জাতীয় ওয়েব পোর্টাল এ্যাড্রেস হলো “www.bangladesh.gov.bd”।
  • গ্রমীন পর্যায়ে দেশের জনগনের কাছে সরকারের বিভিন্ন তথ্য ও সেবা পোঁছে দেওয়ার জন্য কয়েকটি
  • সরকারি মোবাইল হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি হেল্পডেস্ক একটি নির্দিষ্ট নম্বর রয়েছে যে নম্বরে কল করে যেকোন নাগরিক খুব সহজেই সরকারি তথ্য ও সেবা পেতে পারেন। এই নম্বর টোল ফ্রি সেবার আওতাধীন রয়েছে।
  • বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৮ কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী রয়েছে। মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে সরাসরি বিভিন্ন তথ্য ও সেবা অল্প সময়ে ফোন ব্যবহারকারী এবং তাদের পরিবারের নিকট পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
  • দেশের সকল জেলাতে ই-সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ই-সেবা কেন্দ্র থেকে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে দেশের নাগরিকরা তাদের জমি-জমা সংক্রান্ত দলিলের সত্যায়িত অনুলিপি সংগ্রহ করতে পারবেন।
  • অনলাইন ব্যবসা-বানিজ্যের ধারণার প্রসারের কারণে অনেক ই-কমার্স ওয়েব সাইট তৈরি হয়েছে।
  • শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছে সকল শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক পোঁছে দিতে অনলাইন ই-বই/ই-বুক প্ল্যাটফরম তৈরি হয়েছে। ই-বই/ই-বুক এ ৩০০টি পাঠ্যপুস্তক ও ১০০টি সহায়ক পুস্তক রয়েছে।
  • ইন্টারনেট সংযোগের বিস্তর প্রসারের কারণে অনলাইন ভিত্তিক অনেক শিক্ষামূলক প্ল্যাটফরম তৈরী হয়েছে।
  • দেশের জনগনের সুস্বাস্থ নিশ্চিত করতে উপজেলা পর্যায়ে ‘টেলিমেডিসিন সেবাকেন্দ্র’ গড়ে তুলা হয়েছে।
  • ইন্টারনেট সংযোগের ফলে জনগন ঘরে বসেই তাদের জমি সংক্রান্ত আয়করের হিসাব করতে পারেন এবং রিটার্ন তৈরি ও দাখিলা করতে পারেন।
  • দ্রুত অর্থের লেনদেনের জন্য পোস্টাল ক্যাশ কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফার সিস্টেম চালু করা হয়েছে। ইন্টারনেট ও অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও খুব দ্রুত অর্থ স্থানান্তরিত করা যায়। বাংলাদেশের কিছু জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিকাশ, রকেট, টি-ক্যাশ, নগদ, সিটি টাচ, উপায়, ইজি ক্যাশ।
  • গ্রাহকরা সহজেই অনলাইনে অথবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিল প্রদান করতে পারেন।
  • তথ্য প্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে সকল প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ; স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন; পরীক্ষার নিবন্ধন; চাকরির আবেদন; জন্ম নিবন্ধন; ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন করা সম্ভব হচ্ছে।
  • বর্তমানে প্রায় সকল ট্রেন, বাস ও প্লেনের টিকিট অনলাইনে বা মোবাইলে সংগ্রহ করা যায়।
  • দুর্নীতির পরিমান কমাতে সরকারের বড় বড় উন্নয়নমূলক কাজে টেন্ডার নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘ই-টেন্ডার’ নামক বিশেষ ওয়েব পোর্টাল ব্যবহার করা হচ্ছে।
  • দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ২০১৮ সালের ১২ মে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ নামক প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে প্রেরণ করা হয়।
  • ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর মাসে বিশ্বের ৯ম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক ভাবে 5G ইন্টারনেট চালু হয়।
  • ২০২১ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের প্রথম বাংলা ভাষাভিত্তিক ব্রাউজার 'দুরন্ত' যাত্রা শুরু করে।
  • ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর মন্ত্রি সভায় বাংলাদেশ তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল SEA-ME-WE-6 স্থাপনের প্রকল্পটি পাস হয়।
  • দেশের অভ্যান্তরে এবং বহিরবিশ্বের সাথে যোগাযোগের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ বর্তমানে SEA-ME-WE-4 ও SEA-ME-WE-5 নামক দুইটি সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে।
  • বাংলা ভাষায় তথ্য খোজার জন্য ‘গুগল, বিং, ইয়াহু এর মত’ ‘পিপীলিকা’ নামক সার্চ ইন্জিন তৈরি করেছিলেন বাংলাদেশের প্রযুক্তিবিদরা। বর্তমানে ‘পিপীলিকা’ সার্চ ইন্জিনটি বন্ধ রয়েছে।
  • বাংলাদেশের প্রযুক্তিবিদরা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন’ বা ইভিএম তৈরী করেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই বিশাল কর্মপদ্ধতি চালানোর জন্য অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একসঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। নিচে বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো:
(i) ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি করতে গেলে আমাদের উন্নয়নের একটি বিজ্ঞানসম্মত নকশা তৈরি করতে হবে। এ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমেই 'e-readiness' প্ল্যান তৈরি করে তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শী মানবশক্তি তৈরি করতে হবে।
(ii) ইন্টারনেট কাঠামোর উন্নয়ন ও ইন্টারনেটের ব্যয় সাধারণের সীমার মধ্যে এনে সকল জনগণের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
(iii) সর্বোপরি, সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি কাজে ইন্টারনেটের ব্যবহার করে স্বচ্ছতা আনা ইত্যাদি বাংলাদেশকে ডিজিটালায়নে সহযোগিতা করবে।
(iv) জনগণকে পরিবর্তনশীল মানসিকতার পরিচয় দিতে হবে এবং সরকারের পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
(v) গ্রাম ও শহর অঞ্চলের মধ্যে একটি ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
(vi) ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত ও সহজলভ্য করতে হবে।

উপসংহার

পরিবর্তনশীল বিশ্বে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তিকেন্দ্রিক জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থার প্রচলন করতে হবে। এ স্বপ্নকেই ধারণ করছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হবে- এটি সকলেরই প্রত্যাশা। তবে এ প্রত্যাশাকে বাস্তবায়ন করা কঠিন। এর জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে ডিজিটাল বাংলাদেশে বসবাসের স্বপ্ন দেখতে হবে।

তথ্য সুত্র:

  • উইকিপিডিয়া (বাংলা)
  • জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এর ওয়েবসাইট

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url