রেনেসাঁ বিপ্লব কি-রেনেসাঁর ইতিহাস-রেনেসাঁর গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাবিদ ও তাদের অবদান

“রেনেসাঁ ” কে মধ্যযুগ এবং আধুনিকতার মধ্যে একটি রূপান্তরকারী সময় হিসেবে মনে করা হয় এবং প্রায়শই ধ্রুপদী শিক্ষা এবং প্রজ্ঞার (Classical learning and wisdom) ‘Rebirth বা পুনর্জন্ম’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়।রেনেসাঁর ইন্টেলেকচুয়াল ভিত্তি ছিল নিজস্ব উদ্ভাবিত মানবতাবাদের সংস্করণ, যা প্রোটাগোরাসের (Protagoras) মতো ধ্রুপদী গ্রীক দর্শনের (Classical Greek philosophy) পুনঃআবিষ্কার থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন যে “মানুষই সকল কিছুর পরিমাপ।” (“Man is the measure of all things.”) এই নতুন চিন্তাভাবনাই শিল্প, স্থাপত্য, রাজনীতি, বিজ্ঞান এবং সাহিত্যে প্রকাশিত হয়েছিল।

আর্টিকেল শেষে যা যা জানবেন

  • রেনেসাঁ কি
  • রেনেসাঁ বিপ্লব কি
  • রেনেসাঁর সময়কাল ও সূচনা
  • রেনেসাঁর উন্নয়নের মূল ক্ষেত্রগুলো
  • মানবতাবাদের উৎপত্তি এবং উত্থান
  • রেনেসাঁর গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাবিদ ও তাদের অবদান
  • রেনেসাঁর ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি

রেনেসাঁ কি (Renaissance Movement)

“রেনেসাঁ বা Renaissance” শব্দটি ফরাসি ভাষা থেকে এসেছে। রেনেসাঁ বা Renaissance এর ইংরেজি আক্ষরিক অর্থ হলো “Rebirth”। বাংলা অর্থ হলো “পুনর্জাগরন বা পুনর্জন্ম”। রেনেসাঁ বলতে মধ্যযুগের পরে ও রিফর্মেশনের আগে বিশেষ করে ইতালিতে ও সাধারণভাবে গোটা ইউরোপের এক ঐতিহাসিক যুগকে বুঝায়। “Renaissance” শব্দটি ১৮৩০-এর দশক থেকে ইংরেজি লেখায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।১৮৫৫ সালে জুলস মিশেলেটের লেখা “হিস্টোয়ার ডি ফ্রান্স” (Histoire de France)-এ পাওয়া যায়। “রেনেসাঁ” শব্দটি অন্যান্য ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন-ক্যারোলিংগিয়ান রেনেসাঁ (Carolingian Renaissance) এবং ১২ শতকের রেনেসাঁ (Renaissance of the 12th century)।

রেনেসাঁ বিপ্লব কি

রেনেসাঁ ছিল ইউরোপে একটি সাংস্কৃতিক, বৌদ্ধিক এবং শৈল্পিক আন্দোলন বা বিপ্লব। এই যুগে শাস্ত্রীয় জ্ঞান (Classical Knowledge) এর “পুনর্জন্ম” হয় যা মানবতাবাদ (Humanism), বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং শিল্পের উপর জোর দেয় এবং আধুনিক পাশ্চাত্য চিন্তাভাবনা এবং অগ্রগতির ভিত্তি স্থাপন করে। এ যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল প্রাচীন পুস্তক অধ্যয়নের অনুশীলন বৃদ্ধি করে চিত্রকলায় দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবহার এবং বিজ্ঞানের সামগ্রিক উন্নতি।

রেনেসাঁর সময়কাল ও সূচনা

বর্তমানে রেনেসা বলতে অন্যান্য ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পর্যায়কেও বোঝানো হয়। এ যুগের ব্যাপ্তিকাল ছিল আনুমানিক ১৪০০ থেকে ১৬০০ শতাব্দী পর্যন্ত। ইতালির ফ্লোরেন্স নগরী থেকে রেনেসাঁ শুরু হয়ে ছিলো। রেনেসাঁর উৎপত্তি এবং বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যা করার জন্য বিভিন্ন তত্ত্ব প্রস্তাব করা হয়েছে। তত্ত্ব গুলোর মধ্যে রয়েছে তৎকালীন ফ্লোরেন্সের সামাজিক ও নাগরিক বৈশিষ্ট্য; এর রাজনৈতিক কাঠামো; এর প্রভাবশালী পরিবার, মেডিসির পৃষ্ঠপোষকতা; এবং অটোমান তুর্কিদের হাতে কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর গ্রীক পণ্ডিত এবং গ্রন্থগুলোর ইতালিতে অভিবাসন।

রেনেসাঁর অগ্রদূত ছিলেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি কে রেনেসাঁর বরপুত্র বলা হয়। টাইপ মেশিন, মুদ্রণ যন্ত্র (গুটেনবার্গ) এ সকল জিনিস রেনেসাঁর যুগে আবিষ্কার করা হয়। রেনেসাঁর ফলাফল হিসেবে ইউরোপে সাংস্কৃতিক ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন যাত্রা শুরু হয় যা ইউরোপকে বিশ্ব সভ্যতার নেতৃত্বে নিয়ে আসে।

রেনেসাঁর উন্নয়নের মূল ক্ষেত্রগুলো

শিল্পঃ
মানবতাবাদের উত্থান, (মানবতাবাদ যা মানবিক সম্ভাবনার উপর জোর দিয়েছিল)। ধ্রুপদী শিক্ষার (Classical Learning) পুনরুজ্জীবন, দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাস্তববাদের মতো নতুন কৌশল।
বিজ্ঞানঃ
নতুন আবিষ্কার এবং মডেল, যেমন- কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের মডেল।
সাহিত্যঃ
শেক্সপিয়ার, দান্তে এবং ম্যাকিয়াভেলির মতো লেখকদের উল্লেখযোগ্য কাজ।
রাজনীতিঃ
বাণিজ্য ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বৃদ্ধির পাশাপাশি সামন্ততন্ত্রের পতন এবং শক্তিশালী জাতি-রাষ্ট্রের উত্থানের মতো বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনও ঘটেছিল। নতুন রাজনৈতিক ধারণার উদ্ভব হয়েছিলো, যেমন- ম্যাকিয়াভেলির ‘দ্য প্রিন্স’ (The Prince)।

মানবতাবাদের উৎপত্তি এবং উত্থান

রেনেসাঁ বিপ্লবের মূল দর্শন ছিল মানবতাবাদ (Humanism), যা মানুষের অর্জন এবং ব্যক্তিদের সম্ভাবনার উপর জোর দেয়। মানবতাবাদকে ইংরেজিতে Humanism বলা হয়। পঞ্চদশ শতাব্দীতে পণ্ডিতরা গ্রীস এবং রোমের ধ্রুপদী জগতের (Classical world) পতন এবং তাদের নিজস্ব শতাব্দীর শুরুতে এর পুনঃআবিষ্কারের মধ্যবর্তী ব্যবধান বা সময়কে বোঝাতে মধ্যযুগ (Middle Ages) শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।

তারা মনে করেছিলেন যে তারা এই পুনরুজ্জীবন (Revival) এ অংশগ্রহণ করছেন। প্রকৃতপক্ষে, পেট্রার্ক অনেক আগেই দীর্ঘ সাংস্কৃতিক অন্ধকারের ধারণাটি প্রকাশ করেছিলেন। মধ্যযুগের শেষের দিকের ঘটনাবলী, বিশেষ করে দ্বাদশ শতাব্দীতে শুরু হওয়া, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং বৌদ্ধিক রূপান্তরের একটি ধারাবাহিক সূচনা হয় যা পরবর্তীতে নবজাগরণে (Renaissance) রূপ নেয়।

ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, রোমান ক্যাথলিক চার্চ এবং পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত জীবনের সংগঠনের জন্য একটি স্থিতিশীল ও ঐক্যবদ্ধ কাঠামো প্রদানে ক্রমাগত ব্যর্থ হয় ফলে নগর-রাজ্য এবং জাতীয় রাজতন্ত্রের গুরুত্ব বৃদ্ধি, জাতীয় ভাষার বিকাশ এবং পুরাতন সামন্ততান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। নবজাগরণের চেতনা শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন রূপ ধারণ করলেও এটি সর্বপ্রথম মানবতাবাদ নামক বৌদ্ধিক/বুদ্ধিজীবীদের আন্দোলনের (Intellectual Movement) মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। ধর্মনিরপেক্ষ লেখকদের দ্বারা মানবতাবাদের সূচনা হয়েছিল, মধ্যযুগীয় বৌদ্ধিক জীবনে আধিপত্য বিস্তারকারী এবং স্কলাস্টিক দর্শনের বিকাশকারী পণ্ডিত-ধর্মগুরুদের দ্বারা শুরু হয়নি।

মানবতাবাদ প্রথম শুরু হয়েছিল ইতালিতে এবং ফলপ্রসূ হয়েছিল। মানবতাবাদের পূর্বসূরিরা ছিলেন দান্তে এবং পেট্রার্কের মতো ব্যক্তিরা, এবং এর প্রধান নায়কদের মধ্যে ছিলেন জিয়ানোজো মানেত্তি, লিওনার্দো ব্রুনি, মার্সিলিও ফিকিনো, জিওভান্নি পিকো ডেলা মিরান্ডোলা, লরেঞ্জো ভাল্লা এবং কলুচিও সালুতাতি। ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপলের পতন মানবতাবাদকে একটি বড় উৎসাহ প্রদান করে। কারণ অনেক পূর্ব পণ্ডিত ইতালিতে পালিয়ে যান, তাদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বই এবং পাণ্ডুলিপি এবং গ্রীক পাণ্ডিত্যের ঐতিহ্য সঙ্গে নিয়ে আসেন।

রেনেসাঁর গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাবিদ ও তাদের অবদান

১৪০০ থেকে ১৬০০ শতাব্দীতে রেনেসাঁ সময়কালে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি তাদের অনবদ্য অবদানের জন্য বিশেষভাবে উঠে এসেছিলেন। শিল্প, বিজ্ঞান এবং দর্শনে এ সকল ব্যক্তিত্বদের অবদান ছিলো যা ইউরোপীয় সমাজকে রূপান্তরিত করেছিল। নিম্নলিখিত পরিসংখ্যানগুলো এই যুগের চেতনার উদাহরণ প্রকাশ করে যা আধুনিক বিশ্বকে প্রভাবিত করে চলেছে।

লরেঞ্জো দে’ মেডিসি (Lorenzo de’ Medici): তিনি লরেঞ্জো দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি শিল্পকলার একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং ফ্লোরেন্সে রেনেসাঁর সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি (Leonardo da Vinci): লিওনার্দো দা ভিঞ্চি (১৪৫২–১৫১৯) কে প্রায়শই ‘রেনেসাঁ পুরুষের’ আদর্শ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। তিনি ছিলেন একজন ইতালীয় চিত্রশিল্পী, উদ্ভাবক এবং বিজ্ঞানী। তিনি শিল্প, বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলে তার কাজের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। “মোনা লিসা” এবং “দ্য লাস্ট সাপার” এর মতো তার কাজগুলো তাদের সৌন্দর্য এবং বিস্তারিত বিবরণের জন্য প্রশংসিত হয়।

মাইকেলেঞ্জেলো (Michelangelo): মাইকেলেঞ্জেলো (১৪৭৫–১৫৬৪) একজন দক্ষ ইতালীয় ভাস্কর, চিত্রশিল্পী এবং স্থপতি ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত কর্ম “স্ট্যাচু অব ডেভিড” এবং  “সিস্টিন চ্যাপেল সিলিং”, তাদের সৌন্দর্য, বিস্তর বর্ণনা এবং মানবিক আবেগের চিত্রায়নের জন্য প্রশংসিত।

রাফায়েল (Raphael Sanzio): রাফায়েলো সানজিও (১৪৮৩–১৫২০) একজন বিখ্যাত ইতালীয় চিত্রশিল্পী এবং স্থপতি ছিলেন। তিনি তাঁর বিখ্যাত কাজ “দ্য স্কুল অফ এথেন্স” এর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।

নিকোলাস কোপার্নিকাস (Nicolaus Copernicus): নিকোলাস কোপার্নিকাস (১৪৭৩–১৫৪৩) একজন পোল্যান্ডের বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বহুবিদ্যাবিদ (polymath)। যিনি প্রতিষ্ঠিত ভূ-কেন্দ্রিক মডেলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মহাবিশ্বের সূর্যকেন্দ্রিক মডেল/তত্ত্ব প্রস্তাব করেছিলেন। তাঁর কাজ আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

গ্যালিলিও গ্যালিলি (Galileo Galilei): গ্যালিলিও গ্যালিলি (১৫৬৪–১৬৪২) একজন বিখ্যাত ইতালীয় পদার্থবিদ, জ্যোতির্বিদ। তিনি জ্যোতির্বিদদের একটি ছোট দলের অংশ ছিলেন যারা টেলিস্কোপকে প্রথম আকাশের দিকে ঘুরিয়েছিলেন। ১৬০৯ সালে “ড্যানিশ দৃষ্টিকোণ কাচ” (“Danish perspective glass”) সম্পর্কে শোনার পর, গ্যালিলিও তার নিজস্ব টেলিস্কোপ তৈরি করেন। পরবর্তীতে তিনি ভেনিসে টেলিস্কোপটি প্রদর্শন করেন। তিনি কোপার্নিকান তত্ত্বকেও সমর্থন করেছিল।

টমাস মোর (Thomas More): টমাস মোর (১৪৭৮-১৫৩৫) একজন ইংরেজ আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, মানবতাবাদী, দার্শনিক এবং রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। িতাঁর জন্ম ইংল্যান্ডের লন্ডনে। তিনি তাঁর রচনা “ইউটোপিয়া” (“Utopia”)-এর জন্য সর্বাধিক পরিচিত, যেখানে একটি আদর্শ সমাজ চিত্রিত হয়েছিল। তাঁর ধারণাগুলো রাজনৈতিক চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করেছিল এবং সমসাময়িক সমাজের সমালোচনা উপস্থাপন করেছিল। অষ্টম হেনরি (Henry VIII) কে ইংল্যান্ডের চার্চের সর্বোচ্চ প্রধান হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করার জন্য ১৫৩৫ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

রেনেসাঁর ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি

রেনেসাঁর একটি দীর্ঘ এবং জটিল ইতিহাস রয়েছে। এবং বিচ্ছিন্ন সময়কালের সাধারণ সংশয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, ইতিহাসবিদদের মধ্যে 19 শতকের রেনেসাঁ এবং স্বতন্ত্র সংস্কৃতির নায়ক যাদেরকে “রেনেসাঁ পুরুষ” হিসাবে মহিমান্বিত করার প্রতিক্রিয়ায় অনেক বিতর্ক হয়েছে। এক্ষেত্রে “রেনেসাঁ” শব্দটির ঐতিহাসিক বর্ণনার উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

কিছু পর্যবেক্ষক প্রশ্ন তুলেছেন যে রেনেসাঁ কি মধ্যযুগের একটি সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ছিল কিনা, বরং এটিকে ধ্রুপদী প্রাচীনত্বের (Classical Antiquity) জন্য হতাশাবাদ এবং স্মৃতিচারণের সময়কাল হিসাবে দেখেছেন। অন্যদিকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদরা, বিশেষ করে লংগু ডুরি [{Longue Durée (Long-Term)] বা (দীর্ঘমেয়াদী) দুটি যুগের মধ্যে ধারাবাহিকতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন, যা প্যানোফস্কির (Panofsky) পর্যবেক্ষণ অনুসারে (By a thousand ties) বা “হাজার বন্ধন দ্বারা” সংযুক্ত।

সচরাচর জিজ্ঞাসা

রেনেসাঁ কত সালে কোথায় সংঘটিত হয়?

রেনেসাঁ আনুমানিক ১৪০০ থেকে ১৬০০ শতাব্দী পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। এবং এটি প্রথম ইতালিতে শুরু হয়েছিল। ইতালির ফ্লোরেন্স নগরী থেকে রেনেসাঁ শুরু হয়েছিলো। রেনেসাঁ সময়ে শিল্প, সাহিত্য এবং বিজ্ঞানে বিশাল অগ্রগতি হয়েছিল, যা মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে উত্তরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় ছিল।

রেনেসাঁ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন কে?

“Renaissance” একটি ফরাসি শব্দ। যার ইয়রেজি আক্ষরিক অর্থ “Rebirth”। শব্দটি ১৮৩০ সাল থেকে থেকে ইংরেজি বিভিন্ন লেখায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১৮৫৫ সালে জুলস মিশেলেটের লেখা “হিস্টোয়ার ডি ফ্রান্স” (Histoire de France) বই এ প্রথম পাওয়া যায়।

রেনেসাঁর মূল কারণ কি?

রেনেসাঁর মূল কারণ আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত জীবনের জন্য যে সকল সংগঠন প্রয়োজন তাদের জন্য একটি স্থিতিশীল কাঠামো প্রদানে রোমান ক্যাথলিক চার্চের ব্যর্থতা, নগর-রাজ্যের গুরুত্ব বৃদ্ধি, জাতীয় রাজতন্ত্রের উত্থান এবং পুরাতন সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোর ভাঙন।

নবজাগরণের উপর কার প্রভাব ছিল?

নবজাগরণ এমন একটি বিপ্লব যার উপর অনেক ভাস্কর, চিত্রশিল্পী এবং স্থপতি, জ্যোতির্বিদ, আইনজীবী, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ এবং মানবতাবাদী বিশিষ্ঠ্য ব্যক্তি ছিলেন। বিশেষ করে ইতালির কবি পেত্রার্ক এবং জিওভান্নি বোকাচ্চিও , যারা রেনেসাঁর মূলে মানবতাবাদ, চিন্তাধারার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। এছাড়াও ছিলেন লরেঞ্জো দে’ মেডিসি, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, মাইকেলেঞ্জেলো, রাফায়েল, নিকোলাস কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও গ্যালিলি এবং টমাস মোর এর মতো বিশিষ্ঠ্য ব্যক্তিবর্গ।

রেনেসাঁ যুগের প্রধান পরিবর্তন কি কি?

রেনেসাঁ যুগের প্রধান পরিবর্তনগুলোর মধ্যে রয়েছে মানবতাবাদের উত্থান, (মানবতাবাদ যা মানবিক সম্ভাবনার উপর জোর দিয়েছিল) এবং ধ্রুপদী শিক্ষার (classical learning) পুনরুজ্জীবন, দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাস্তববাদের মতো নতুন কৌশল। যে কৌশলের মাধ্যমে শিল্পে বিপ্লব এবং উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এনে ছিলো। এই বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি, বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। বাণিজ্য ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বৃদ্ধির পাশাপাশি সামন্ততন্ত্রের পতন এবং শক্তিশালী জাতি-রাষ্ট্রের উত্থানের মতো বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনও ঘটেছিল।

রেনেসাঁ সাহিত্যের প্রধান প্রভাব কি ছিল?

রেনেসাঁর সাহিত্যে প্রাচীন গ্রীক এবং রোমান সাহিত্যের একটি বড় প্রভাব ছিল। রেনেসাঁর সময়কালে, গ্রীস এবং রোমের ধ্রুপদী গ্রন্থের (Classical Books) প্রতি আগ্রহ পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল, যা সেই সময়ের সাহিত্যকর্মগুলোকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল।

ইংরেজি সাহিত্যে রেনেসাঁর জনক কে?

পেট্রার্ক ছিলেন রেনেসাঁ যুগের একজন বিশিষ্ট লেখক। তাকে রেনেসাঁর জনক বলা হয়। পেট্রার্কের শ্রেষ্ঠ কর্ম হলো “স্পেকট্রাম”। পেট্রার্ককে প্রায়শই মানবতাবাদের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।ক্রিস্টোফার মার্লো একজন ইংরেজ কবি এবং নাট্যকার। ক্রিস্টোফার মার্লোকে রেনেসাঁর প্রকৃত সন্তান বলা হয়ে থাকে। কারণ, ক্রিস্টোফার মার্লো (১৫০০ শতকের শেষার্ধে) তার জীবদ্দশায় অনেক সাহিত্যে বিশেষ করে ট্র্যাজেডির ক্ষেত্রে অনেক উপরে উঠেছিলেন। তাকে ইংরেজি সাহিত্যে রেনেসাঁ যুগের সেরা ট্র্যাজেডিয়ান হিসেবে বিবেচনা করা হত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url