ধ্বজভঙ্গ কি - ধ্বজভঙ্গ রোগের চিকিৎসা কি - স্বপ্ন দোষ কি

আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই যৌনশিক্ষার অভাবে বিভিন্ন ভূল ধারনার বশবর্তী হয়ে কুচিকিৎসা পায়। এখানে পুরুষদের সমস্যা আলোচনা করা হলো।
ধ্বজভঙ্গ কি - ধ্বজভঙ্গ রোগের চিকিৎসা কি - স্বপ্ন দোষ কি
মেয়েদের সমস্যা জরুরী শল্য স্ত্রীরোগ, ধাত্রীবিদ্যা বইতে আলোচনা করা হয়েছে।

সূচিপত্রঃ- ধ্বজভঙ্গ কি - ধ্বজভঙ্গ রোগের চিকিৎসা কি - স্বপ্ন দোষ কি

লিঙ্গশীথিলতা বা ধ্বজভঙ্গ (Impotence)

সংগাঃ যৌন সঙ্গমের পুরুষের লিঙ্গ (Penis) উত্থিত এবং শক্ত না হয়। তবে তাকে ধ্বজভঙ্গ বলে। এটি কোন স্থায়ী সমস্যা নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানসিক দুর্বলতার জন্য এ অবস্থা দেখা দিতে পারে। তবে স্থায়ী ভাবে ও অনেকে এই সমস্যায় ভুগে থাকে।
এ সমস্যায় আক্তান্ত রোগীরা ভয়াবহ মানসিক যন্ত্রনা ভোগ করে। বিশেষ করে যদি বিবাহের পর এটা ধরা পড়ে।

প্রকারভেদঃ

(১) জন্মগত বা প্রকৃত ধ্বজভঙ্গ (Congenital Impotence) 5%
(২) অকৃত বা বিবিধ কারণে (Acquired Impotence) 95%

(১) বিবিধ কারনে ধ্বজভঙ্গ (Acquired Impotence):

(ক)মানসিকভাবে দুর্বল হলেঃ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধ্বজভঙ্গ সমস্যা আক্রান্ত রোগীরা বিভিন্ন মানসিক টেনসন এর জন্য যৌন সঙ্গম উপভোগ করতে পারে না। এদের সংখ্যাই সর্বাধিক। বিষণ্নতার রোগীরা এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়। অনেকে নিজের অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র যৌনাঙ্গ আছে মনে করে হীনমন্যতায় আক্রান্ত হয়।
এ ধরনের রোগীদের জীবনের যে কোন বয়সে বিভেন্ন কারনে সময়িক/ স্থায়ীভাবে এই অসুবিধা দেখা দিতে পারে।
(খ)নেশাগ্রস্ত রোগীরাঃ গাঁজা চরস, ফেনসিডিল, পেথেডিন, হেরোইন আক্রান্ত রোগীদের যৌন উত্তেজনা বোধ ক্রামান্বয়ে লোপ পেয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
(গ) বয়সঃ একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর যৌন ইচ্ছা ক্রমান্বয়ে হ্রস পায়। স্ত্রীর সাথে বয়সের ব্যবধান হলে পুরুষ তখন মনে করে যে সে তার স্ত্রীকে যৌন তৃপ্তি দিতে অক্ষম । এই বোধ থেকে হীনমন্যতায় আক্রান্ত হয়ে ও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
(ঘ) অত্যাধিক পরিশ্রম ও অপুষ্টি ও যথাযথ খাদ্য গ্রহনে অক্ষম বিশেষ করে আমিষ ও চর্বি জাতীয় খাবার কম খেলে শরীর দুর্বল হয়। সর্বদা অত্যাধিক পরিশ্রমের ফলেও দুর্বলভাব থেকে যায় এবং যৌন উত্তেজনা বোধ কম হয়।
(ঙ) হরমোন জনিত সমস্যাঃ পুরুষের যৌন উত্তেজনার জন্য শরীরের অন্তঃক্ষরা (Endocrine Gland) গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন হরমোন দায়ী। বিশেষ করে টেসটোসটেরন নামের হরমোনের অভার বা স্বল্পতার জন্যও এ সমন্যা দেখা দিতে পারে।

(২) জনাগত ধ্বজভঙ্গ (Congenital Impotence):

এ ধরনের রোগীদের বিভিন্ন জন্ম থেকেই হরমোনের স্বল্পতা বা অভাবের জন্য, তাদের মধ্যে বিভিন্ন পুরুষালী বৈশিষ্ট্য দেখা যায় না। যেমন-নারী সুলভ আচরণ, দৈহিক গড়ন হতে পারে। ইন্দ্রিয় উত্তেজনা বোধ হয় না ইত্যাদি। অনেক রোগীদের সঠিক যৌনশিক্ষার অভাবের জন্যও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ হাটে বাজারের একশ্রেণীর হাতুড়ের মেঠো বক্তৃতা শুনে ভাবে যে তারা ধ্বজভঙ্গ রোগে ভুগছে। যেমন-বলা হয় আগা মোটা গোড়া চিকন লিঙ্গ বা যৌন উত্তেজনা হলে লিঙ্গের মাথায় তরল রস আসলে বলে শুক্র / বীর্য পানি হয়ে গেছে ইত্যাদি ।
এর প্রকৃত ব্যাখ্যা নিম্নরূপ-
লিঙ্গের অগ্রভাগ মোটা ও গোড়া চিকন ৮০% পুরুষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উত্তেজিত লিঙ্গের গোড়া চিকন ও আগা মোটা হয়। তবে কৈশোরে যাদের হস্ত মৈথুনের অভ্যাস বেশী ছিলো তাদের একটু বেশি হতে পারে।
পরামর্শঃ
এটার জন্য কোন চিকিৎসারই প্রয়োজনই নেই। রোগীকে বলতে হবে যে এটা তার স্বাভাবিক যৌন জীবনে কোন সমস্যা সৃষ্টি করবে না।

উত্তেজনায় লিঙ্গের অগ্রভাগে তরল রস আসাঃ

বিভিন্ন কারণে যেমন, অশ্লীল ছবি দেখলে, কুচিন্তা করলে লিঙ্গের অগ্রভাগে তরল রস আসে। হাতুড়ে কবিরাজ এটাকে বীর্য পানি হয়ে গেছে। এটা ডাহা মিথ্যা ও ভুল প্রচারনা। প্রকৃত পক্ষে ঐ রস হচ্ছে সেমিনাল রস, বীর্য নহে।
সমাধানঃ রোগীকে বলতে হবে এটা আসাই স্বাভাবিক বরং উত্তেজনা হলে যদি রস না আসে সেটাই অস্বাভাবিক।

পরামর্শঃ

রোগীকে প্রকৃত অবস্থা বোঝানোঃ রোগীকে মানসিক ভাবে উজ্জীবিত করতে হবে। যারা বিষণ্নতায় ভুগছে তাদের হাসি খুশি থাকার উপদেশ দিতে হবে। বোঝাতে হবে যে এটা সাময়িক সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। ভিটামিন ও মিনারেল যুক্ত খাবার খেতে হবে। নিয়মিত পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করবে। অশ্লীল ছবি, বই, সিনেমা বর্জন করবে ইত্যাদি। প্রতিদিন পরিমাণ মত ডিম, দুধ, মাছ, শাকসব্জি ও কলিজা খাবে।
প্রতিদিন কমপক্ষে ৬/ ৭ ঘন্টা ঘুমাবে এবং দুপুরে ১ ঘন্টা বিশ্রাম নিতে হবে । হরমোনের অভাব সন্দেহ হলে এ ধরনের রোগীকে এডোক্রাইন রোগ বিশেষজ্ঞ / বারডেম হাসপাতালে প্রেরণ করবে। মানসিক সমস্যা বেশি হলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের নিকট প্রেরণ করতে হবে। নেশাগ্রস্ত হলে-অভ্যাস পরিত্যাগ করে সুস্থ জীবন যাপন করতে হবে।
প্রয়োজনে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

অতিরিক্ত কামভাব (Increased Libido)

কিছু সংখ্যক পুরুষ এ সমস্যায় ভোগেন। মূলত হরমোন জনিত কারণে এটা দেখা দেয়। রক্তে টেসটোসটেরন নামক হরমোন বেশী হলে এটা হতে পারে। প্রকৃত পক্ষে কামোত্তেজনা হয়ত বেশী নয়, কিন্তু এক শ্রেণীর যুবকদের এ সমস্যা দেখা দেবার কারণ নিম্নরূপ :-
ক) সারাক্ষণ নারীদের শরীর নিয়ে বন্ধুদের সাথে আলোচনা করা ।
খ) পর্নো বই, নীল ছবি ঘন ঘন দেখা।
গ) সদ্য বিবাহিত দম্পত্তিরা বার বার সঙ্গমের মাধ্যমের আনন্দ লাভ করে। তবে এটাকে অতিরিক্ত কামভাব বলা যায় না ঘ)কিছু কিছু নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির কামভাব বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু রতিক্রিয়াতে ক্ষনস্থায়ী হয়।
পরামর্শঃ
  • সুস্থ যৌন জীবন যাপনের উপদেশ দিতে হবে।
  • ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলতে হবে।
প্রয়োজনে চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

স্বপ্ন দোষ (Night Fall)

১৪-১৫ বছর বয়স হলে পুরুষের বিভিন্ন হরমোন, মূলত টেসটোসটেরনের প্রভাবে যৌবনের চিহ্ন সমূহ যেমন-দাড়ি, গোফ উঠা, যৌনকেশ গজানো, কন্ঠস্বর ভারী হওয়া, পুরুষাঙ্গ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হওয়া দেখা যায়। স্বাভাবিক ভাবেই এ সময়ে শুক্রাশয়ে বীর্য তৈরি হয়ে ইপিডিডাইমিসে জমা থাকে। (বিস্তারিত পল্লী চিকিৎসায় এনাটমী ও ফিজিওলজী বইতে বর্ণিত) মাসে ২/৩ বার এ বয়সে ঘুমের মধ্যে উত্তেজিত লিঙ্গ থেকে বীর্যপাত হওয়াকে সাধারণ ভাবে স্বপ্নদোষ বলে।
এতে কিশোর তরুণরা খুবই লজ্জিত ব্ৰিত থাকে এবং যথাযথ যৌন শিক্ষার অভাবে হাটে বাজারের কবিরাজদের কথিত হাবিজাবি কথা বার্তা সত্য বলে ধরে নেয়। এতে তাদের উপকার তো দূরের কথা অপকার হয় । সাধারণত নারী দেহ দর্শন, অশ্লীল বই, সিনেমা আজে বাজে আলোচনা বেশী করলে মস্তিষ্কে এগুলো আলোড়িত হয়। ঘুমানো অবস্থায় তার মনে হবে সে কোন নারীর সাথে যৌনসঙ্গ করছে, ফলে বীর্যপাত হবে। মাসে ২-৩ বার স্বপ্নদোষ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু অনেক কিশোর ও যুবকের সপ্তাহে ২/৩ বার স্বপ্নদোষ হলে তার নিম্নের চিকিৎসা করতে হবে।
পরামর্শঃ
অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হলে সে রোগীর সাথে দীর্ঘ সময় আলোচনা করে, তার দৈনন্দিন কার্যক্রম জানতে হবে। ছাত্র হলে পড়াশুনায় মনেযোগ বাড়াতে বলতে হবে। বেকার যুবকের কাজ কর্মে মনোনিবেশের কথা বলতে হবে।
  • অশ্লীল বই পুস্তক পাঠ এবং অশ্লীল সিনেমা দেখা বন্ধ করতে হবে।
  • যৌন শিক্ষা মূলক বই পড়তে পারে
  • স্বপ্নদোষ যে, স্বাভাবিক সেটা বলতে হবে।
  • প্রচুর পানি পান করবে। প্রতিদিন ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, ফল, শাকসব্জি পরিমাণ মত খাবে।
এতেও কাজ না হলে যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url