পরিবেশ কাকে বলে? - পরিবেশ কত প্রকার ও কি কি?

প্রতিটি জিনিসই কোন না কোন পরিবেশে বেড়ে ওঠে। একটি জীবের বেড়ে ওঠার পেছনে পরিবেশের ভুমিকা অপরিসীম। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি গ্রহের নিজ নিজ পরিবেশ রয়েছে। আমাদের পৃথিবীরও মূল ভিত্তি হলো এর পরিবেশ। পরিবেশ হলো কোন স্থানের সবকিছুর অবস্থা ও পরিস্থিতির সমষ্টি। পরিবেশ কাকে বলে? - পরিবেশ কত প্রকার ও কি কি? এই পৃথিবীতে অবস্থানরত সকল জীব, অজিব জলে স্থলে যেখানেই বাস করুক না কেন তারা পরিবেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। জল,বায়ু উদ্ভিদ, প্রাণী, সূর্যালোক সবকিছুই পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া ধারণা করা হয়, পৃথিবী মহাবিশ্বের একমাত্র গ্রহ যেখানে জীবনকে সাপোর্ট করে। মানব সমাজ বা মানব গোষ্ঠীর সম্পর্কে তথ্যপূর্ণ আলোচনা স্বার্থে পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা করা অত্যন্ত জরুরী। আজকেরে আর্টিকেলে আমরা পরিবেশ কি, পরিবেশ কত প্রকার কি কি, পরিবেশের উপর মানুষের প্রভাব, পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করব।

ভুমিকা

পরিবেশ হল এমন একটি অবস্থা যেখানে আমরা সবাই একত্রে বসবাস করি। প্রতিটি জীবের বেঁচে থাকার জন্য উপযোগী পরিবেশ অপরিহার্য। প্রতিটি জীব এই পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। বেঁচে থাকার জন্য জল,বায়ু, খাদ্য এমনকি জমির মত মৌলিক জিনিসগুলো এই প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া যায়।

পরিবেশ কাকে বলে

আমাদের চারপাশে যে জিনিসগুলো রয়েছে সবগুলো মিলেই আমাদের পরিবেশ। যেমন মাটি পানি বায়ু উদ্ভিদ কুল প্রাণীকূল আকাশ ইত্যাদি। তবে এদের মধ্যে পরিবেশের প্রধান উপাদান হলো তিনটি। তা হল-মাটি,পানি ও বায়ু।
পরিবেশের সংজ্ঞা
ফরাসি শব্দ "enites" থেকে পরিবেশ শব্দটির উৎপত্তি। বাংলায় পরিবেশ শব্দটি ‘পরী’ এবং ‘আবরণ’ এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। ‘পরী’ অর্থ আমাদের চারপাশে যে জিনিসগুলো রয়েছে এবং ‘আবরণ’ অর্থ ঘিরে রাখা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিজ্ঞানে গবেষক এবং সরকারি বেসরকারি সংস্থা বিভিন্নভাবে পরিবেশকে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
মাসটন বেটস এর মতে, “পরিবেশ হলো সেসব বাহ্যিক অবস্থার সমষ্টি যা জীবনের বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে”।
Marquis & Woodworth এর মতে, “জীবন শুরু হওয়ার পর ব্যক্তির ওপর বাইরের যা কিছু সক্রিয় হয় তাই হলো পরিবেশ।”
1976 সালে দেয়া UNEP (United Nations Environment Programme) এর সংজ্ঞা অনুসারে, “পরিবেশ বলতে পরস্পর ক্রিয়াশীল উপাদানগুলোর মাধ্যমে গড়ে ওঠা সেই প্রাকৃতিক ও জীবমন্ডলির প্রণালীকে বুঝায়, যার মধ্যে মানুষ ও অন্যান্য সজীব উপাদানগুলো বেঁচে থাকে, বসবাস করে।”
মনোবিজ্ঞানী বোরিং, লংফিল্ড ও ওয়েল্ড বলেছেন, “জিন ব্যতীত ব্যক্তির উপর যা কিছুর প্রভাব দেখা যায়, তাই হলো পরিবেশ।”

পরিবেশ কত প্রকার ও কি কি

উপাদান এর ওপর ভিত্তি করেপরিবেশকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
ক) প্রাকৃতিক / ভৌত পরিবেশ / ভৌগোলিক পরিবেশ।
খ) সামাজিক পরিবেশ / কৃত্রিম পরিবেশ / মানুষের তৈরি পরিবেশ।
পরিবেশের প্রকৃতি
পরিবেশের দূষণ বিভিন্নভাবে হতে পারে। ANAS (American National Academy of Sciences) এর মতে কোন পরিবেশের জলবায়ু পানি ভূমি রাসায়নিক এবং জৈবিক বৈশিষ্ট্য থেকে যেকোনো ধরনের পবাঞ্চিত পরিবর্তনে দূষণ। এই দূষণ আমাদের উদ্ভিদ জগত প্রাণী জগৎ শিল্প-সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির ওপর ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া ইত্যাদি পরিবেশকে দূষিত করে এবং দিন দিন পরিবেশকে ভয়াবহ করে তুলছে।
পরিবেশের উপাদান কয়টি ও কি কি
পরিবেশের উপাদান গুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(ক) জীব এবং (খ) জড় 
এছাড়া পরিবেশের মূল উপাদান হলো তিনটি। যেমন-
(১) মাটি, পানি, বায়ু, আবহাওয়া, জলবায়ু
(২) বৃক্ষরাজী, জীবজন্তু, শস্য
(গ) সামাজিক জনসংখ্যা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

পরিবেশের গুরুত্ব

সত্যিকার অর্থে আমরা পরিবেশের মূল্য বুঝিনা। একটি পরিবেশ তার অধীনস্থ জীবন্ত উদ্ভিদ ও প্রাণীকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষের সমগ্র জীবন সমর্থন সম্পূর্ণরূপে পরিবেশগত কারণের উপর নির্ভর করে। উপরন্তু, এটি পৃথিবীতে বিভিন্ন জীবন চক্র বজায় রাখতে সাহায্য করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উৎস এবং শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পরিবেশের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।
(ক) উদ্ভিদকুল ও প্রাণীকূল সকলের বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশের গুরুত্ব অপরিসীম।
(খ) বেঁচে থাকার জন্য যা যা প্রয়োজন যেমন-খাদ্য, বাসস্থান, বায়ু সরবরাহ করে এবং সমস্ত মানুষের চাহিদা, সবকিছু আমরা পরিবেশ থেকেই পেয়ে থাকি। এবং পরিবেশ আমাদের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করে।
(গ) অসভ্যসুক থেকে রূপ মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রকৃতিই আমাদেরকে সরবরাহ করে থাকে।
(ঘ) এছাড়া জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(ঙ) স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ প্রয়োজন।
(চ) পৃথিবীতে জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে পরিবেশের গুরুত্ব অপরিসীম।
পরিবেশের সুবিধা
পরিবেশ ছাড়া কোন প্রাণী জীবন-যাপন করতে পারে না। পরিবেশ থেকে আমরা যে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকি তা ব্যাখ্যা করে শেষ করা যাবে না। প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন আমরা পরিবেশের উদ্ভিদ কুল থেকেই পেয়ে থাকি। এবং এই উদ্ভিদকুল বাতাস থেকে ক্ষতিকারক গ্যাস শোষণ করে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গাছপালার গুরুত্ব অপরিসীম।
বাস্তুতন্ত্রের উপর পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রতিদিন সংঘটিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে পরিবেশ। এই পরিবেশ হাজার হাজার বছর ধরে উদ্ভিদ এবং প্রাণী দেরকে বেড়ে উঠতে এবং বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে আসছে। পরিবেশ আমাদের উর্বর জমি, পানি, বাতাস, গবাদি পশু এবং বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস সরবরাহ করে।
পরিবেশ পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর রাখার ব্যবস্থা

গ্রিনহাউস প্রভাব নিয়ন্ত্রণ এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ঠিক রাখতে বেশি বেশি গাছ লাগানো প্রয়োজন। আমাদের এমন জিনিস ব্যবহার করা উচিত সেগুলো পুনরায় ব্যবহার করা যায়। আমাদের টপোগ্রাফি পরিষ্কার রাখতে প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সর্বোপরি পরিবেশ বিপর্যয় সম্পর্কে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টির ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাস্থ্যকর ও পরিষ্কার পরিবেশ প্রয়োজনীয় কেন
সুস্থ, সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে এমন কি সামগ্রিকভাবে একটি জাতির জন্য স্বাস্থ্যকর, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং নিরাপদ ও দূষণমুক্ত পরিবেশ অত্যান্ত জরুরী। পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে সুস্থ পরিবেশ প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ছাড়া কোন প্রাণী বাঁচতে পারে না। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ বাস্তুতন্ত্র কে ভারসাম্যহীন করে তোলে এবং নানাবিধ রোগের দিকে ধাবিত করে। প্রাকৃতিক সম্পদের অবক্ষয় জীবনের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে বাধা গ্রস্থ করে।

পরিবেশের উপর মানব কর্মের প্রভাব

বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ মানুষ। মানব জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। মানুষের কর্মের জন্য পরিবেশ আজ বিপর্যয়গ্রস্ত। ওজোন স্তরের অবক্ষয়, বৈশ্বিক উষ্ণতা, গ্রিনহাউস প্রভাব, অ্যাসিড বৃষ্টি, মহাসাগরের অম্লকরণ, বিপজ্জনক বর্জ্য নিষ্পত্তি, জলবায়ুর পরিবর্তন, বন উজাড়, হিমবাহের গলে যাওয়া, দূষণ ইত্যাদি পরিবেশগত বিপর্যয়ের সঙ্গে মানুষ সরাসরি জড়িত।

পরিবেশ দিবস

সমগ্র বিশ্ব আজ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। তাই জীবনকে টিকিয়ে রাখতে হলে পরিবেশ দূষণ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলনে ৫ জুন থেকে 16 জুন পর্যন্ত পরিবেশ দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। এবং ১৯৭৪ সালের ৫ই জুন প্রথম পরিবেশ দিবস পালিত হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর ৫ জুন সারা বিশ্বে পরিবেশ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

উপসংহার

উপরের আলোচনা থেকে আমরা পরিবেশ কাকে বলে? পরিবেশ কত প্রকার ও কি কি? তা জানতে পারলাম। পরিশেষে বলা যায় যে পরিবেশকে সুস্থ এবং ভারসম্প্য পণ্য রাখতে আমাদেরকেই দায়িত্বশীল হতে হবে। আমরা যে খাদ্য শৃংখল বা খাদ্য ওয়েব এর উপর নির্ভরশীল সেগুলো পরিবেশের উপাদান দিয়েই তৈরি। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই নিজ নিজ পরিবেশের যত্ন নেয়া এবং এই গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url