বিভিন্ন পর্বের প্রাণীদের আবাসস্থল ও স্বভাব
প্রাণীজগৎকে বিস্তৃতভাবে দশটি প্রধান ফাইলায় বিভক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি ফাইলা
অনন্য কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য, জীবনযাত্রার ধরণ এবং আবাসস্থল দ্বারা পৃথক করা
হয়েছে। মাইক্রোস্কোপিক প্রোটোজোয়া থেকে শুরু করে জটিল মেরুদণ্ডী প্রাণী
পর্যন্ত, এই দলগুলো পৃথিবীতে প্রাণী জীবনের অসাধারণ অভিযোজনযোগ্যতা এবং
বৈচিত্র্যকে চিত্রিত করে। এই পোস্টে প্রতিটি ফাইলামের প্রাণীদের আবাসস্থল ও
স্বভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সূচিপত্রঃ- বিভিন্ন পর্বের প্রাণীদের আবাসস্থল ও স্বভাব
- প্রাথমিক কথা
- বিভিন্ন পর্বের প্রাণীদের আবাসস্থল ও স্বভাব
- মূলকথা
প্রাথমিক কথা
পৃথিবীতে জীবন হলো বৈচিত্র্যের এক বিশাল সিম্ফনি। জলে ভেসে বেড়ানো ক্ষুদ্র,
অদৃশ্য প্রাণী থেকে শুরু করে ভূমিতে বিচরণকারী শক্তিশালী প্রাণী পর্যন্ত।
প্রাণীজগতের প্রতিটি পর্ব তার বেঁচে থাকার এবং অভিযোজনের নিজস্ব গল্প বলে।
তাদের এই বৈচিত্রময় স্বভাব প্রমান করে যে, প্রকৃতি কীভাবে প্রতিটি প্রাণীকে
পৃথিবীতে তার বাসস্থানের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আশ্চর্যজনকভাবে গঠন করে।
বিভিন্ন পর্বের প্রাণীদের আবাসস্থল ও স্বভাব
সমুদ্রের গভীরতা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ পর্যন্ত, বিভিন্ন পর্বের
প্রাণী পৃথিবীর প্রতিটি কোণকে তাদের আবাসস্থল করে তুলেছে। তাদের বৈচিত্র্যময়
অভ্যাস এবং আবাসস্থল জীবনে বেঁচে থাকার এবং সমৃদ্ধির জন্য কীভাবে বিবর্তিত
হয়েছে তা প্রকাশ করে। সমগ্র প্রাণিজগৎ মোট দশটি পর্বে বিভক্ত। নিম্নে
প্রত্যেকটি পর্বের প্রাণীদের আবাসস্থল ও স্বভাব এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হল।
(১) পর্ব-প্রোটোজোয়া বা আদ্যপাণী (Protozoa):
স্বভাব ও বাসস্থানঃ Protozon পর্বের প্রাণীদের পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায়। এদের কিছু কিছু প্রাণী মুক্তজীবী তবে কোন কোন প্রাণী দলবদ্ধভাবে মাটিতে বাস করে। আবার বহু প্রাণী স্বাদুপানিতে অথবা লবণাক্ত পানিতে বসবাস করে। এ পর্বের বহু সদস্য পরজীবী হিসেবে অন্য কোন উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহে বহিঃ বা অন্তঃপরজীবী হিসেবে বাস করে। যেমন- Amoeba Proteus (অ্যামিবা) স্বাধীনজীবী স্বাদুপানির প্রাণী। Plasmodium vivax (ম্যালেরিয়া জীবাণু) পরজীবী প্রাণী।চিত্র: অ্যামিবা
(২) পর্ব -পরিফেরা ছিদ্রযুক্ত প্রাণী (Porifera):
স্বভাব ও বাসস্থানঃ Porifera পর্বের
প্রাণীরা সাধারণভাবে স্পঞ্জ নামে পরিচিত। এরা বিভিন্ন আকার, আকৃতি ও বর্ণের হয়ে
থাকে। এদেরকে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায়। পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় এরা পানির
তলদেশে অবস্থানরত বা পানিতে ভাসমান কোন বস্তুর সংলগ্ন অবস্থায় থাকে। এরা
সাধারণত দলবদ্ধ অবস্থায় এবং পরস্পর একীভূত হয়ে অবিচ্ছেদ্যভাবে বসবাস করে। এদের
অধিকাংশ প্রজাতি সামুদ্রিক। তবে কিছু কিছু প্রজাতি কাঁকড়া জাতীয় প্রাণীর সাথে
মিথোজীবী হিসেবে বাস করে। যেমন- Scypha gelatinosum (সামুদ্রিক
স্পঞ্জ) লবণাক্ত পানিতে বাস করে। Spongilla fragilis (স্পঞ্জিলা
ফ্রাজিলিস) স্বাদুপানিতে বাস করে।
চিত্র: স্পঞ্জিলা(৩) পর্ব-সিলেন্টারাটা (Coelenterata):
স্বভাব ও বাসস্থানঃ সিলেন্টারাটা পর্বের বহু প্রজাতি পৃথিবীর প্রায় সকল
অঞ্চলের নালা, খাল, পুকুর, নদী, হ্রদ, ঝরণা ইত্যাদি স্বাদুপানির জলাশয়ে বাস
করে। তবে এদের অধিকাংশ প্রজাতি সামুদ্রিক। সাধারণত এবা পানিতে ভাসমান কাঠ, পাতা
বা অন্য কোনও কিছুর সঙ্গে লেগে থাকে বা মুক্ত ভাবে সাঁতার কাটে। বহু প্রজাতি
একক ভাবে এবং বহু প্রজাতি দলবদ্ধভাবে উপনিবেশ গঠন করে বাস করে। যেমন-
Hydra vulgaris (হাইড্রা) স্বাদুপানির প্রাণী,
Aurelia aurita (জেলীফিস) লোনাপানির প্রাণী।
চিত্র: হাইড্রা(৪) পর্ব-প্লাটিহেলমিনথেস (Platyhelminthes):
স্বভাব ও বাসস্থানঃ প্লাটিহেলমিনথেস পর্বের বহু প্রাণী প্রধানত বহিঃ বা
অন্তঃপরজীবী হিসেবে বাস করে। তবে কিছু কিছু প্রজাতি মুক্তজীবী প্রাণী হিসেবে
স্বাদুপানির নালা, ঝরণা ইত্যাদিতে এবং কিছু কিছু প্রজাতি লবণাক্ত পানিতে বাস
করে। আবার কোন কোন প্রাণী স্যাঁতসেঁতে ও ভেজা মাটিতে বাস করে। যেমন-
Taenia solium (ফিতা কৃমি) অন্তঃপরজীবী হিসেবে বাস করে।
চিত্র: যকৃতকৃমি(৫) পর্ব-নিমাথেলমিথেস ( Nemathelminthes):
স্বভাব ও বাসস্থানঃ নিমাথেলমিনথেস পর্বের প্রাণীরা অন্তঃপরজীবী হিসেবে
পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র বাস করে। এরা পোষকের অস্ত্র থেকে প্রধানত আংশিক
পরিপাককৃত খাদ্য গ্রহণ করে। এ পর্বের অনেক প্রাণী যুক্তভাবে বসবাস করে। প্রধানত
বাংলাদেশ, ভারত, কোরিয়া, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশে এদের প্রাদুর্ভাব বেশি। যেমন-
Ascaris lumbricoides (গোলকৃমি) অন্তঃপরজীবী হিসেবে বাস করে।
চিত্র: গোল কৃমি(৬) পর্ব-এনেলিডা (Annelida):
স্বভাব ও বাসস্থানঃ এনেলিডা পর্বের প্রাণীদের পৃথিবীর প্রায় সকল
নাতিশীতোষ্ণ ও ট্রপিক্যাল (ক্রান্তীয়) অঞ্চলে পাওয়া যায়। এদের স্বভাব, বাসস্থান
ও গঠন বৈচিত্র্যপূর্ণ। এ পর্বের বহু প্রজাতি স্বাদুপানিতে এবং বহু প্রজাতি
সমুদ্রে বাস করে। তবে কোন কোন প্রাণী স্যাঁতসেঁতে মাটিতে বাস করে। এদের মধ্যে
কিছু প্রাণী সমুদ্রের পাড়ে, কিছু অগভীর সমুদ্রের তলদেশে বাস করে। অপরপক্ষে কিছু
প্রজাতি পাথর বা মাটিতে গর্ত খুড়ে বসবাস করে। যেমন-
Pheretima posthuma (কেঁচো) স্যাঁতসেঁতে মাটিতে বাস করে।
Hirudo medicinalis (জোক) স্বাদু পানিতে বাস করে।
চিত্র: জোঁক(৭) পর্ব- আর্থোপোডা (Arthropoda):
স্বভাব ও বাসস্থানঃ আর্থোপোডা পর্বের প্রাণীদের পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র
পাওয়া যায়। সাধারণত এরা সকল ধরনের পরিবেশে বসবাস করার জন্য অভিযোজিত। এদের বহু
প্রজাতি বহিঃ ও অন্তঃপরজীবী হিসেবে বাস করে। ডাঙ্গায়, মিঠা পানিতে এবং সমুদ্রে
বসবাসকারী বহু প্রাণী রয়েছে। এদের অনেকেই বায়বীয় পরিবেশে উড়ে বেড়াতে সক্ষম।
যেমন- Periplaneta americana (আরশোলা) বায়বীয় পরিবেশে বাস করে।
চিত্র: আরশোলা(৮) পর্ব-মোলাস্কা (Mollusca):
স্বভাব ও বাসস্থানঃ মোলাস্কা পর্বের প্রাণীদের স্বভাব ও বাসস্থান
বৈচিত্র্যপূর্ণ। এরা পৃথিবীর প্রায় সকল পরিবেশে বাস করতে সক্ষম। এদের অধিকাংশ
প্রজাতি খোলক বিশিষ্ট। এরা সামুদ্রিক এবং সাগরের বিভিন্ন স্তরে বসবাস করে। বহু
প্রজাতির মোলাস্কা পাহাড়ী অঞ্চলে উপত্যকায়, বনে-জঙ্গলে অথবা সমতল ভূমিতে বাস
করে। আবার কিছু কিছু প্রজাতি অল্প স্রোত বিশিষ্ট জলাশয়ে এবং কিছু কিছু প্রজাতি
খরস্রোত ঝরণা বা নালায় বসবাস করে। যেমন- Pila globosa (আপেল
শামুক) জলাশয়ে বাস করে।
চিত্র: আপেল শামুক(৯) পর্ব-একাইনোডার্মাটা (Echinodermata):
স্বভাব ও বাসস্থানঃ একাইনোডার্মাটা পর্বের সকল প্রাণী সামুদ্রিক। এদেরকে
স্থলে বা মিঠা পানিতে পাওয়া যায় না। পৃথিবীর সকল সমুদ্রেই নানা প্রজাতির
একাইনোডার্মাটা বাস করে। এদের অধিকাংশ মুক্তজীবী। তবে পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় নিশ্চল
জীবনযাপন করে। যেমন- Asterias rubens (তারামাছ) সামুদ্রিক লোনা
পানিতে বাস করে।
চিত্র: তারামাছ(১০) পর্ব-কর্ডাটা (Chordata):
স্বভাব ও বাসস্থানঃ কর্ডাটা পর্বের প্রাণীরা পৃথিবীর সকল পরিবেশে বাস
করে। এদের বহু প্রজাতি ডাঙ্গায় বসবাস করে। জলচর কর্ডাটাদের মধ্যে বহু প্রজাতির
প্রাণী স্বাদুপানিতে অথবা সামুদ্রিক পানিতে বসবাস করে। বহু প্রজাতির কর্ডাটা
বৃক্ষবাসী, মরুবাসী, মেরুবাসী, গুহাবাসী বা খেচর জীবনযাপন করে। কর্ডাটা পর্বের
বহু প্রাণী বহিঃ পরজীবী হিসেবে অন্য প্রাণীর দেহ সংলগ্ন হয়ে জীবন ধারণ করে।
যেমন- Catla catla (কাতল মাছ) জলচর প্রাণী,
Bufo melanostictus (কুনোব্যাঙ) উভচর প্রাণী,
Homo sapiens (মানুষ) স্থলচর প্রাণী।
চিত্র: কুনোব্যাঙমূলকথা
প্রাণী জগৎ নিয়ে অধ্যয়ন আমাদের জীবন্ত প্রাণীর বিবর্তনীয় জটিলতা এবং পরিবেশগত
তাৎপর্য বুঝতে সাহায্য করে। প্রতিটি ফাইলা প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে অনন্য
ভুমিকা পালন করে। আমাদের গ্রহে জীবনের স্থিতিশীলতা এবং স্থায়িত্বের জন্য
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।
Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url