গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও নিরাপদ মাতৃত্ব

গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও নিরাপদ মাতৃত্ব

নিরাপদ মাতৃত্বঃ

গর্ভবতী মহিলার মৃত্যু ও অসুস্থতা প্রতিরোধ করাই নিরাপদ মাতৃত্বের উদ্দেশ্য। এই সেবা সকল স্বাস্থ্য কেন্দ্র হতে এবং কমিউনিটি পর্যায়ে প্রদান করা হবে। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতকরণের জন্য জরুরী সেবা প্রদান কেন্দ্রসমূহের ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং এই লক্ষ্যে জরুরী প্রসূতি সেবা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে যেন "Three Delay Model" কে যথাযথভাবে ব্যবহার করে এলাকার জনগনকে উদ্বুদ্ধ করে সেবার ব্যবস্থার মান বাড়ানো যায়। স্বাস্থ্যকেন্দ্র সমূহকে নারী- বান্ধব কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।
প্রসবপূর্ব সেবা, নিরাপদ প্রসব সেবা এবং প্রসব পরবর্তী সেবাও নিরাপদ মাতৃত্বের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাত প্রতিরোধ করে মায়ের মৃত্যু ও অসুস্থতা কমিয়ে আনা সহ অন্যান্য পরিবার পরিকল্পনা সেবাসমূহ ও নিরাপদ মাতৃত্বের সহায়ক কার্যক্রম হিসাবে গণ্য হবে। ইতোপূর্বে গৃহীত টিবিএ কার্যক্রমের মূল্যায়ন থেকে দেখা যায় যে, মাতৃ- স্বাস্থ্য উন্নয়নে টিবিএ গন তেমন উলে-খযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারছেন না। নিরাপদ প্রসব এবং জরুরী অবস্থায় দ্রুত রোগী রেফার করার জন্য ব্যবস্থা করা হবে

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ

  • মাসিক বন্ধ থাকা
  • বমি বমি ভাব হওয়া
  • স্তনে ব্যথা অনুভুত হওয়া

নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত সমূহ

  • গর্ভবতী হবেন কিনা সে বিষয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, এবং
  • যদি তিনি গর্ভবতী হন তবে তাঁর জন্য গ্লিলিখিত সেবাসমূহ নিশ্চিত করা-
  • গর্ভবতী মায়ের জটিলতা প্রতিরোধ করতে গর্ভকালীন স্বাস্থ সেবা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
  • প্রসবের সময় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর সেবা।
  • প্রয়োজনে অনতিবিলম্বে জরুরী প্রসূতি সেবা এবং
  • প্রসব পরবর্তী প্রয়োজনীয় সেবা।
অর্থাৎ নিরাপদ মাতৃত্ব হচ্ছে এমন একটি পরিবেশ / অবস্থা সৃষ্টি করা যাতে একজন মহিলা তার নিজস্ব সিদ্ধান্তে গর্ভবতী হবার পর গর্ভ ও প্রসব সংক্রান্ত জটিলতা ও মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সকল সেবা নিশ্চিতভাবে পেতে পারে।

গর্ভকালীন যত্ন

গর্ভবতী হওয়ার সময় থেকে সন্তান প্রসবের পুর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া থেকে শুরু করে ৯ মাস ৭ দিন ব্যাপী গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভস্থ সন্তানের যত্ন নেওয়াকে গর্ভকালীন যত্ন বলা হয়। নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা এবং উপদেশ প্রদানের মাধ্যমে গর্ভকালীন যত্ন নেয়া হয়। গর্ভকালীন সময়ে কম পক্ষে ৪ বার পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
১ম ভিজিটঃ ১৬ সপ্তাহ বা ৪ মাস
২য় ভিজিটঃ ২৪-২৮ সপ্তাহ বা ৬-৭ মাস
৩য় ভিজিটঃ ৩২ সপ্তাহ বা ৮ মাস
৪ র্থ ভিজিটঃ ৩৬ সপ্তাহ বা ৯ মাস
তথ্য সুত্রঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী।

গর্ভকালীন যত্নের উদ্দেশ্য

গর্ভকালীন যত্নের প্রধান উদ্দেশ্য হলো গর্ভবতী মায়ের মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ রাখা এবং শক্তিশালী করা। স্বাভাবিকভাবে প্রসব হওয়ার জন্য মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা খুব প্রয়োজন। গর্ভবতী মা যেন স্বাভাবিকভাবে একটি সুস্থ শিশু জন্ম দিতে পারেন, সন্তানকে বুকের দুধ খওেয়াতে পারেন এবং সন্তোষজনকভাবে নিজের এবং শিশুর যত্ন নিতে পারেন। অধিকাংশ মহিলাই" গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকেন কিন্তু তার অজান্তে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিল উপসর্গ দেখা দিতে পারে যার প্রাথমিক লক্ষণসমূহ শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ ডাক্তার / পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা/মাঠে স্যাটেল্যাইট ক্লিনিক/সিএসইবিএ ভিজিটের মাধ্যমে নির্ণয় করা যেতে পারে। এটা প্রমানিত হয়েছে যে গর্ভকালীন যত্নের মাধ্যমে মা এবং শিশু মৃত্যুর হার, জটিল উপসর্গ, মৃত সন্তান জন্ম দেওয়া এবং অপরিপক্ক শিশু জন্ম দেওয়া হ্রাস পায় এবং মায়েরা শিশুকে বুকের দুধ দিতে সক্ষম হন।

গর্ভকালীন যত্নের কার্যাবলী

(ক) গর্ভবতী মহিলার কোন অসুখ থাকলে তা নির্ণয় করতে হবে এবং তার চিকিৎসা করতে হবে। যেমনঃ রক্তস্বল্পতা, গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ, প্রি-একলাম্পশিয়া বা একলাম্পশিয়া, দীর্ঘস্থায়ী ও বাধাপ্রাপ্ত প্রসবের পূর্ব ইতিহাস।
(খ) গর্ভবতী মহিলাকে সুস্থ রাখতে উপদেশ দেওয়। ধনুষ্টংকার, ম্যালেরিয়া এবং রক্তস্বল্পতার প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহন করা।
(গ) গর্ভাবস্থায় জটিল উপসর্গগুলো নির্ণয় করা।
(ঘ) ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভ সনাক্ত করা।
(ঙ) নিরাপদ প্রসব বাড়ীতে সম্ভব হবে না, হাসপাতালে হবে, তা স্থির করা।
(চ) গর্ভবতী মা গর্ভকালীন সময়ে যেন নিজের যত্ন নিতে পারেন, আসন্ন প্রসবের জন্য নিজেকে তৈরী রাখতে পারেন এবং নবজাত শিশুর যত্ন নিতে পারেন সে সম্পর্কে উপদেশ ও শিক্ষা দেওয়া।
(ছ) নিরাপদ প্রসব বাড়ীতে না হাসপাতালে সম্ভব হবে তা নির্বাচন করা।
(জ) মা যেন একটি সুস্থ শিশু জন্ম দেন তা নিশ্চিত করা।

সম্ভাব্য প্রসবের তারিখ (Expected Date of Delivery-EDD)

গর্ভাবস্থা ২৮০ দিন বা ৪০ সপ্তাহ ধরা হয়। গর্ভবতী মহিলা যদি শেষ মাসিকের প্রথম দিন (LMP) বলতে পারেন তবে সে তারিখ হতে ৯ মাস গণনা করে তার সাথে ৭ দিন যোগ দিলে যে তারিখ বের হবে সে তারিখটি সম্ভাব্য প্রসবের তারিখ হিসাবে গণনা করা হয়।

বাড়িতে যেভাবে গর্ভবতীর যত্ন নেয়া প্রয়োজন

  • গর্ভবতী মাকে সবসময় হাসি খুশি রাখতে হবে।
  • গর্ভবতী মাকে বেশী বেশী সুষম খাবার দিতে হবে।
  • বেশী করে পানি খেতে বলতে হবে।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে বলতে হবে।
  • উপদেশের মাধ্যমে গর্ভবতী মাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখতে হবে।
  • গর্ভবতী মা অসু্‌স্থ হলে দ্রুত ডাক্তার বা স্বাস্থ্য কর্মীর পরামর্শ নিতে হবে।

ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভ

নিম্নলিখিত ইতিহাস থাকলে বুঝতে হবে যে গর্ভবতী মহিলার গর্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং এতে মায়ের মৃত্যুও ঘটতে পারে-
(১) ২০ বছরের কম সয়স অথবা ৩৫ বছর বা তার বেশী বয়স হলে।
(২) সন্তান জন্মসংখ্যা: শূন্য অথবা পাঁচ বা তার বেশী
(৩) পূর্ববর্তী সন্তান জন্মের ব্যবধান: ২ বৎসরের কম সময়
(৪) উচ্চতা: ১৪৫ সেন্টিমিটারের কম (৪ ফুট ১০ ইঞ্চি)
(৫) অতীত গর্ভকালীন ইতিহাস
(৬) রক্তপাত (প্রসবপূর্ব অথবা প্রসবোত্তর)
(৭) প্রসব বেদনা দীর্ঘ হলে (২৪ ঘন্টার বেশী সময় ধরে প্রসব বেদনা দেখা দিলে)
(৮) বাধাপ্রাপ্ত প্রসব (যেখানে বিশেষ প্রসব সহযোগিতা বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়েছে)
(৯) পূর্বে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব করানো হয়ে থাকলে।
(১০) জরায়ুর ভিতর গর্ভফুল থেকে যাওয়া।
(১১) মৃত সন্তান প্রসব করা।
(১২) ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নবজাতক মারা যাওয়া
(১৩) পা বা সমস্ত শরীর বেশী রকম ফোলা
(১৪) খিচুনীসহ বার বার অজ্ঞান হওয়া
(১৫) অতীতে প্রসবোত্তর ফিসটুলা রিপেয়ার (ভিভিএফ বা আরভিএফ)
(১৬) জমজ সন্তান
(১৭) ভ্রুনের অস্বাভাবিক অবস্থান
বিঃ দ্রঃ গর্ভবতী হওয়ার আগে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী মহিলা সনাক্ত করা যায়।

জটিল গর্ভ

বর্তমান গর্ভে নিম্নলিখিত জটিলতা থাকলে গর্ভবতী মহিলার মৃত্যু ঘটতে পারেঃ
  • রক্ত স্বল্পতাঃ মধ্যম বা অত্যাধিক (চোখের পাতার নীচে ভীষন রকম ফ্যাকাশে হওয়া, শ্বাস কষ্টসহ বা শ্বাস কষ্ট ছাড়া)।
  • মধ্যম/অত্যাধিকভাবে পা ফোলা, যেখানে চাপ দিলে খুব বেশী বসে যাওয়া অথবা সমস্ত শরীর ফোলা।
  • গর্ভকালীন যে কোন সময়ে রক্তস্রাব হওয়া।
  • যে কোন কারণে শ্বাস কষ্ট হওয়া।
  • পেটের আকার অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া।
  • ভ্রুনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়া।
  • একটি প্রিমিয়াম/মূল্যবান গর্ভ।
  • ১৪০/৯০ মিঃমিঃ পারদ বা তার চেয়ে বেশী রক্তচাপ এবং প্রসাবে স্বল্পমাত্রার চেয়ে বেশী এ্যালবুমিন।
বিঃ দ্রঃ উপরোক্ত জটিলতা থাকলে/দেখাদিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতাল/ক্লিনিকে নিয়ে যেতে হবে।

ঝুঁকিপূর্ণ মায়ের প্রতি উপদেশ

ঝুঁকিপূর্ণ মা উপদেশ
বয়স ২০ বৎসর এর নীচে ১. হাত পা ফুলে গেলে সঙ্গে সঙ্গে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা বা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। খিচুনী হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
২. গর্ভস্থ শিশু বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাছাড়া অল্প বয়সে মায়ের শরীর ও বৃদ্ধি পাচ্ছে সে জন্য খাবার চাহিদা অনেক বেশী। প্রত্যেক বেলায় মাকে অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে।
৩. মায়ের শরীর সম্পূর্ণ গঠন হয়নি বলে বস্তিদেশ ছোট হতে পারে। প্রসবের সময় বাচ্চা আটকে যেতে পারে। কাজেই হাসপাতালের কাছাকাছি যদি গর্ভবতীর কোন নিকটতম আত্মীয়স্বজন থাকে সেখানেই প্রসবের ব্যবস্থা করা ভাল। প্রসবের ব্যথা শুরু হয়ে ১২ ঘন্টার মধ্যে যদি বাচ্চা প্রসাব না হয় তাহলে হাসপাতালে যেতে হবে।
বয়স ৩৫ এর উর্দ্ধে ১. গর্ভপাত হবার সম্ভাবনা বেশী। মা যদি গর্ভস্থ শিশু রাখতে না চায় তাহলে UHFWC - তে রেফার করবেন এবং পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিন।
২. রক্তস্বল্পতার কারণে হৃদরোগ বেশী হতে পারে। প্রচুর পরিমাণে লৌহযুক্ত খাবার (সবুজ শাক- সবজি, ডাল, ডিম, মাংস) মাকে খেতে বলুন। হাসপাতালে প্রসবের পরামর্শ দিন।
পেটের আকার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়া পানির জন্য যদি বৃদ্ধি হয় তাহরে প্রসবের সময়ে নাভিরজ্জু স্থানচ্যুতি হতে পারে। যমজ সন্তানের কারণে যদি পেট অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় তাহলে প্রসবের সময় অসুবিধা দেখা দিতে পারে। এই দুটি কারণে হাসপাতালে প্রসবের ব্যবস্থা করতে হবে।
ভ্রণের অস্বাভাবিক অবস্থান ৩২ সপ্তাহের আগে কিছু করার দরকার নেই।
৩২ সপ্তাহের পরে হাসপাতালে প্রসব করানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
একটি মূল্যবান গর্ভ রীতিমত পরীক্ষা করতে বলুন যেন অস্বাভাবিক কিছু দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে আমাদের কি করণীয়

গর্ভবতীর করনীয়
  • গর্ভবস্থায় কমপক্ষে ৩ বার শারীরিক পরীক্ষা করান; ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আরো বেশীবার পরীক্ষা করান।
  • গর্ভের ৭ থেকে ৯ মাস ঘন ঘন শারিরীক পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরী।
  • সাধ্যমত সবুজ শাক-সবজি, হলুদ ফল-মূল, দুধ, ডাল, ছোট মাছ, ডিম, মাংস খান; নিয়মিত যা খান তার চেয়ে একটু বেশী খাবেন।
  • গর্ভধারণের পর টি টি ইনজেকশন নিন।
  • আপনার এলাকার স্বাস্থ্যকর্মীর নিকট গর্ত ও প্রসব বিষয়ে বিস্তারিত পরামর্শ নিন।
  • ভারি কিছু তোলা ও ভারি কাজ করা থেকে বিরত থাকুন
  • দিনের বেলা কমপক্ষে ১ ঘন্টা শুয়ে বিশ্রাম নিন।
  • গর্ভ ও প্রসবের সময় কোন জটিলতা দেখা দিলে তাড়াতাড়ি কাছের কোন হাসপাতালে যান।
গর্ভবতীর পরিবারের করণীয়
  • গর্ভবতীকে বেশী করে সুষম খাবার দিন; ভারি কাজ করতে বারণ করুন এবং দিনে কমপক্ষে ১ ঘন্টা শুয়ে বিশ্রাম নিতে বলুন।
  • কোথায় এবং কার কাছে প্রসব করাবেন যোগাযোগ করে তা ঠিক করে রাখুন।
  • গর্তের ও প্রসবকালীন জটিল অবস্থা জেনে নিন।
  • গর্ভবতী মায়ের যে কোন সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে তাই আগে থেকেই দ্রুত হাসপাতালে নেবার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • গর্ভের ও প্রসবের জটিল অবস্থা মোকাবেলার জন্য শুরু থেকে সঞ্চয় তহবিল গড়ে তুলুন।
  • প্রসবের প্রয়োজনে অথবা জটিল অবস্থার মোকাবেলায় যানবাহনের আগাম ব্যবস্থা নিন।।
  • প্রসবের পরে বাচ্চাকে শালদুধ দিন; ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা নিন।
  • প্রসবের পর ৬ সপ্তাহের মধ্যে প্রসূতি ও শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করান; পরিবার পরিকল্পনার পরামর্শ নিতে বলুন ও শিশুকে টিকা দিন।
  • গর্ভবতীর পরিবারের অগ্রণী ভূমিকা মা ও শিশু মৃত্যু কমাতে সহায়তা করবে।
প্রতিবেশীর করণীয়
  • আপনার এলাকায় মা ও শিশু মৃত্যু কমাতে জনমত গড়ে তোলার জন্য নিচের উদ্যোগ গ্রহণ করুন-
  • গর্ভবতী মাকে হাসপাতালে পরীক্ষার পরামর্শ দিন।
  • প্রয়োজনীয় খাদ্য, বিশ্রাম ও হালকা কাজ করতে বলুন।
  • হাসপাতালে প্রসবের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করুন।
  • প্রসবের প্রয়োজনে যানবাহনের স্থায়ী ব্যবস্থা নিন।
  • গর্ভজনিত জটিলতা দেখা দিলে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করুন।
  • রক্তদানকারীর তালিকা তৈরী করুন যাতে প্রয়োজনে রক্ত পেতে দেরি না হয়।
  • সকল গর্ভবতীর জীবন রক্ষায় সবসময় জনগণকে পরামর্শ দিন।

গর্ভবতী ও প্রসূতি সেবার তথ্য

সকলের জেনে রাখা ভাল-
  • গর্ভাবস্থায় কমপক্ষে ৪ বার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার / হাসপাতাল / ক্লিনিকে রক্তচাপ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।
  • গর্ভবতীকে বেশি করে সুষম খাবার খেতে হবে।
  • গর্ভবতীকে দিনের বেলায় কমপক্ষে ১ ঘন্টা শুয়ে বিশ্রাম নিতে হবে।
  • গর্ভের সময় ভারি কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • সময়মত ৫ ডোজ টিটি ইজেকশন নিতে হবে।

প্রসব পরিকল্পনা

  • কোথায় এবং কাকে দিয়ে ডেলিভারী করাবেন তা গর্ভাবস্থাই ঠিক করে রাখতে হবে; তবে হাসাপাতালে ডেলিভারী করানো ভাল।
  • বাড়িতে বাচ্চা হবার সময় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ সেবাদানকারী (ডাক্তার, নার্স, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দাই) ডাকতে হবে, জটিল অবস্থা দেখা দিলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে/ ক্লিনিকে নিতে হবে।
  • প্রসবকালীন খরচের জন্য গর্ভাধারণ করার পর থেকেই নিয়মিত টাকা সঞ্চয় করে রাখতে হবে।
  • প্রসবকালীন ও প্রসবের সময় যে কোন জটিলতা মোকাবেলা করার জন্য আগে থেকেই যানবাহন ও রক্তের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • রক্তদানকারীর তালিকা তৈরী করতে হবে যাতে প্রয়োজনে রক্ত পেতে দেরি না হয়। জটিল অবস্থায় হাসপাতালে যাবার সময় ২/৩ জন রক্তদানকারীকে সাথে নিতে হবে।
  • গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় অথবা প্রসবের পর (৬ সপ্তাহ পর্যন্ত) জটিল অবস্থা দেখা দিলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে/ ক্লিনিকে যেতে হবে।
  • জন্মের পরপরই বাচ্চাকে শালদুধ দিতে হবে। ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াতে হবে: ৬ সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে/ক্লিনিকে যেতে হবে; উপযুক্ত পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি বেছে নিতে হবে।
  • শিশুকে সময়মত টিকা দিতে হবে।
তথ্যসুত্রঃ (পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক) সহায়িকা

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url