মোবাইল প্রযুক্তি-মোবাইল ফোনের সুবিধা

মোবাইল প্রযুক্তি নিয়ে অনেকেরই আগ্রহের শেষ নেই। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মোবাইল প্রযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের বর্তমান জীবনে মোবাইল ফোন একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল ফোনের সুবিধা বলে শেষ করা অসম্ভব।
মোবাইল প্রযুক্তি-মোবাইল ফোনের সুবিধা
মোবাইল ফোনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন দিক দিয়ে সুবিধা গ্রহণ করে থাকে। তার ছাড়া কথা শোনার এক অনবদ্য মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল ফোন। শুধু নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সিগন্যালকে ডিজিটালে শনাক্ত করে তার মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়।

সূচিপত্রঃ-মোবাইল প্রযুক্তি-মোবাইল ফোনের সুবিধা

প্রাথমিক কথাঃ

১৯০৮ সালে সর্বপ্রথম মোবাইল ফোনের ধারণা পাওয়া যায়। ১৯০৮ সালের সেই সময়ে ওয়্যারলেস কমিনিকেশনের জন্য ইউএস প্যাটেন্ট কেন্টকি রাজ্যে টেলিফোনের মত দেখতে একটি জিনিস স্থাপন করা হয়েছিল।
১৯২৬ সালে জার্মান সরকার তাদের প্রথম শ্রেণীর রেলের যাত্রীদের সুবিধার জন্য রেল কর্তৃপক্ষের দ্বারা হামবুর্গ থেকে বার্লিন পর্যন্ত ‘The Deutsche Reichsbahn’ ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনের জন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছিল। এবং সেই সময়ে এই ওয়ারলেস কমিউনিকেশনের উদ্যোগটি, ওয়ারলেস কমিউনিকেশন ইতিহাসের একটি বড় মাইলফলক হিসেবে দেখা দিয়েছিল।

মোবাইল ফোন কিঃ

মোবাইল ফোন হলো এমন একটি যন্ত্র যা সাধারণত টেলিফোনের মতো আচরণ করে কিন্তু এটি একটি বিস্তৃত জায়গায় কাজ করে (কর্ডলেস টেলিফোনের মতো লিমিটেড রেঞ্জ নয়)। টেলিফোন নেটওয়ার্কের মতো নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এক মোবাইল ফোন থেকে সরাসরি নম্বর টিপে আর এক যোগাযোগ করা যায়। বর্তমান সময়ের মোবাইল ফোনগুলোতে রেডিও ওয়েভ ট্রান্সমিশন এবং শনাল টেলিফোন সার্কিট সুইসিং-এর সমন্বয় ব্যবহৃত হয়।
প্যাকেট সুইসিং-এর মাধ্যমে মোবাইল ইন্টারনেট অ্যাক্সেস ও ওয়াপ (WAP) ফ্যাসিলিটি দেয়া সম্ভব হচ্ছে। মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের জন্য ডিজাইন করা হয় এবং এগুলোতে স্ট্যান্ডার্ড কিছু সার্ভিস ফ্যাসিলিটি থাকে। এর মাধ্যমে শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, এক দেশ থেকে আর এক দেশে যোগাযোগ সম্ভব। মোবাইল ফোন ব্যবহারের আগে মোবাইল ফোন কোম্পানিকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হয় এবং তারা সিম কার্ড দিয়ে থাকে। কোন সেটে সিম কার্ড ঢুকালেই সার্ভিস দেয়া সম্ভব হয়। মোবাইল ফোন শুধু ভয়েস কল সাপোর্ট করে না, এটির মাধ্যমে ডেটা পাঠানো বা রিসিভ করাও যায়।

আধুনিক মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত প্রযুক্

অনেকেই মনে করে থাকেন, গত ১০ বছর ছিল স্মার্টফোনের রাজত্বকাল। এবং ভবিষ্যতেও স্মার্টফোনের রাজত্বকাল অনেকদিন পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে এমনটি ভাবা অস্বাভাবিক নয়। আমরা প্রতিদিন যে জিনিসটি গড়ে প্রায় ২,৬১৭ বার স্পর্শ করে থাকি, যে জিনিসটি ব্যবহার করে আমরা বছরে প্রায় ৮০০ ঘন্টা অতিবাহিত করি, সেই মোবাইল প্রযুক্তি, মোবাইল ফোনের সুবিধা সম্পর্কে আমরা আজকে জানবো। প্রাণিজগতের ক্ষেত্রে যেমন বিবর্তন রয়েছে ঠিক তেমনি মোবাইল প্রযুক্তি তেও এর বিবর্তন রয়েছে।
আরো পড়ুনঃBIOS কি - Three Finger Salute কি
আধুনিক মোবাইল ব্যবস্থায় সাধারণত নিম্নলিখিত যে কোনো একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় :
১. এফডিএমএ (FDMA Frequency Division Multiple Access)
২. সিডিএমএ (CDMA-Code Division Multiple Access)
৩. জিএসএম (GSM-Global System for Mobile)

মোবাইল ফোনের বৈশিষ্ট্যঃ

মোবাইল প্রযুক্তি বিবর্তনের ফলে মোবাইল ফোন নির্মাতারা তাদের ফোনকে বিশেষায়িত এবং ব্যবহারকারীর কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য সংযুক্ত করে থাকে। কিন্তু প্রতিটি মোবাইলের ক্ষেত্রে সাধারণ কিছু প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা প্রতিটি মোবাইল ফোনের জন্য অপরিহার্য। প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য গুলো হলঃ
  • তড়িৎ কোষ বা ব্যাটারী থাকে যা ফোনের শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
  • ফোনের ইনপুট পদ্ধতির মাধ্যমে ফোন ব্যবহারকারীর সাথে ফোনের একটি মিথস্ক্রিয়া বা দ্বি-পাক্ষিক যোগাযোগ সম্ভব হয়। জনপ্রিয় ইনপুট পদ্ধতিটি হচ্ছে কি প্যাড। তবে বর্তমানে স্পর্শ কাতর পর্দা বা টাচ স্ক্রীন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
  • মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যবহারকারী কথা বলা কিংবা খুদে বার্তা বা এসএমএস পাঠাতে পারেন।
  • জিএসএম মোবাইল ফোন গুলোতে সিম কার্ড ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কিছু কিছু সিডিএমএ মোবাইল ফোনে সিম কার্ডের পরিবর্তে রিম কার্ড ব্যবহৃত হয়।
  • প্রতিটি মোবাইল ফোনের জন্য একটি নির্দিষ্ট এবং স্বতন্ত্র আইএমইআই (IMEI) নাম্বার থাকে যার মাধ্যমে সেই ফোনটিকে সনাক্ত করা হয়।
  • নিম্ন স্তরের মোবাইল ফোন গুলোকে সাধারণত ফিচার ফোন হিসেবে পরিচিত এবং এই ফোন গুলোর মাধ্যমে শুধুমাত্র টেলিফোন যোগাযোগ সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। এবং কিছু মোবাইল ফোন গুলোতে অতিরিক্ত সুবিধা এবং কম্পিউটারের মতো কিছু সিস্টেম বা সেবা দেয়া থাকে যাদেরকে স্মার্টফোন বলা হয়।
  • কিছু নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে কিছু নির্দিষ্ট ফোন নির্দিষ্ট সুযোগ-সুবিধা দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। যেমন- বহুজাতিক বা কর্পোরেট ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষায়িত ই-মেইল সুবিধা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল ব্ল্যাকবেরি ফোন। সনি-এরিক্সনের গান শোনার বিশেষায়িত 'ওয়াকম্যান' সিরিজ বা 'সাইবারশট' ক্যামেরা ফোন, নকিয়ার এন সিরিজ মাল্টি মিডিয়া ফোন এবং আইফোন সিরিজ বা স্যামসাং এর গ্যালাক্সী এস সিরিজ।

মোবাইল ফোনের সাথে টেলিফোন এর সম্পর্কঃ

মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে কর্ডলেস সেটে যেমন মূল টেলিফোনের সাথে ওয়্যারলেস যোগাযোগ থাকে তেমনি সেলুলার ফোনের যোগাযোগ থাকে ঐ সেলে স্থাপিত ট্রান্সমিটারের সাথে। তবে কর্ডলেস সেট একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের বাইরে কার্যকর নয় কিন্তু সেলুলার সেট কার্যকর। সেক্ষেত্রে সেলুলার সেট পূর্ববর্তী ট্রান্সমিটারের সাথে যোগাযোগ পরিবর্তন করে ঐ সেলের ট্রান্সমিটারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। অসংখ্য টেলিফোনকে আলাদা আলাদা ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ করা যেমন কঠিন তেমনি জ্যামিং হওয়ার সম্ভাবনা এবল।
তাই সময় এলাকাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সেন (cell) বা কোষে ভাগ করা হয় এবং প্রতিটি সেলে পৃথক সম্প্রচার কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এর ফলে একই ফ্রিকোয়েন্সি একাধিক দূরবর্তী সেলে বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হয়। প্রতিটি সম্প্রচার কেন্দ্র টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে একটি মূল কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে। একই সেলে অবস্থিত সেলুলার টু সেলুলার সংযোগ স্থানে ঐ সেলে শুধু ট্রান্সমিটারের ভূমিকা থাকে। সেল ভিন্ন হলে উভয় সেনের সম্প্রচার কেন্দ্রের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়ে থাকে।

কোনো সেলুলার ও টেলিফোন বিভাগের সেটের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সেলের সম্প্রচার কেন্দ্র টেলিফোন এক্সচেঞ্জের সাথে সংযোগ স্থাপন করে অর্থাৎ সেলুলার সেট থেকে সেলের সম্প্রচার কেন্দ্র সেখান থেকে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ এবং সেখান থেকে টেলিফোন সেট। তবে সমুদয় সংযোগ কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের বদৌলতে সহজেই স্থাপিত হয়। এভাবে ট্রাঙ্কবল বুক করে ভিন্ন এলাকার এবং বিদেশেও টেলিফোন করা যায়।

এক এলাকার ফোন পৃথক কোনো এলাকায় ব্যবহার করার জন্য ঐ এলাকার কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ অর্থাৎ ঐ এলাকার সেলুলার ফোন কোম্পানির অনুমতি ও সহায়তা নিতে হবে। চলন্ত গাড়ি থেকে গাড়িতে কথা বলার সময় সেল পরিবর্তনেও কোনো অসুবিধা হয় না। কম্পিউটারের বদৌলতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তন হয়ে সংযোগ অব্যাহত থাকে।

মোবাইল ফোনের ব্যবহারঃ

বর্তমানে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন গুলো স্মার্টফোন হিসেবে পরিচিত। এ সকল ফোনের মাধ্যমে কথা বলার পাশাপাশি আরো বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
১. ই-মেইল, এসএমএস বা ক্ষুদেবার্তা, প্রেরণ ও গ্রহণ করার ক্ষেত্রে।
২. ক্যালকুলেটর, মুদ্রা, সঙ্কেত বিষয়ক কার্যাবলীর জন্য।
৩. ইন্টারনেট ব্যবহার করা।
৪. গেমস খেলা।
৫. ছবি ও ভিডিও ধারণ করা।
৬. ঘড়ির সময় দেখা।
৭. কথা রেকর্ড করা।
৮. ট্রেনের টিকিট বুকিং করা।
৯. বিদ্যুৎ/গ্যাস বিল সহ অন্যান্য পেমেন্ট করা।
১০. টাকার আদানপ্রদান করা।
ইত্যাদি আরো অনেক কাজে বর্তমানে স্মার্টফোন ব্যবহৃত হচ্ছে।

মোবাইল ফোন সিস্টেমের সুবিধাঃ

মোবাইল ফোন সিস্টেমে একটি ওয়ারলেস বা তারবিহীন টেলিফোন ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় সারাদেশকে অসংখ্য ছেলে ভাগ করে প্রতিটি ছেলের জন্য সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। প্রতিটি সেল এক একটি ষড়ভুজ আকৃতির সেল।

মোবাইল ফোনের সুবিধাঃ

১. এটি স্থান এবং সময়কে সহজ করেছে। যেকোনো স্থানে যেকোনো সময় এটি ব্যবহারযোগ্য।
২. এটি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারযোগ্য বলে তথ্য নিরাপত্তা বেড়ে গেছে।
৩. এটি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ও সবরকম যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

বাংলাদেশে মোবাইল ফোনঃ

১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম মোবাইল ফোন চালু করা হয়। সর্বপ্রথম ঢাকা শহরে হাচিসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল) এর মাধ্যমে AMPS মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোন সেবা শুরু হয়েছিল।

বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের অবস্থাঃ

বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন কোম্পানি রয়েছে। এই মোবাইল ফোন কোম্পানি গুলোর জিএসএম এবং সিডিএমএ প্রযুক্তির মোবাইল সেবা প্রদান করে আসছে। তবে বর্তমানে সিডিএমএস প্রযুক্তির মোবাইল সেবা বন্ধ হয়ে গেছে।
এ সকল প্রযুক্তির মধ্যে জিএসএম মোবাইল কোম্পানি ২০১৩ সাল থেকে তৃতীয় প্রজন্মের ৩জি সেবা দেওয়া শুরু করেছে। বাংলাদেশের মোবাইল কোম্পানি গুলোর মধ্যে একমাত্র টেলিটক নিজ দেশীয় কোম্পানি। বর্তমানের রবি এবং এয়ারটেল একত্রে মিলিত হয়ে মোবাইল সেবা প্রদান করে আসছে। বাংলাদেশের মোবাইল নাম্বার গুলো ০১ দিয়ে শুরু হয়ে থাকে। এবং নাম্বারের শুরুতে কান্ট্রি কোড +৮৮ থাকে। কান্ট্রি কোড ছাড়া মোট ১১ ডিজিটের নাম্বার ব্যবস্থা বাংলাদেশে চলমান রয়েছে।

মোবাইল কোম্পানিগুলো হলোঃ

সিটিসেল কোড - ০১১ (সিডিএমএ) [বর্তমানে বন্ধ]
রবি কোড -০১৮(পূর্ব নাম একটেল)
এয়ারটেল (বাংলাদেশ) কোড - ০১৬ (ওয়ারিদকে কিনে নেয় )- বর্তমানে রবি এক্সিয়াটা লিমিটেড কর্তৃক পরিচালিত একটি স্বাধীন ব্যান্ড, যেটি রবি এক্সিয়াটা লিমিটেডের লাইসেন্সের অধীনে পরিচালিত।
গ্রামীণফোন কোড -০১৭, ০১৩
বাংলালিংক কোড -০১৯, ০১৪ (সেবাওয়ার্ল্ডকে কিনে নেয়)
টেলিটক কোড -০১৫

শেষ কথাঃ

প্রযুক্তির ইতিহাসে মোবাইল ফোনের বিবর্তনের ইতিহাস অনেক লম্বা। বিবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে মোবাইল প্রযুক্তি আজকের এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। এবং ধীরে ধীরে উন্নত এবং নতুন নতুন মোবাইল প্রযুক্তির আবিষ্কার হচ্ছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url