ওশেনিয়া মহাদেশ কি-ওশেনিয়া মহাদেশ পরিচিতি

ওশেনিয়া হলো অসীম নীল দিগন্তের এক জগৎ। ওশেনিয়া অঞ্চলে বিশাল প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রত্নের মতো দ্বীপগুলোর সাথে সমুদ্রের মিলন ঘটে। ওশেনিয়া সূর্যালোক, সমুদ্রের বাতাস এবং প্রাচীন ঐতিহ্যের সমন্বয়ে তৈরি একটি মহাদেশ, যেখানে প্রতিটি ঢেউ একটি গল্প বহন করে এবং প্রতিটি দ্বীপ একটি রহস্য ধারণ করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক গভীরতায় সমৃদ্ধ, ওশেনিয়া মনে হয় যেন পৃথিবী এবং সমুদ্রের মিলনস্থল।

আর্টিকেলে যা যা শিখবেন

  • ওশেনিয়া মহাদেশ পরিচিতি
  • ওশেনিয়া মহাদেশর অঞ্চলসমুহ
  • ওশেনিয়া মহাদেশের দেশগুলোর নাম
  • অস্ট্রেলিয়া পরিচিতি
  • নিউজিল্যান্ড পরিচিতি
  • বিগত বছরের প্রশ্ন ও উত্তর

ওশেনিয়া মহাদেশ পরিচিতি

ওশেনিয়া হলো প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজার হাজার দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত একটি সুন্দর এবং বৈচিত্র্যময় মহাদেশ। এই মহাদেশ তার অত্যাশ্চর্য সৈকত, প্রবাল প্রাচীর এবং অনন্য বন্যপ্রাণীর জন্য পরিচিত। ওশেনিয়া কোন দেশ নয়, এটি একটি অঞ্চল যা মহাদেশ নামে পরিচিত। ওশেনিয়া এমন একটি অঞ্চল যেখানে প্রকৃতি এবং সংস্কৃতি আকর্ষণীয় উপায়ে একত্রিত হয়েছে।অস্ট্রেলিয়ার সিডনি এবং অকল্যান্ডের আধুনিক শহর থেকে শুরু করে প্রশান্ত মহাসাগরের ঐতিহ্যবাহী দ্বীপ গ্রাম পর্যন্ত, ওশেনিয়া ইতিহাস, অ্যাডভেঞ্চার এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক সমৃদ্ধ মিশ্রণ প্রদান করে। ওশেনিয়া মহাদেশে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউ গিনির মতো দেশ এবং ফিজি এবং সামোয়ার মতো অনেক ছোট দ্বীপরাষ্ট্র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ওশেনিয়া মহাদেশর অঞ্চলসমুহ

ওশেনিয়া মহাদেশে ৫টি অঞ্চলে বিভক্ত। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পলিনেশিয়া, মেলানেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া এই ৫টি অঞ্চল নিয়ে ওশেনিয়া মহাদেশ গঠিত। এই ৫টি অঞ্চলের মধ্যে পলিনেশিয়া, মেলানেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া অঞ্চল ৩টি ছোট ছোট স্বাধীন দ্বীপ রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত।

ওশেনিয়া মহাদেশের দেশগুলোর নাম

১৪ টি স্বাধীন দেশ নিয়ে ওশেনিয়া মহাদেশ গঠিত হয়েছে। এদরে মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড নিজেই একটি অঞ্চল ও স্বাধীন দেশ। ওশেনিয়া মহাদেশের দেশগুলোর নাম নিম্নে দেওয়া হলো।
অঞ্চল দেশের সংখ্যা দেশের নাম
অস্ট্রেলিয়া ১টি অস্ট্রেলিয়া
নিউজিল্যান্ড ১টি নিউজিল্যান্ড
পলিনেশিয়া ৩ টি ১. সামোয়া ২. টোঙ্গা ৩. টুভ্যালু
মেলানেশিয়া ৪ টি ১. পাপুয়া নিউগিনি ২. সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ৩. ভানুয়াতু ৪. ফিজি
মাইক্রোনেশিয়া ৫ টি ১. মাইক্রোনেশিয়া ২. কিরিবাতি ৩. নাউরু ৪. মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ ৫. পালাউ

অস্ট্রেলিয়া পরিচিতি

অস্ট্রেলিয়া অসাধারণ বৈপরীত্যের এক দেশ। এখানে সোনালী সৈকত লাল মরুভূমির সাথে মিলিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় প্রাচীন প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশে আধুনিক শহরগুলো গড়ে ওঠে। অস্ট্রেলিয়া তার উষ্ণ চেতনা, বৈচিত্র্যময় বন্যপ্রাণী এবং প্রাণবন্ত সংস্কৃতির জন্য পরিচিত।
  • অস্ট্রেলিয়া এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত দক্ষিণ গোলার্ধের একটি দেশ।
  • ‘অস্ট্রেলিয়া’ একটি ল্যাটিন শব্দ, যার অর্থ- দক্ষিণাঞ্চল।
  • ওশেনিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ হ্রদ- গ্রেট ভিক্টোরিয়া- অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত।
  • বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবাল প্রাচীর- গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ (কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত)।
  • কুইন্সল্যান্ড যে দেশের অংশ- অস্ট্রেলিয়া।
  • Ayers Rock অবস্থিত- অস্ট্রেলিয়ায়।
  • জনসংখ্যা ও আয়তনে ওশেনিয়া মহাদেশের বৃহত্তম নগরী- সিডনি।
  • ‘মেলবোর্ন শহর’ অবস্থিত- অস্ট্রেলিয়ায় (অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর)।
  • অস্ট্রেলিয়ার আনুষ্ঠানিক রাজা- তৃতীয় চার্লস।
  • ‘ক্যাঙ্গারুর দেশ’ বলা হয়- অস্ট্রেলিয়াকে।
  • অস্ট্রেলীয় আদিবাসীদের বলা হয়- Aborigine।
  • অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের নাম- দি লজ (ক্যানবেরা অবস্থিত)।
  • অনেকেই “সিডনি” কে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী মনে করেন। কিন্তু সিডনি হলো জনসংখ্যা ও আয়তনে ওশেনিয়া মহাদেশের বৃহত্তম শহর ও বন্দর।

নিউজিল্যান্ড পরিচিতি

নিউজিল্যান্ড এক অসাধারণ সৌন্দর্যের দেশ। যেখানে তুষারাবৃত পাহাড়, সবুজ পাহাড় এবং স্ফটিক-স্বচ্ছ হ্রদ স্বপ্নের মতো এক দৃশ্য তৈরি করে। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে প্রকৃতি নিজেকে জীবন্ত মনে করে এবং মানুষ এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বাস করে। মনে হয় নিউজিল্যান্ডের প্রতিটি কোণ অ্যাডভেঞ্চার, শান্তি এবং ভূমির সাথে গভীর সংযোগের গল্প বলে। নিউজিল্যান্ড নিয়ে কিছিু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর নিম্নে দেওয়া হলো।
  • দক্ষিণের গ্রেট ব্রিটেন বলা হয়- নিউজিল্যান্ডকে।
  • নিউজিল্যান্ডের আদি অধিবাসী- মাউরি।
  • নিউজিল্যান্ডের স্ব-শাসিত অঞ্চল- কুক আইল্যান্ড, কিউই।
  • যে দেশের মহিলারা সর্বপ্রথম ভোটাধিকার পায়- নিউজিল্যান্ড (১৮৯৩ সালে)।
  • নিউজিল্যান্ডের জাতীয় খেলার নাম- রাগবী।
  • ‘কিউই’ যে দেশের জাতীয় পাখি- নিউজিল্যান্ড।
  • ‘মাউরিরা’ যে দেশে বাস করে- নিউজিল্যান্ড।
  • নিউজিল্যান্ডের নামকরণ করেন- ডাচ নাবিক ভাসম্যান।
  • নিউজিল্যান্ডের জাতীয় পাখির নাম- কিউই।
  • কিউই বলা হয়- নিউজিল্যান্ডের অধিবাসীদেরও।

বিগত বছরের প্রশ্ন ও উত্তর

১. সর্বপ্রথম কোন দেশে মহিলাদের ভোটাধিকার প্রদান করা হয়?
ক) নিউজিল্যান্ড
খ) বৃটেন
গ) যুক্তরাষ্ট্র
ঘ) নেদারল্যান্ডস

২. নিউজিল্যান্ডের আদিবাসীদের কী বলা হয়? (বাতিলকৃত 24 BCS)
ক) কুর্দি
খ) তাতারু
গ) রেড ইন্ডিয়ান
ঘ) মাওরি

৩. কুইন্সল্যান্ড কোন দেশের অংশ?
ক) অস্ট্রেলিয়া
খ) নাইজেরিয়া
গ) কানাডা
ঘ) যুক্তরাষ্ট্র

৪. ২০১২ সালে কার্বন কর চালু করে-
ক) যুক্তরাষ্ট্র
খ) ব্রাজিল
গ) অস্ট্রেলিয়া
ঘ) জাপান

৫. কমনওয়েলথের কোন দেশটি যুক্তরাজ্যের রাজা ও রাণীকে তাদের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে স্বীকার
করে? (পাসপোর্ট অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সহকারী পরিচালক-০৩)
ক) অস্ট্রেলিয়া
খ) কানাডা
গ) ত্রিনিদাদ
ঘ) সাইপ্রাস

৬. গ্রেট বেরিয়ার রীফ কোথায় অবস্থিত? (প্রা বি প্রধান শিক্ষক-১২)
ক) প্রশান্ত মহাসাগরে
খ) আটলান্টিক মহাসাগরে
গ) ভারত মহাসাগরে
ঘ) পারস্য উপসাগরে

৭. উইকিলিকস কোন দেশ ভিত্তিক ওয়েবসাইট?
ক) আমেরিকা
খ) অস্ট্রেলিয়া
গ) ফ্রান্স
ঘ) জার্মানি

উত্তরমালা
১. ক; ২. ঘ; ৩. ক; ৪. গ; ৫. ক; ৬. ক; ৭. খ

সচরাচর জিজ্ঞাসাঃ

ওশেনিয়া মহাদেশে কয়টি দেশ আছে?

ওশেনিয়া মহাদেশে মোট ১৪ টি দেশ আছে।

ওশেনিয় মহাদেশে স্বাধীন দেশ কয়টি?

ওশেনিয় মহাদেশে স্বাধীন দেশের সংখ্যা ১৪ টি।

ওশেনিয়া মহাদেশ কে আবিষ্কার করেন?

কিছু মহাদেশের মতো ওশেনিয়া মহাদেশ কোনও একক ব্যক্তির দ্বারা “আবিষ্কৃত” হয়নি। কারণ হাজার হাজার বছর ধরে এই অঞ্চলে আদিবাসীরা বসবাস করত। তবে, ইউরোপীয় অনুসন্ধানের দিক থেকে, আবেল তাসমান (Abel Tasman) ছিলেন ১৭ শতকে এই অঞ্চলের কিছু অংশের মানচিত্র তৈরিকারী করেন। তিনি ছিলেন ইউরোপীয়দের মধ্যে প্রথম। তার পরে জেমস কুক (James Cook), যিনি ১৮ শতকে অনেক দ্বীপ অনুসন্ধান করেন এবং মানচিত্র তৈরি করেন।

ওশেনিয়া মহাদেশের আয়তন কত?

ওশেনিয়া মহাদেশটি প্রায় ৮.৫ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার (প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন বর্গমাইল) এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। ওশেনিয় মহাদেশের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং মধ্য ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার দ্বীপ।

ওশেনিয়া মহাদেশের দেশগুলোর নাম কি?

১. অস্ট্রেলিয়া; ২. নিউজিল্যান্ড; ৩. সামোয়া; ৪. টোঙ্গা; ৫. টুভ্যালু; ৬. পাপুয়া নিউগিনি; ৭. সলোমন দ্বীপপুঞ্জ; ৮. ভানুয়াতু; ৯. ফিজি; ১০. মাইক্রোনেশিয়া; ১১. কিরিবাতি; ১২. নাউরু; ১৩. মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ; ১৪. পালাউ।

ওশেনিয়া মহাদেশের ক্ষুদ্রতম দেশ কোনটি?

ওশেনিয়ার সবচেয়ে ছোট দেশ হলো নাউরু। এটি প্রশান্ত মহাসাগরের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র, যার আয়তন মাত্র ২১ বর্গকিলোমিটার (প্রায় ৮ বর্গমাইল)। নাউরু কেবল ওশেনিয়ার সবচেয়ে ছোট দেশই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশগুলোর মধ্যে একটি।

তথ্যসূত্রঃ
  • Britannica – Oceania
  • National Geographic – Oceania
  • CIA World Factbook – Nauru
  • BBC – Nauru
  • NZ History – Abel Tasman
  • State Library of NSW – Captain Cook
  • Britannica – Australia
  • Australia.com – Explore Australia
  • Britannica – New Zealand

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url