অপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে-অপটিক্যাল ফাইবারের সুবিধা

অপটিক্যাল ফাইবার কি, অপটিক্যাল ফাইবারের সুবিধা গুলো কি কি বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে এই সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা আজকে অপটিক্যাল ফাইবার কি অপটিক্যাল ফাইবার কত প্রকার গঠন প্রণালী এর সুবিধা কি কি এসবর সমস্ত বিষয়ে আলোচনা করব।
অপটিক্যাল ফাইবার কি ও কত প্রকার-অপটিক্যাল ফাইবারের সুবিধা
তথ্য প্রযুক্তির এই বিস্ময়কর যুগে নেটওয়ার্কিং সিস্টেম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই নেটওয়ার্কিং সিস্টেম ছাড়া ইন্টারনেটকে যোগাযোগ অসম্ভব।

সূচিপত্রঃ-অপটিক্যাল ফাইবার কি-অপটিক্যাল ফাইবার কত প্রকার-অপটিক্যাল ফাইবারের সুবিধা

ভূমিকাঃ

বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদান বা যোগাযোগের ক্ষেত্রে অপটিক্যাল ফাইবারের গুরুত্ব অপরিসীম। অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে আলোক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তথ্যের আদান-প্রদান করা হয়। আমরা জানি শব্দের চাইতে আলোর গতি বেশি। তাই অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আলোর গতি শক্তিকে কাজে লাগানো হয়।

আরো পড়ুনঃ ডাটা ট্রান্সমিশন মোড কি-ডাটা ট্রান্সমিশন মোড কত প্রকার ও কি কি

আমরা জানি আলো প্রতি সেকেন্ডে ২৯৯,৭৯২,৪৫৮ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে। তাহলে আলোর এই গতিকে কাজে লাগিয়ে যদি তথ্যের আদান-প্রদান সম্ভব হয় তাহলে ভেবে দেখুন খুব অল্প সময়ের মধ্যে কত দূরে তথ্য পাঠানো বা তথ্য গ্রহণ করা সম্ভব হবে।

অপটিক্যাল ফাইবার কিঃ

অপটিক্যাল ফাইবার হলো ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ দিয়ে তৈরি এক ধরনের সরু, পাতলা, স্বচ্ছ এবং নমনীয় কাঁচ সাধারণত বিশুদ্ধ কাচ (সিলিকা) অথবা প্লাস্টিক তন্তু, যেটি আলো নিবন্ধ করন এবং পরিবহন করতে সক্ষম। বিভিন্ন প্রতিসরাঙ্কের এ ধরনের ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার তৈরি করা হয়। ফলিত বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ফাইবার অপটিক্স শাখায় অপটিক্যাল ফাইবার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।

অপটিক্যাল ফাইবারের অংশঃ

অপটিক্যাল ফাইবারের প্রধানত তিনটি অংশ থাকে। যথা-
১. কোরঃ অপটিক্যাল ফাইবারের ভিতরের ডাই-ইলেকট্রিক কোর থাকে যার ব্যাস ৮ থেকে ১০০ মাইক্রোন হয়ে থাকে।
২. ক্ল্যাডিংঃ কোর কে আবদ্ধ করে বাইরে যে ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থটি থাকে তাকে ক্ল্যাডিং বলে। কোরের প্রতিসরাঙ্ক ক্ল্যাডিং-এর প্রতিসরাঙ্কের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।
৩. জ্যাকেটঃ জ্যাকেট অংশটি বাইরের আবরণ হিসেবে কাজ করে।

অপটিক্যাল ফাইবারের প্রকারভেদঃ

অপটিক্যাল ফাইবারের প্রকারভেদ বিভিন্ন পরিমাপকের উপর নির্ভর করে। গাঠনিক উপাদানের প্রতিসরণ সূচকের উপর ভিত্তি করে অপটিক্যাল ফাইবার দুই রকম। যথা-
১. Mono Mode Optical Fibre. (কোর অংশ সরু, ব্যাস প্রায় 5µm বা তার কম, ক্ল্যাডিং তুলনামূলকভাবে বড়)
২. Multi-mode Optical Fiber
Multi-mode Optical Fiber আবার দুই প্রকার। যথা-
(ক) Step Index Multi-Mode Fiber
(খ) Graded Index Multi-Mode Fiber
ফাইবার তৈরির উপাদানের উপর ভিত্তিতে করে অপটিক্যাল ফাইবার দুই প্রকার। যথা-
১. Plastic Optical Fibers. (এই ফাইবারে Polymethylmethacrylate নামক উপাদান ব্যবহার করা হয়)
২. Glass Fibers. (অত্যন্ত সূক্ষ্ম কাচের ফাইবার ব্যবহার করা হয়)
আলোর বিচ্ছুরণের ওপর ভিত্তিতে অপটিক্যাল ফাইবার দুই প্রকার। যথা-
১. Single-Mode Fibers. (এই ফাইবারগুলি অনেক দূরবর্তী স্থানে সংকেত প্রেরণে জন্য ব্যবহৃত হয়)
২. Multimode Fibers. (এই ফাইবারগুলি স্বল্প-দূরত্বে সংকেত প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত হয়)
স্টেপ ইনডেক্স ফাইবারের কোরের প্রতিসরাঙ্ক সর্বত্র সমান থাকে। গ্রেডেড ইনডেক্স ফাইবারের কোরের প্রতিসরাঙ্ক কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি এবং এর ব্যাসার্ধ বরাবর কমতে থাকে। কোরের প্রতিসরাঙ্কের ভিন্নতার জন্য এ দু ধরনের ফাইবারের আলোকরশ্মির গতিপথও ভিন্ন হয়। গ্রেডেড ইনডেক্স ফাইবারের তুলনায় স্টেপ ইনডেক্স ফাইবারের কোরের ব্যাসার্ধ বেশি।

ফাইবারের গঠন উপাদানঃ

অপটিক্যাল ফাইবারের কেন্দ্রে যে অংশ থাকে তাকে কোর বলে। এই কোর অতি সূক্ষ্ম ও পাতলা কাজ দিয়ে তৈরি। এ কোরের ব্যাগ সাধারণত ১০-১০০ µm (মাইক্রোমিটার) হয়ে থাকে। একটি কাঁচের আবরণ দিয়ে এই করে চারপাশ ঘেরা থাকে যাকে ক্ল্যাডিং বলে। এবং একটি প্লাস্টিকের আবরণ দিয়ে এই ক্যাডিং অংশকে ঘেরা থাকে।
যার ভেতরে আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে আলো সামনের দিকে অগ্রসর হয়। এভাবে আলো কাচ বা প্লাস্টিক তন্তুর এক প্রান্তর দিয়ে প্রবেশ করে অন্য প্রান্তে প্রবাহিত হয়। যেহেতু আলো বাইরে বের হতে পারে না সেহেতু আলোর গতিতে কাজে লাগিয়ে দ্রুত গতিতে তথ্যের আদান প্রদান করা হয়।
অর্থাৎ প্রতিটি সংকেতকে খুব দ্রুত একই স্থান থেকে দূরবর্তী স্থানে প্রেরণ সম্ভব হয়। ফাইবার তৈরীর ক্ষেত্রেডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ হিসেবে সিলিকা, সোডা বোরো সিলিকেট, সোডা লাইম সিলিকেট, সোডা অ্যালুমিনা সিলিকেট ইত্যাদি মাল্টি কম্পোনেন্ট কাচ এর ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। অপটিক্যাল ফাইবারের প্রধান বাধা হলো ক্লাডিং এর ক্ষয়।
তাই অপটিক্যাল ফাইবার তৈরির ক্ষেত্রে সাধারণ কাছের ব্যবহার অনুপযুক্ত। কারণ এর মধ্যে দিয়ে আলোকরশ্মি পরিবহনের সময় কিছুদূর যেতে না যেতেই আলোকরশ্মি শেষ হয়ে যায়। এছাড়াও অপটিক্যাল কমিউনিকেশনের জন্য যে পরিমাণ স্বচ্ছ কাঁচের প্রয়োজন হয় সাধারণ কাজ মোটেও সে পরিমাণ স্বচ্ছ নয়।

ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ গুলোর বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ

১. অতি স্বচ্ছতা
২. রাসায়নিক সুস্থিরতা বা নিষ্ক্রিয়তা
৩. সহজ প্রক্রিয়াকরণ যোগ্যতা।
বর্তমানে ফাইবার অপটিক ক্যাবল তৈরির ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ব্যবহৃত হচ্ছে।

অপটিক্যাল ফাইবারের সুবিধাঃ

বিশেষ করে সময় বাঁচানোর জন্য এবং দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান করতে অপটিক্যাল ফাইবার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
  • খুব দ্রুত ও দূরবর্তী স্থানে একসঙ্গে অনেক তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণ করা যায়।
  • তথ্য পরিবহনের তথ্যের ক্ষয় কম হয় এবং তড়িৎচুম্বকীয় প্রভাব থেকে তথ্যমুক্ত থাকে।
  • অপটিক্যাল ফাইবার সাধারণত টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে।
  • আলোকসজ্জা, সেন্সর ও ছবি সম্পাদনার কাজেও বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে।
  • উচ্চ ব্যান্ডউইথ।
  • আকারে ছোট এবং ওজন অত্যন্ত কম।
  • ডেটা সংরক্ষণের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা।
অপটিক্যাল ফাইবার দ্রুত গতির ইন্টারনেট সরবরাহের পাশাপাশি আরো বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন-
  • কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং।
  • সার্জারি এবং দন্তচিকিৎসা।
  • মোটরগাড়ি শিল্প।
  • টেলিফোন।
  • মেকানিক্যাল পরিদর্শন।
  • ক্যাবল টেলিভিশন।
  • মিলিটারি এবং স্পেস অ্যাপ্লিকেশন

অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে কিভাবে ডেটা আদান-প্রদান করা হয়ঃ

ফাইবার অপটিক কমিউনিকেশন ব্যবস্থা প্রধানত তিনটি মূল অংশ নিয়ে গঠিত।
(১) প্রেরক যন্ত্র।
(২) প্রেরণ মাধ্যম।
(৩) গ্রাহক যন্ত্র
প্রেরক যত্ন উৎস থেকে ডেটা সংগ্রহ করে ফাইবারের মাধ্যমে তা গ্রাহক যন্ত্রে পৌঁছায়। অপটিক্যাল ফাইবার সরাসরি অ্যানালগ বা ডিজিটাল ডেটা পরিবহন করতে পারেনা। অপটিক্যাল ফাইবারকে প্রেরক যন্ত্রের সাহায্যে প্রয়োজনীয় মডুলেটর ও লাইট ইমিটিং ডায়োডের মাধ্যমে তথ্য কে আলোক তরঙ্গে পরিণত করে ফাইবারের মধ্যে প্রেরণ করা হয়।
অপটিক্যাল ফাইবার আলোক রশির পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে ডাটা পরিবহন করে থাকে। আলোকরশ্মি যখন কোনো ক্ল্যাডিং এর বিভেদ তলে আপতিত হয় তখন তা স্নেলের সূত্রানুসারে প্রতিসৃত হয়। এভাবে কোন কোন আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে তথ্য গ্রাহক যন্ত্রে আটকা পড়ে। গ্রাহক যন্ত্রের প্রধানত দুইটি অংশ থাকে।
একটি হল ফটো ডিটেকটর এবং অন্যটি হলো প্রসেসিং ইউনিট। ফাইবার থেকে ডাটা উদ্ধারের কাজ করে ফটো ডিটেক্টর। এবং প্রসেসিং ইউনিট এর মধ্যে থাকে অ্যামপ্লিফায়ার, ফিল্টার, ডিমডুলেটর ইত্যাদি। এই যন্ত্র গুলো ডাটাকে প্রয়োজন অনুসারে ও নির্ভুলভাবে ডিমডুলেশন, অ্যামপ্লিফিকেশন এবং ফিল্টারেশনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছায়।

উপসংহারঃ

আজকে আমরা তথ্য প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অপটিক্যাল ফাইবার কি, অপটিক্যাল ফাইবার এর গঠন, প্রকারভেদ এবং অপটিক্যাল ফাইবারের সুবিধা নিয়ে আলোচনা করলাম। আশাকরি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা অপটিক্যাল ফাইবার সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। আজকের এই তথ্যগুলো আপনাদের উপকারে আসলে আপনাদের বন্ধু-বান্ধব এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে পারেন। যেকোন তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে অবশ্যই কমেন্ট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url