কূটনীতি কাকে বলে-কূটনীতি ও বিদেশ নীতির মধ্যে সম্পর্ক
সাধারণত কূটনীতি হলো আপোসের কৌশল বা উপায়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক রাজনীতি যে জটিল
পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ লাভের অন্যতম উপায়
হলো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা।
কারণ বর্তমানে যে জাতীয় রাষ্ট্রের জোয়ার বইছে সে জাতীয় রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের
সীমারেখা বজায় রেখে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা এক
দুঃসাধ্য ব্যাপার।
সুচিপত্রঃ-কূটনীতি কাকে বলে-কূটনীতি ও বিদেশ নীতির মধ্যে সম্পর্ক
ভুমিকা
একইভাবে বর্তমান জগতের নৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থায় আন্তর্জাতিক শান্তি ও
নিরাপত্তা রক্ষার জন্য জাতীয়তাভিত্তিক সার্বভৌম রাষ্ট্রকে বিশ্ব রাষ্ট্রে
রূপান্তর করাও কখনো সম্ভব নয়। তবুও মানব সমাজের অস্তিত্বের জন্য বিশ্ব রাষ্ট্রের
অস্তিত্ব আবশ্যক। আর বিশ্ব রাষ্ট্র সৃষ্টির জন্য একটি যথোপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে
সর্বপ্রথম প্রয়োজন সব রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের প্রশমন, যে দ্বন্দ্বগুলো বিশ্বকে
বিভিন্নভাগে বিভক্ত করে রেখেছে। স্থায়ী নিরাপত্তার জন্য পূর্বশর্ত স্থাপনের এ
পদ্ধতিটিকে আপোসের মাধ্যমে শান্তি স্থাপন বলে অভিহিত করা যায়। আর আপোসের এই
কৌশলকেই বলা হয় কূটনীতি। তবে কূটনীতি এবং বৈদেশিকনীতির মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত
হয়। কূটনীতি হচ্ছে বৈদেশিকনীতি বা পররাষ্ট্রনীতিকে কার্যে প্রয়োগ করার পদ্ধতি।
কূটনীতি কাকে বলে
কূটনীতির সংজ্ঞা: 'কূটনীতি'-এর ইংরেজি পরিভাষা হচ্ছে 'Diplomacy'। 'Diplomacy'
শব্দটি গ্রিক শব্দ 'Diploun' থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ ভাঁজ করা। সভ্যতার বিবর্তনে
'Diploun' 'Diplomacy'-তে পরিণত হলেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী এবং
কূটনীতিবিদগণ কূটনীতির সঠিক ব্যাখ্যা প্রদানে একমত হতে পারেননি। তাই দেখা যাচ্ছে
যে, 'কূটনীতি' শব্দটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত কূটনীতি হলো
অত্যন্ত নিপুণতা ও দক্ষতার সাথে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনা করা। আবার কেউ
একাধিক রাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা ও যোগাযোগকে কূটনীতি বলেন।
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত
ব্যাপারের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় সে প্রক্রিয়াকে কূটনীতি বলা হয়। কিন্তু Sir Emest
Satow-এর মতে, 'কূটনীতি হচ্ছে স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের সরকারের মধ্যে সরকারি
পর্যায়ে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কৌশল ও বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ।' অধ্যাপক নিকলসনের মতে,
'কূটনীতি হচ্ছে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পেশাদার ও অভিজ্ঞ কর্মচারী দ্বারা বৈদেশিক
নীতির প্রয়োগ।'
বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সমুহ
পড়ুন
অধ্যাপক প্যাডেলফোর্ড ও অধ্যাপক লিঙ্কন বলেন, 'The process of representation and
negotiation by which states customarily deal with one another in time of
peace. অর্থাৎ, শান্তির সময়ে প্রতিনিধিত্ব এবং আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রের
পরস্পরের সম্পর্ক রক্ষা করার পদ্ধতিই হচ্ছে কূটনীতি। The Oxford English
Dictionary-তে কূটনীতির একটি সংক্ষিপ্ত অথচ কার্যকর সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, 'Diplomacy is the management of international relations by
regulations.' অর্থাৎ, কূটনীতি হচ্ছে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
পরিচালনা।
লার্কে ও সৈয়দের সংজ্ঞায় কূটনীতি সম্পর্কে একটু ভিন্ন ধারণা পাওয়া যায়। তারা
বলেছেন, “Diplomacy, considered as a technique of state action, is essentially
a process whereby communications from one government go directly into the
decision making apparatus of another.” অন্যদিকে ফ্রাঙ্কেল বলেন, 'বিদেশনীতি
নির্ধারণ ও কার্যকর করাকে কূটনীতি বলে।' অর্থাৎ বিদেশনীতি বাস্তবায়নের মধ্যে
কূটনীতি সীমাবদ্ধ নয়। অত্যন্ত বাস্তবোচিত দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে হাস ও হুইটিং কূটনীতির
ধারণা ব্যাখ্যা করেছেন। তাদের মতে, বিভিন্ন রাষ্ট্র কিছু সুযোগ-সুবিধা আদায় ও
জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য পরস্পরের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে এবং এক সময় এ
চাপ ক্রমশ পুঞ্জিভূত হতে থাকে।
এ পুঞ্জিভূত চাপকেই কূটনীতি বলে।' উল্লেখ্য, দাবি-দাওয়া আদায় করতে গিয়ে উভয় পক্ষ
আলোচনায় বসে এবং প্রত্যেককে নিজ নিজ কিছু দাবি ত্যাগ করতে হয়। আর চাপ সৃষ্টির
মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনই কূটনীতির কাজ। অতএব কূটনীতি শুধু সংবাদ বা তথ্য
আদান-প্রদানের প্রক্রিয়া নয়, বরং আলাপ-আলোচনা এর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাই হার্টম্যান
বোঝাপড়াকে কূটনীতির পর্যায়ভুক্ত করেছেন। হার্টম্যান বলেন, The art of diplomacy
is the art of compromise: To know how and when to compromise is the allmarks
of the accomplished negotiator'. তবে এ কথা সত্য যে, আলাপ-আলোচনার উৎকর্ষের ওপর
কূটনীতির সাফল্য নির্ভর করে। কূটনৈতিক কৌশলে পারদর্শী না হলে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে
ঈপ্সিত লক্ষ্যে উপস্থিত হওয়া যায় না।
বাংলাদেশের সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ধারা-বাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধনী
পড়ুন
পরিশেষে আমরা বলতে পারি, রাষ্ট্রের মতাদর্শগত লক্ষ্যসীমায় উত্তরণের প্রয়াসে যে
বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করা হয় তার সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রের
মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনই হচ্ছে কূটনীতির সারকথা।
কূটনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি
বৈদেশিক সম্পর্কের একেবারে কেন্দ্রবিন্দু হলো কূটনীতি। পররাষ্ট্রনীতির
সংক্ষিপ্ততম ভাষ্য হলো, 'It is the substance of foreign relations, অন্যদিকে
Diplomacy proper is the process by which policy is carried out. তাই
পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ ও তার বাস্তব রূপায়ণে কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
দীর্ঘকাল ধরে স্বীকৃত হয়ে আসছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার বিকাশ এবং মতাদর্শের
প্রভাব কূটনীতিবিদদের ক্ষমতাকে সংকুচিত করে দিয়েছে বলে অনেক সমালোচক মন্তব্য
প্রকাশ করলেও পররাষ্ট্রনীতির আঙ্গিনা থেকে এখন পর্যন্ত অপসারিত হয়নি।
তবে, আন্তর্জাতিক জীবনে কূটনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও চলমান প্রক্রিয়া।
আন্তঃরাষ্ট্রীয় পরিচালন প্রত্রিয়ায় কূটনীতিকে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়।
তাই কূটনীতির ভূমিকা হ্রাস পাচ্ছে বলে যতই সমালোচনামূলক কথা বলা হোক না কেন
পররাষ্ট্রনীতিতে কূটনীতি কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে।
পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতির সম্পর্ক
প্রথমতঃ পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নে বিভিন্ন রকম সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ
করে; যেমন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, আইনসভা ও জনমত ইত্যাদি এবং এগুলোর
নির্দিষ্ট ভূমিকাও রয়েছে। কিন্তু প্রণীত এ নীতিকে কার্যকর করার জন্য যে অভিজ্ঞ,
দক্ষ ও নিপুণ ব্যক্তি আবশ্যক তাকেই কূটনীতিবিদ বলে। সুতরাং নীতি নির্ধারণ ও নীতির
বাস্তবায়ন দুটোই কূটনীতির সাথে অবিচ্ছিন্নভাবে জড়িত। এজন্য পামার উপারকিন্স
বলেছেন, Diplomacy provides the machinery and the personnel by which foreign
policy is executed. One is substance; the other is method.
দ্বিতীয়তঃ প্রতিটি দেশই জাতীয় স্বার্থের দিকে নজর রেখে পররাষ্ট্রনীতি
প্রস্তুত করে। তবে এক্ষেত্রে মতাদর্শেরও এক ধরনের প্রভাব থাকে। সুতরাং
পররাষ্ট্রনীতি হলো একটি লক্ষ্য। আর লক্ষ্যে পৌঁছার অনেক ধরনের পথ রয়েছে। কূটনীতি
হলো ঐসব পথের একটিমাত্র পথ। তবে গুরুত্বের দিক থেকে বিচার করলে কূটনীতি সেসব
পথগুলোর শীর্ষে অবস্থান করে। মত বিনিময়, আলাপ-আলোচনা এবং ভিন্নমুখী স্বার্থের
মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে কূটনীতি বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে একটি সুন্দর যোগসূত্র
স্থাপন করে।
তৃতীয়তঃ পররাষ্ট্রনীতির সংকট মোকাবিলায় কূটনীতির বিশেষ ভূমিকা লক্ষণীয়।
তবে এক্ষেত্রে দু' ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেলেও মূলত সংকটকালীন সময়েও কূটনীতি
পররাষ্ট্রনীতির পরিপূরক হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তবে এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক
সম্পর্কের তাত্ত্বিকদের মধ্যে দু' ধরনের বক্তব্য লক্ষ্য করা যায়। নিকলসন তার 'The
Congress of Vienna' গ্রন্থে বলেছেন, 'শান্তির সময় কূটনীতি নানাবিধ পথ অবলম্বন
করে উদ্দেশ্য অর্জনে লিপ্ত থাকে।' এ কথাটির অর্থ দাঁড়ায় কেবল সৌহার্দ্যপূর্ণ
পরিবেশেই কূটনীতি সমস্যা সমাধানে রত থাকে।
বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস-বাংলাদেশের সংবিধানের ইতিহাস
পড়ুন
অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বা সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে কূটনীতি কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।
তাই নিকলসনের এ বক্তব্যের সাথে অনেকে দ্বিমত পোষণ করেছেন। এক্ষেত্রে পামার ও
পারকিন্সের অভিমত উল্লেখযোগ্য। তারা বলেন, 'It is misleading to suggest that
diplomacy ceases to function when major international crises arise, especially
if they lead war. সুতরাং, যেহেতু জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা রক্ষা করা যে কোনো
দেশের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হয় তাহলে যুদ্ধের সময় যখন জাতীয়
নিরাপত্তা সংকটের মুখোমুখি ভূমিকা পালন করতে হয়। উল্লেখ্য, শান্তি ও যুদ্ধের সময়
কূটনীতিবিদদের ভূমিকা একই রকম থাকে না।
চতুর্থতঃ কূটনীতি পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে থেকে কাজ করে। অর্থাৎ কূটনীতি
কোনো স্বাধীন সংস্থা নয়। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা
প্রধানমন্ত্রী বা স্বয়ং রাষ্ট্রপ্রধানের দ্বারা পরিচালিত হয় তা স্বাধীন। অন্যদিকে
কূটনীতি একটি পরাধীন সংস্থা যা নিজের ইচ্ছায় চলতে পারে না।
পঞ্চমত, পররাষ্ট্রনীতিতে কূটনীতির ভূমিকা মুখ্য নয়। এজন্য বিভিন্ন সংকটকালীন
সময়ে কূটনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ থাকতে পারে। কিন্তু পররাষ্ট্রনীতির কাজ কখনো স্থগিত
থাকে না।
অ্যাম্বাসেডর ও হাইকমিশনার
➤ জাতিসংঘভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের সর্বোচ্চ কূটনীতিকদের অ্যাম্বাসেডর বলে।
➤ কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহে অন্য কমনওয়েলথভুক্ত দেশের সর্বোচ্চ কূটনীতিককে
হাইকমিশনার বলে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিভাষা
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অনেক সময় এমন সকল পরিভাষা ব্যবহৃত হয় যা
অনেক সময় আমাদের পক্ষে বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। কূপনীতি বা রাজনীতি বুঝতে হলো
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিভাষা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা থাকা প্রয়োজন। নিম্নে
বেশ কিছু কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিভাষার ব্যাখ্যা দেওয়া হলো।
বাফার স্টেটা
বাফার স্টেট হচ্ছে এমন সব দেশ, যেসব দেশ আয়তনে ছোট, কিন্তু দুটি দেশের মাঝে
বিদ্যমান এবং দুই দেশের নিরপেক্ষ সীমা নির্দেশ করে। বেলজিয়াম
(জার্মানি-ফ্রান্সের মাঝে), নেপাল ও ভুটান (ভারত-চীনের মাঝে) এবং মঙ্গোলিয়া
(চীন-রাশিয়ার মাঝে) বাফার স্টেটের উদাহরণ।
কল্যাণমূলক রাষ্ট্র
যে রাষ্ট্র জনগণের দৈনন্দিন ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করে,
তাকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলে। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র সকলের জন্য সমান সুযোগ,
সম্পদের সুষম বন্টন এবং জনগণের অংশগ্রহণের নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।
উদাহরণস্বরূপ-যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সুইডেন, ইতালি, নরওয়ে
ইত্যাদি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম বেভারিজকে কল্যাণমূলক
রাষ্ট্রের জনক বলা হয়।
জিরোসাম গেম
Zero Sum Game হচ্ছে বিখ্যাত 'গেম থিওরি'র একটা অংশ। এটা দিয়ে বোঝায়। যেকোনো
ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক পক্ষ কোনো নির্দিষ্ট জিনিস পেতে চাইলে, এক পক্ষ যে
পরিমাণ সম্পদ অর্জন করবে, অন্য পক্ষ ঠিক সে পরিমাণ সম্পদ হারাবে। এতে নিট
ফলাফল শূন্য হবে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এটি 'বাস্তববাদ' তত্ত্বকে সমর্থন
করে।
পার্সোনা নন গ্রাটা
‘Persona non grata’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ অবাঞ্চিত বা অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি।
কূটনীতিক পরিভাষায়- কোন দেশ তার দেশে অন্য কোনো দেশের কোন কূটনীতিককে যে কোন
সময় কোন কারণ ছাড়াই অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে পারে। এমন কূটনীতিককে তখন Persona
non grata বলে।
আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিভাষা
➤ তৃতীয় বিশ্বঃ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তৃতীয় বিশ্বের দেশ বলা
হয়।
➤ সাম্যবাদঃ সাম্যবাদ হল শ্রেণীহীন সমাজ ব্যবস্থা যেখানে ব্যক্তির
জীবন ও কর্মধারা রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়।
➤ সাম্রাজ্যবাদঃ অপর রাষ্ট্র দখল করে শক্তি বৃদ্ধি ও সম্পদ বৃদ্ধি
করার নাম সাম্রাজ্যবাদ
➤ টাস্ক ফোর্সঃ কোন দেশের স্থল, বিমান ও নৌবাহিনীর সম্মিলিত
সৈন্যদল।
➤ দ্বৈরতন্ত্রঃ সামরিক শাসক কর্তৃক পরিচালিত শাসন ব্যবস্থাই
স্বৈরতন্ত্র।
➤ অধ্যাদেশঃ জরুরি অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য রাষ্ট্রের প্রধান
কর্তৃক জারিকৃত আদেশ বা নির্দেশ।
➤ ইমপিচমেন্টঃ (অভিশংসন) রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন অপরাধের জন্য
রাষ্ট্র প্রধানের বিচার কার্য পরিচালনার জন্য গঠিত বিশেষ বিচার বিভাগ।
➤ ফ্যাসিজম (ফ্যাসিবাদ): “জনগণের জন্য রাষ্ট্র নয়, রাষ্ট্রের জন্যই
জনগণ” এর মূলকথা।
➤ মার্কসবাদঃ কার্ল মার্কস এর মতবাদ ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা
ভেঙ্গে শ্রেণীহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা।
➤ প্রোটোকলঃ আন্তর্জাতিক সভা সমিতির কার্যবিবরণী সাধারণভাবে
আন্তর্জাতিক দলিলপত্র বুঝায়।
➤ ফিফথ কলাম (পঞ্চম বাহিনী): যে জনতা গোপনে নিজ সরকারের বিরুদ্ধে
কাজ করে এবং শত্রুকে সাহায্য করে।
➤ ফ্লোর ক্রসিং/ক্রস ভোটিংঃ নিজ দলের পক্ষে ভোট না দিয়ে বিপক্ষ দলকে
ভোট দেয়া।
➤ ডোমিনিয়ানঃ ব্রিটিশ শাসিত উপনিবেশ যেগুলো স্ব-শাসন করার মর্যাদা
অর্জন করেছে সেগুলোই ডোমিনিয়ান দেশ।
➤ ব্লাক স্যাটঃ ইটালির সাবেক একনায়ক মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট দল।
➤ আমলাতন্ত্রঃ আমলাদের দ্বারা পরিচালিত সরকার ব্যবস্থা যেখানে
সরকারী কর্মচারীরা জনমতকে অগ্রাহ্য করে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। এর
প্রবক্তা ম্যাক্স ওয়েবার
➤ উগ্র স্বদেশিকতাঃ উগ্র স্বদেশিকতার বশবর্তী হয়ে মানুষ যখন
অন্যান্য অঞ্চল/দেশের নাগরিকগণকে ঘৃণা করে সেটাই শোবিনিজম।
➤ কোল্ড ওয়ার বা স্নায়ু যুদ্ধঃ দু'টি দেশের মধ্যে আপাতদৃষ্টে
শান্তি বিরাজ করলেও বাস্তবে দু' দেশের ভিন্নমুখী অবস্থান গ্রহণ করা।
➤ স্যাটেলাইট স্টেটঃ প্রতিবেশী বৃহৎ এবং শক্তিশালী রাষ্ট্রে
রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক প্রভাবাধীন অপেক্ষাকৃত দূর্বল রাষ্ট্র।
➤ স্ট্র ভোটঃ কোন বিষয়ে জনমত যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তি বা
সংস্থা কর্তৃক বেসরকারীভাবে গৃহীত ভোট।
উপসংহার
পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। তবে
পররাষ্ট্র দপ্তর যদি নীতি প্রণয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে কূটনীতি সে নীতি
কার্যকর করার সাথে সংশ্লিষ্ট। কূটনীতিবিদগণ পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীন কাজ
করেন। প্রকৃতপক্ষে পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ লক্ষ্যে পৌঁছানো
নীতি। আর কূটনীতি হচ্ছে পেশাদার ও অভিজ্ঞ কর্মচারী দ্বারা সে নীতির প্রয়োগ।
তাই অধ্যাপক নিকলসন লিখেছেন, “Diplomacy is not an end but a means; not a
purpose but a method. It seks. by the use of reason, conciliation and
the exchange of interests, to prevent major conflicts arising between
sovereign states. It is the agency through which foreign policy seeks to
attain its purpose by agreement rather than by war.” তবে বর্তমানে
কূটনীতি বিদেশে দেশের স্বার্থ রক্ষা করার আবশ্যকীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত
হয়েছে।

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url