বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস

মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধ সংঘঠিত না হলে নিশ্চই বাংলার মানুষ স্বাধীনতার সুখ পেতনা। বীর ও সাহসী বাঙ্গালীদের জন্যই বাংলাদেশ আজকে একটি স্বাধীন ও সার্বোভৌম দেশ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস
যাদের জন্য পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি দেশ স্থান পেয়েছে তাদেরকে সমগ্র বাঙ্গালী জাতি স্রদ্ধা ভরে স্বরণ করে এবং তাদের জন্য দোয়া করে।

সূচিপত্রঃ-

★ভাষা আন্দোলন★

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিলো ৫২-এর ২১-শে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই। পাকিস্তানের জনসংখ্যার শতকরা ৫৬ ভাগ মানুষের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। পক্ষান্তরে সমগ্র পাকিস্তানে উর্দু ভাষীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৬ ভাগ। ১৯৪৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর 'তমদ্দুন মজলিশ' নামে অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে চালু করার দাবি নিয়ে এগিয়ে আসে 'তমদ্দুন মজলিশ'। তমদ্দুন মজলিশ ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ভাষা আন্দোলনের প্রথম পুস্তিকা 'পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু' প্রকাশ করে।

এ পুস্তিকার লেখক ছিলেন তিন জন- অধ্যাপক আবুল কাসেম, ড. কাজী মোতাহার হোসেন ও আবুল মনসুর আহমেদ।১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার উদ্দেশ্যে ঢাকায় 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' গঠিত হয়। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তান প্রথম গণপরিষদ অধিবেশনে ইংরেজির পাশাপাশি উর্দু ভাষাতে অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হলে পূর্ব বাংলার গণপরিষদ সদস্য কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এর প্রতিবাদ করেন এবং বাংলা ভাষাকে গণপরিষদের অন্যতম ভাষারূপে সরকারি স্বীকৃতির দাবি জানান।

১৯৪৮ সালের ২ মার্চ কামরুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' গঠিত হয়। সংগ্রাম পরিষদ রাষ্ট্রভাষার ক্ষেত্রে সরকারের ষড়যন্ত্র রোধ করার জন্য ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। ঐ দিন ঢাকায় বহুছাত্র আহত এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেকে গ্রেফতার হন। এজন্য ১৯৪৮-৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সময়ে প্রতি বছর ১১ মার্চ 'ভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হত। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ মোহম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় ঘোষণা দেন, উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা'। ২৪ মার্চ কার্জন হলে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি একই কথার পুনরাবৃত্তি করলে উপস্থিত ছাত্ররা 'না না' বলে তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

১৯৪৯ সালে পূর্ববাংলা সরকার বাংলা ভাষা সংস্কারের নামে 'পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি' গঠন করে। মাওলানা আকরাম খাঁ ছিলেন এ কমিটির সভাপতি। ১৯৫০ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ঘোষণা করেন, 'উর্দুই পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হবে।' ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় এক জনসভায় ঘোষণা করেন, 'উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।' পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারী আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে কাজী গোলাম মাহবুবকে আহবায়ক করে 'সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি' গঠন করা হয়।

'সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি' ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রোজ বৃহস্পতিবার (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮) 'রাষ্ট্রভাষা দিবস' পালনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং সারাদেশে হরতাল কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ছাত্র আন্দোলনের ভয়ে ভীত হয়ে নূরুল আমিন সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সংগঠিতভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' শ্লোগান দিতে দিতে বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ চত্বরে সমবেত হয়।
পুলিশ উপস্থিত ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করলে ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ বাঁধে। পুলিশ এক পর্যায়ে গুলি বর্ষণ করলে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে শহীদ হন। পুলিশের গুলি বর্ষণের প্রতিবাদে ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বিশাল শোভাযাত্রা বের হয়। এ শোভাযাত্রার উপরও পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। ফলে শফিউর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খাজা নাজিমুদ্দিন এবং পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নূরুল আমিন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদান করা হয়।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় পাকিস্তানের উর্ধতন কর্মকর্তা
পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মালিক গোলাম মোহাম্মদ
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন
পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিন
★বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি★
কুমিল্লার কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও তাঁর বন্ধু আব্দুস সালাম এবং তাদের সংগঠন 'Mother Language lover of the world' ১৯৯৮ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করার জন্য তৎকালীন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের নিকট চিঠি লেখেন। এই প্রেক্ষিতে ১৭ই নভেম্বর ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোর ৩১ তম বৈঠকে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
⮞২০০০ সালে প্রথম বারের মত ১৮৮ টি দেশে একুশে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে পালিত হয়।
⮞৫ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে জাতিসংঘ '২১ শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
⮞২১ শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ২০১৬ সালে রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম কে স্বাধীনতা পুরস্কারে প্রদান করা হয়।

সিয়েরালিওন এর দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা

২০০২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হয় বাংলাদেশে। আর এবছরই বাংলা থেকে প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরের আফ্রিকান দেশ সিয়েরালিওন বাংলা ভাষাকে তাদের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ‘আহমেদ তেজান কাব্বাহ’ (২০০২)।
রাজধানী: ফ্রিটাউন

★ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান★

আজীবন মাতৃভাষ্য প্রেমী এই মহান নেতা ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনা পর্বে, ১৯৪৮ সালে রাজপথে আন্দোলন ও কারাবরণ পরবর্তী আইনসভার সদস্য হিসেবে রাষ্ট্র ভাষায় সংগ্রাম ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অতুলনীয় ভূমিকা রাখেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি পর্যায়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাংস্কৃতিক বৈষম্য ও বাঙালির মাতৃভাষা সুরক্ষায় আন্দোলনে তার ভূমিকা ও অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত যুবলীগ কর্মী সম্মলনে যুব নেতা শেখ মুজিবসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ভাষা বিষয়ক কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। এই প্রস্তাবগুলো পাঠ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।

ভাষা বিষয়ক প্রস্তাবগুলো ছিলঃ

⮞‘বাংলা ভাষাকে পূর্ববাংলার লেখার বাহন ও আইন আদালতের ভাষা করা হউক’।
⮞‘সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা কি হইবে তা সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার জনগণের উপর ছাড়িয়া দেওয়া হউক, এবং জনগণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হউক।’
সুত্রঃ [ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা- ভাষা সৈনিক গাজীউল হক।]
১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুসহ ১৪ জন "রাষ্ট্রভাষা ২১ দফা ইশতেহার ঐতিহাসিক দলিল" নামক গ্রন্থ প্রণয়নে ভূমিকা রাখেন। যাতে ভাষা আন্দোলনসহ অন্যান্য দাবিসমূহ উল্লেখ থাকে। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারী পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের অন্যতম দাবি ছিল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা আদায়ের দাবি উত্থাপিত হয়, যার অন্যতম কুশীলব ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ১৯৪৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে অধ্যাপক আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করা ও সর্বাত্মক সংগ্রামের প্রস্তুতি গ্রহণের যে পদক্ষেপ তার কৃতিত্ব ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।

১৯৪৮ সালে ২ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আবুল কাশেম, শামসুল হক, রণেশ দাশগুপ্ত, অলি আহাদ, মোহম্মদ তোহার উপস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে মুসলিম ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিসের যৌথ সভায় নতুন করে 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' গঠিত হয়। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চের হরতাল যে কোন মূল্যে সফল করায় ১ মার্চ ১৯৪৮ সালে পত্রিকার বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন মুসলিম লীগ কাউন্সিলের সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান, তমদ্দুন মজলিসের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নঈমুদ্দিন আহমেদ ও আব্দুর রহমান চৌধুরী। ১১ মার্চ ১৯৪৮: কলকাতা ফেরত বঙ্গবন্ধু ১১ মার্চ, ১৯৪৮ হরতাল পালনের সময় আহত ও গ্রেফতার হন। এটাই শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম রাজবন্দী হওয়ার ঘটনা। ৪ দিনে মোট ৬৯ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার হন।
সুত্রঃ [ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিব- এম আব্দুল আলীম।]
১৫ মার্চ, ১৯৪৮ সালে তিনি মুক্তি পেয়েই ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং আন্দোলনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যান। ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন। ৮ জানুয়ারি, ১৯৫২ সালে অসুস্থ অবস্থায় মেডিকেল নেতৃবৃন্দের সাথে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন চলাকালীন হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী যখন বাংলা ভাষার বিপক্ষে বিবৃতি দেন, তখন ভাষা আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হয়। বঙ্গবন্ধু জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর হোসেন শহিদ সোহরাওয়াদী বাংলার পক্ষে বিবৃতি প্রদানে বাধ্য করেন। ১৯৫৩ এর একুশের প্রথম বার্ষিকী উদযাপনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, ২১ শে ফেব্রুয়ারী কে শহীদ দিবস এবং বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণার জোর দাবি জানান।

★ভাষা শহীদের পরিচয়★

⮞২১ শে ফেব্রুয়ারি শহীদ হন ৪ জন।
১. রফিক উদ্দিন আহমেদ
২. আবুল বরকত
৩. আব্দুল জব্বার
৪. আব্দুস সালাম
⮞২২ শে ফেব্রুারিতে নিহতঃ
৫. শফিউর রহমান
৬. আব্দুল আউয়াল
৭. মো. অহিউল্লাহ

★ভাষা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত সংগঠন ও সংস্থা★

তমদ্দুন মজলিসঃ প্রতিষ্ঠা- ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭।
প্রতিষ্ঠাতাঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক আবুল কাশেম এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠত হয়। আরও দুজন সদস্য হলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও শামসুল আলম।
উদ্দেশ্যঃ শুরুতে তমদ্দুন মজলিশ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেই পরবর্তীতে তা রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ভাষার দাবিতে প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক সংগঠন।
নাম গঠন আহ্বায়ক
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১লা অক্টোবর ১৯৪৮ নুরুল হক ভূঁইয়া
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ (দ্বিতীয়বার) ২ মার্চ, ১৯৪৮ শামসুল আলম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১১ মার্চ, ১৯৫০ আব্দুল মতিন
সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ** ৩১ শে জানুয়ারী, ১৯৫২ কাজী গোলাম মাহবুব
[বাংলাদেশ ও বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাস, নবম-দশম শ্রেণি]

★১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন ও যুক্তফ্রন্ট★

১৯৫৪ সালের ৮-১২ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা হলে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে বিরোধী দলসমূহ একটি জোট গঠনের প্রচেষ্টা নেয়। প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। এতে অংশ নেয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (ভাসানী-মুজিব), কৃষক-প্রজা পার্টি (শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক), নেজামে ইসলামী পার্টি (মাওলানা আতাহার আলী), ও বামপন্থী গণতন্ত্রী পার্টি (হাজী দানেশ)। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রতীক ছিল নৌকা এবং ২১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। একুশ দফা দাবীর প্রথম দাবী ছিল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করা।

১৯৫৪ সালের ৮-১২ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩ আসনে জয়লাভ করে। ১৯৫৪ সালের ৪ এপ্রিল যুক্তফ্রন্ট পূর্ব বাংলায় মন্ত্রিসভা গঠন করে। মন্ত্রিসভার মুখ্যমন্ত্রী হন এ.কে ফজলুল হক। শেখ মুজিবুর রহমান এই মন্ত্রিসভায় কৃষি, বন, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যুক্তফ্রন্ট সরকার মাত্র ৫৬ দিন ক্ষমতায় ছিল। পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ ১৯৫৪ সালের ৩০ মে ফজলুল হক মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দিয়ে পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রের শাসন জারি করেন।
⯁পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের বিপক্ষে সমমনা চারটি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়- ৪ ডিসেম্বর, ১৯৫৩ সালে।
⯁যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়- আওয়ামী মুসলিম লীগ (মওলানা ভাসানী), কৃষক প্রজা পার্টি (এ কে ফজলুল হক), নেজাম-এ ইসলাম (মাওলানা আতাহার আলী), বামপন্থী গণতন্ত্রী দল (হাজী দানেশ) নিয়ে।
⯁১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট আসন লাভ করে-মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত ২৩৭ টি আসনের মধ্যে ২২৩টি।
⯁১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক নির্বাচনে প্রভাব পরিলক্ষিত হয়- মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণির।
⯁১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল- যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি, মুসলিম লীগ ৯টি, খেলাফতে রব্বানী ১টি ও স্বতন্ত্র ৪টি।
⯁১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচারণা পরিচালিত হয়- ২১ দফার ভিত্তিতে।
⯁২১ দফা দাবির প্রথম দফা ছিল- বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান।
⯁৪ এপ্রিল ১৯৫৪ যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হন- এ কে ফজলুল হক।
⯁যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভায় কৃষি, বন, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন- শেখ মুজিবুর রহমান।
⯁যুক্তফ্রন্ট সরকার মাত্র ৫৬ দিন ক্ষমতায় ছিল। পাকিস্তানের ভৎকালীন গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ ১৯৫৪ সালের ৩০ মে ফজলুল হক মন্ত্রিসভাকে ভেঙ্গে দিয়ে পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রের শাসন জারি করেন।

☆যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব☆

বঙ্গবন্ধুর জয়লাভঃ বঙ্গবন্ধু এই নির্বাচনে ১৩৬ নং আসন (ফরিদপুর-৮) হতে, মুসলিম প্রার্থী ওহিদুজ্জামান ঠাণ্ডা মিঞাকে ১০০০০ ভোটে পরাজিত করেন। এই বিজয়ে বঙ্গবন্ধু জনগণের নিকট হতে ৫০০০ টাকা পুরস্কার পান।
বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীত্ব লাভঃ ১৯৫৪ সালের ১৫ মে ফজলুল হক মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা অবৈধ ঘোষণা ও ভেঙ্গে দেওয়াঃ ৩১ মে ১৯৫৪ সালে মাত্র ৫৬ দিনের মাথায় ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের গভর্নর গোলাম মোহাম্মদ ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের ৯২ (ক) অনুচ্ছেদ বলে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দেন।
[সূত্র: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস- ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।]
যুক্তফ্রন্টের ২১-দফা কর্মসূচিঃ ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি শহীদদের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই যুক্তফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ নির্বাচনী কর্মসূচিকে ২১ দফায় লিপিবদ্ধ করে।

★পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র (১৯৫৬)★

সংবিধান বিল উত্থাপনঃ ১৯৫৫ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের দ্বিতীয় গণপরিষদে পাকিস্তান ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সংবিধান বিল উত্থাপন করা হয়।
কার্যকরঃ লাহোর প্রস্তাবকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৫৬ সালের ২৩ শে মার্চ পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র কার্যকর হয়। বঙ্গবন্ধুসহ ১৩ জন আওয়ামী লীগ নেতা এই সংবিধানে স্বাক্ষর করেননি। কোয়ালিশন সরকার গঠনঃ ১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ রিপাবলিকান কোয়ালিশন সরকার গঠন করেন। এই সরকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।

২৩ মার্চ ১৯৫৬

🡆পাকিস্তানের সংবিধান গ্রহণ করা হয়
🡆পাকিস্তান ইসলামী প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়
🡆পূর্ব বাংলার নাম পূর্ব পাকিস্তান হয়
🡆বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদান করা হয়
🡆ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ১ম প্রেসিডেন্ট- ইস্কান্দার মির্জা।
🡆পাকিস্তানের সংবিধান বাতিল করা হয়- ৭ অক্টোবর ৫৮
🡆সংবিধান বাতিল করে প্রথম সামরিক আইন জারি করা হয়- ৭ অক্টোবর ১৯৫৮
🡆পাকিস্তানের প্রথম সামরিক আইন জারি করেন- ইস্কান্দার মির্জা
🡆গণ পরিষদে 'পাকিস্তান শাসনতন্ত্র বিল' উত্থাপিত হয় ১৯৫৬ সালের ৮ জানুয়ারি।
🡆‘পাকিস্তান শাসনতন্ত্র বিল’ উত্থাপন করেন- তৎকালীন আইনমন্ত্রী আই চন্দ্রীগড়।
🡆পাকিস্তান শাসনতন্ত্র বিলটি গণপরিষদে চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয় ২১ জানুয়ারি, ১৯৫৬ সালে।
🡆পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্রের নাম ছিল- ইসলামী প্রজাতন্ত্র সংবিধান।
🡆ইসলামী প্রজাতন্ত্র সংবিধান কার্যকর হয়- ২৩ মার্চ, ১৯৫৬।
🡆ইসলামী প্রজাতন্ত্র সংবিধান বাতিল হয়- ৭ অক্টোবর, ১৯৫৮।

☆কাগমারি সম্মেলন ১৯৫৭☆

১৯৫৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষে একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যা 'কাগমারি সম্মেলন' নামে পরিচিত। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সম্মেলনের প্রধান এজেন্ডা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন ও বৈদেশিক নীতি। অনুষ্ঠানে মওলানা ভাসানী পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, যদি পূর্ব পাকিস্তানে শোষণ অব্যাহত থাকে তবে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানকে 'আসসালামু আলাইকুম' জানাতে বাধ্য হবেন।
⯁আওয়ামী লীগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষে ১৯৫৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়- 'কাগমারি সম্মেলন'।
⯁সম্মেলন সভাপতিত্ব করেন- মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
⯁প্রধান অতিথি ছিলেন- হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
⯁সম্মেলনের প্রধান এজেন্ডা ছিল- পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন ও বৈদেশিক নীতি।

☆আইয়ুব খানের সামরিক শাসন জারি ১৯৫৮☆

১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর এক ঘোষণাবলে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানে প্রথম সামরিক শাসন জারি করেন। তিনি প্রধান সেনাপতি জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক শাসনকর্তা নিয়োগ করেন। মাত্র ২০ দিনের মাথায় তিনি প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং দেশত্যাগে বাধ্য করেন। ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান নিজেকে পাকিস্তানের স্বনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন।
🡆প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা সামরিক শাসন জারি করেন- ৭ অক্টোবর, ১৯৫৮।
🡆প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা প্রধান সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেন- জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খানকে।
🡆২৭ অক্টোবর ১৯৫৮ ইস্কান্দার মির্জাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করেন- জেনারেল আইয়ুব খান।
🡆‘মৌলিক গণতন্ত্র’ নামে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করেন- জেনারেল আইয়ুব খান।
🡆১৯৬০ সালে মৌলিক গণতন্ত্রের আস্থা ভোটে পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট- জেনারেল আইয়ুব খান।
🡆প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান সামরিক শাসন প্রত্যাহার করেন- ২৩ মার্চ ১৯৬০।

১৯৫৯ সালের মৌলিক গণতন্ত্র

২৬ শে মার্চ আইয়ুব খান সমস্ত পাকিস্তানের ৮০০০০ ব্যক্তিকে ভোটাধিকার দেয়। তারা সকল নির্বাচনে ভোট দিতে পারবে। এই মেম্বারদের বিডি মেম্বার বা বেসিক ডেমক্রেটিক মেম্বার বলা হতো। এই ব্যবস্থাকে আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেন।
মৌলিক গণতন্ত্রে চার ধরনের স্থানীয় শাসন চালু করেন-
১. ইউনিয়ন কাউন্সিল
২. থানা কাউন্সিল
৩. জেলা কাউন্সিল
৪. বিভাগীয় কাউন্সিল

★পাকিস্তানের দ্বিতীয় শাসনতন্ত্র (১৯৬২)★

প্রণয়নঃ ১৯৬২ সালে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান পাকিস্তানের দ্বিতীয় সংবিধান প্রণয়ন করেন।
⮞এই সংবিধানে পাকিস্তানকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
⮞সংসদীয় গণতন্ত্রের পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
⮞পাকিস্তানের রাজধানী করাচি হতে ইসলামাবাদে স্থানান্তর করা হয়।

☆রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ১৯৬৫☆

প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ১৯৬৫ সালের ২ জানুয়ারি মৌলিক গণতন্ত্রের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেন এবং নিজে কনভেনশন মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন। এমতাবস্থায় অধিকাংশ বিরোধী দল মিলিত হয় *COP (Combined Opposition Party)' নামে একটি সম্মিলিত জোট গঠন করে। এ জোটের প্রার্থী ছিলেন মুহম্মদ আলী জিন্নাহর ভগ্নী ফাতেমা জিন্নাহ। এ নির্বাচনে আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্রী পন্থায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
⯁১৯৬৫ সালের ২ জানুয়ারি মৌলিক গণতন্ত্রের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেন- প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান।
⯁১৯৬৫ সালের নির্বাচনকালে গঠিত বিরোধী দলগুলোর সম্মিলিত জোটের নাম- COP (Combined Opposition party)।
⯁মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন- আইয়ুব খান।

☆পাক-ভারত যুদ্ধ ১৯৬৫☆

১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাশ্মীর প্রশ্নে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ৬ সেপ্টেম্বর শুরু হয় পাক-ভারত যুদ্ধ। ১৭ দিনব্যাপী এ যুদ্ধে বাঙালি সৈন্যরা অসম্ভব সাহসিকতা দেখায়। অতঃপর জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে উভয়পক্ষের যুদ্ধ বিরতি ঘটে।
■ প্রথম পাক-ভারত যুদ্ধ সংঘটিত হয়- ২১ অক্টোবর, ১৯৪৭-৩১ ডিসেম্বর ১৯৪৮।
■ প্রথম পাক ভারত যুদ্ধের কারণ- পাকিস্তানের ভারত অধিকৃত কাশ্মীর দখলের প্রচেষ্টা।
■ দ্বিতীয় পাক-ভারত যুদ্ধ সংঘটিত হয়- ৬-২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫।
■ দ্বিতীয় পাক-ভারত যুদ্ধ যে চুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়- তাসখন্দ চুক্তি।
■ তৃতীয় পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়- ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১।
■ চতুর্থ পাক-ভারত যুদ্ধ (কারগিল যুদ্ধ) সংঘটিত হয়- মে-জুলাই ১৯৯৯।
■ কারগিল যুদ্ধের মূল কারণ ছিল- কাশ্মীর নিয়ন্ত্রণ।

★৬-দফা দাবি বা কর্মসূচি★

১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষার দাবি সংবলিত একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ইতিহাসে এটি ৬ দফা কর্মসূচী নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ২৩ মার্চ, ১৯৬৬ লাহোরের এক সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ৬ দফা ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস
ছয় দফা কর্মসূচী ঐতিহাসিক 'সাহোর প্রস্তাব' এর ভিত্তিতে রচিত। ছয় দফা দাবির প্রথম দাবি ছিল পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন। ছয় দফা কর্মসূচি বাঙালি জাতির 'মুক্তির সনদ'/'ম্যাগনাকার্টা' হিসাবে পরিচিত। এ কর্মসূচিকে তিনি 'পূর্ব পাকিস্তানের বাঁচার দাবি' বলে অভিহিত করেন। ছয় দফা কর্মসূচি দ্রুত বাঙালি জনগণ কর্তৃক সমাদৃত হয়।

🠶ছয় দফা কর্মসূচিসমূহ

১. ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা করে পাকিস্তানকে একটি সত্যিকারের ফেডারেশন বা যুক্তরাষ্ট্ররূপে গড়তে হবে। এতে পার্লামেন্টারি পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং আইনসভাগুলো হবে সার্বভৌম। সকল নির্বাচন সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের সরাসরি ভোটে অনুষ্ঠিত হবে।
২. কেন্দ্রীয় বা ফেডারেল সরকারের এখতিয়ারে কেবল দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্র এ দুটি বিষয় থাকবে। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে প্রাদেশিক সরকারের হাতে।
৩. পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুটি সম্পূর্ণ পৃথক অথচ সহজে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। এ ব্যবস্থায় মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আঞ্চলিক সরকারের হাতে থাকবে এবং দু' অঞ্চলের জন্য দুটি স্বতন্ত্র ব্যাংক থাকবে। এ ব্যবস্থায় বিকল্পস্বরূপ দু'অঞ্চলের জন্য কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে একই মুদ্রা থাকতে পারে।
৪. সকল প্রকার কর, খাজনা ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা থাকবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে। আঞ্চলিক সরকারের আদায়কৃত রাজস্বের নির্দিষ্ট একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারকে দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে, যা দিয়ে ফেডারেল তহবিল গড়ে উঠবে।
৫. বৈদেশিক বাণিজ্য থেকে আয়কৃত বৈদেশিক মুদ্রা আঞ্চলিক ভিত্তিতে হিসাব রাখতে হবে। এক অঞ্চলের আয়কৃত অর্থ সেই অঞ্চলেই ব্যয় করতে হবে। তবে কেন্দ্র এ আয়ের একটি নির্ধারিত অংশ পাবে।
৬. অঙ্গরাজ্যগুলোর তাদের আঞ্চলিক প্রতিরক্ষার জন্য মিলিশিয়া বা প্যারামিলিটারি রক্ষীবাহিনী গঠনের অধিকার থাকবে।
■ যে প্রস্তাবের ভিত্তিতে ছয় দফা রচিত হয়- লাহোর প্রস্তাব।
■ শেখ মুজিব ছয় দফা কর্মসূচির কথা প্রথম ব্যক্ত করেন- ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬।
■ ছয় দফা- বাংলার কৃষক, শ্রমিক, মজুর মধ্যবিত্ত তথা আপামর মানুষের মুক্তির সনদ।
■ ছয় দফা উত্থাপিত হয়েছিল- পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দীর্ঘ দিনের অনাচার ও বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ হিসেবে।
■ শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বিরোধী দল সম্মেলন করে- ১৯৬৬ সালের ৫- ৬ ফেব্রুয়ারি।
■ ঐতিহাসিক ছয় দফায় প্রাধান্য পায়- জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা আর পূর্ব পাকিস্তানের মহামুক্তির সনদে পূর্ণ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি।
■ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী ছিলেন- ৩৫ জন।
■ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করা হয়- ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯।
■ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসামী ছিলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
৬ দফায় অর্থনৈতিক বিষয় রয়েছে- ৩টি।

★আগরতলা পরিকল্পনা মামলা (১৯৬৮)★

প্রেক্ষাপটঃ ১৯৬৭ সালে ৬ দফা ভিত্তিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি যখন ব্যাপকভাবে আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়, তখনই আইয়ুব খান। ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারা অভিযোগ করে যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সহযোগীরা ভারতের আগরতলায় ভারতের সহযোগিতায় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর পরিকল্পনা করছে। এরই অভিযোগে ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি ২ জন সিএসপি অফিসারসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলার পরবর্তীতে ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুসহ ৩৫ জনের নামে মামলা করে। এটি আগরতলা পরিকল্পনা মামলা নামে পরিচিত।
নামকরণঃ তৎকালীন পাকিস্তান সরকার মামলাটির নামকরণ করেছিল 'রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য।
ফলাফলঃ আগরতলা মামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠে পূর্ব বাংলার সমস্ত জনগণ। প্রবল গণআন্দোলন তথা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব খানের সরকার এই মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। অবশেষে ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে। সাথে সাথে বঙ্গবন্ধুসহ সকল রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়।
১৯৬৮ সাল
⮞আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়- ৩ জানুয়ারি ৬৮।
⮞মোট আসামি ছিল- ৩৫ জন।
⮞আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসমি- শেখ মুজিবুর রহমান।
⮞শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়- ১৮ জানুয়ারি ১৯৬৮।
⮞আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার নাম- রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য।
⮞আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়- ঢাকায়।
⮞আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করেন- আইয়ুব খান।
⮞'সত্য মামলা আগরতলা' গ্রন্থের লেখক- কর্নেল শওকত আলী।

★১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান★

১৯৬৬ সালের ৬-দফা ভিত্তিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি, ১৯৬৮ সালের আগরতলা মামলার আসামীদের মুক্তি ও আইয়ুব ও মোনায়েম সরকারের শোষণনীতি ও অত্যাচার এর বিরুদ্ধে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ছিল সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ।

গণঅভ্যুত্থানের সংগঠন

ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ Student Action Committee (SAC) পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নের দুটি গ্রুপ, জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের একাংশ মিলে ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ (SAC) গঠন করে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এ সংগ্রাম পরিষদ ১১ দফা কর্মসূচি ও সাথে আওয়ামী লীগের ৬-দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে।

গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ (Democratic Action Committee):

১৯৬৯ সালের ৮ জানুয়ারি ৮ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ (DAC) গঠন করে।
■ আসাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন- ইতিহাস বিভাগের।
■ শহীদ আসাদের বাড়ি- নরসিংদী জেলার হাতিরদিয়ায়।
■ শহীদ আসাদ দিবস- ২০ জানুয়ারি।
■ আসাদ শহীদ হন- ২০ জানুয়ারি ১৯৬৯।
■ আগলতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আসামীদের মধ্যে প্রথম হত্যা করা হয়- সার্জেন্ট জহুরুল হককে।
■ ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা (১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮)।
■ শহীদ শামসুজ্জোহা ছিলেন- অধ্যাপক রসায়ন বিভাগ (রাবি)।
■ 'সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ' গণঅভ্যুত্থানে কর্মসূচি ঘোষণা করে- এগার দফা।
■ ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পটভূমিতে রচিত উপন্যাস- ‘চিলেকোঠার সেপাই’ রচয়িতা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস।
■ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলার নতুন নামকরণ 'বাংলাদেশ' করেন- ৫ ডিসেম্বর ১৯৬৯ সালে।
■ 'আসাদ গেট' যে স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত- ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান।
■ এগার দফা ঘোষণা হয়- ১৯৬৯ সালে।
■ ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে নিহত হন- মতিউর রহমান।
■ ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের সময় পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃত্ব দেন- জুলফিকার আলী ভুট্টো।
■ ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার- ২২ ফেব্রুয়ারি ৬৯
■ শেখ মুজিবুর রহমানকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি প্রদান- ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
■ শেখ মুজিবুর রহমানকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি দেন- তোফায়েল আহমেদ।

★১৯৭০ এর নির্বাচন★

১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের দীর্ঘ ২৩ বছরের শোষণের বিরুদ্ধে স্বচিত্র প্রতিবাদ ফুটে উঠে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয় ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম আক্রমণ। এই নির্বাচন ছিল ছয়-দফার পক্ষে গণ রায়।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন

⯁ ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়- ৭ ডিসেম্বর ১৯৭০
⯁ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট আসন সংখ্যা ছিল- ৩১৩টি।
⯁ পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের আসন সংখ্যা ছিল- ১৬৯টি।
⯁ পশ্চিম পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের আসন সংখ্যা ছিল- ১৪৪টি।
⯁ পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের ফলাফল ছিল- আওয়ামী
⯁ লীগ ১৬৭ পিপিপি ১টি ও স্বতন্ত্র ১টি আসনে জয়লাভ করে।
⯁ পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়- ১৯ ডিসেম্বর।
⯁ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে আসন সংখ্যা ছিল- ৩১০টি।
⯁ প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের ফলাফল ছিল- আওয়ামী লীগ ২৯৮, পিপিপি ২, জমিয়াতে ইসলাম, উলেমা-এ ইসলাম ও নেজামে ইসলাম মিলিতভাবে ৭টি।

নির্বাচনের প্রতিক্রিয়াঃ

১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে জয় লাভ করেও পশ্চিমা পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র ইয়াহিয়া-ভুট্টোর ঠাল বাহানায় সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়।

★অসহযোগ আন্দোলন★

১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু সরকার গঠনের পরিবর্তে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ১ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন। প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু ঐ দিনই (১মার্চ) দেশব্যাপী অসহযোগের আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ১৯৭১ সালের ২ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে 'অসহযোগ আন্দোলন' পরিচালিত হয়।

অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতেই একাত্তরের ২ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে নূরে আলম সিদ্দিকী ও শাজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আ.স.ম আব্দুর রব ও আব্দুল কুদ্দুস মাখন এ চার নেতা মিলে এক বৈঠকে 'স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ' গঠন করে। ঐ দিনই (২ মার্চ '৭১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের বটতলায় এক ছাত্রসভায় আ.স.ম আবদুর রব বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা প্রথম উত্তোলন করেন। জাতীয় পতাকা ছিল সবুজ আয়তক্ষেত্রের মধ্যে লাল বৃত্ত এবং লাল বৃত্তের মধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্র।

মানচিত্র খচিত এই পতাকার ডিজাইনার ছিলেন শিব নারায়ণ দাশ। এজন্য ২ মার্চ 'জাতীয় পতাকা দিবস' হিসেবে পালন করা হয়। পতাকার উভয় পার্শ্বে মানচিত্রটি সঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলার অসুবিধার কারণে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হতে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার বর্তমান রূপটি ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারিভাবে গৃহীত হয়। বর্তমান জাতীয় পতাকার ডিজাইনার কামরুল হাসান। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকার বিবরণ সবুজ আয়তক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য এবং প্রন্থের অনুপাত ১০: ৬। বৃত্তটির ব্যাসার্ধ পতাকার দৈর্ঘ্যের ৫ ভাগের এক ভাগ। লাল বৃত্তটি পতাকার খানিকটা বাম পাশে।

★মার্চ মাসের ঘটনাবলি★

১ মার্চঃ ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিল করে। এইটাকে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে আন্দোলন ও সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে জনগণকে আহ্বান জানান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ৩ মার্চ, ১৯৭১ সারা দেশে হরতাল আহ্বান করেন।
২ মার্চঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু অধিবেশন বাতিলের সিদ্ধান্তে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে গণজমায়েতের আহ্বান জানান।
৩ মার্চঃ সারাদেশে হরতাল পালিত হয় এবং পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগের জনসভায় 'জাতীয় সংগীত' হিসেবে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'আমার সোনার বাংলা' গানটি নির্বাচন করা হয়। আ.স.ম আব্দুর রব বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক উপাধিতে ভূষিত করেন। ছাত্রলীগের তৎকালীন জি.এম. শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন।
৪ মার্চঃ সেনাবাহিনীর সাথে জনসাধারণের সংঘর্ষে শতাধিক লোক আহত হয় এবং সারা পূর্ব বাংলায় কারফিউ জারি করে।
৫ মার্চঃ ইয়াহিয়ার সঙ্গে ভুট্টোর আলোচনা চলে। অন্যদিকে ঢাকা ও টঙ্গীতে পুলিশের গুলিতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়।
৬ মার্চঃ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান লে. জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ঘোষণা করেন এবং ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণে ২৫ -শে মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে আহ্বান করেন।
৭ মার্চঃ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লক্ষ মানুষের সামনে ১৮ বা ১৯ মিনিটের এক অলিখিত ঐতিহাসিক ভাষণ দেন এবং ঘোষণা করেন "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।"
৯ মার্চঃ পল্টন ময়দানের জনসভায় বঙ্গবন্ধু পরিষ্কার ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন যে পশ্চিম পাকিস্তান যেন আলাদা সংবিধান তৈরি করে, কারণ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এখন স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়ে নিজেরাই শাসনতন্ত্র তৈরি করবে। এবং পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করে নেওয়ার উদাত্ত আহবান জানিয়ে ১৪ শ দফা আন্দোলনের ডাক দেন।
১৫ মার্চঃ ইয়াহিয়া খান আলোচনার জন্য ঢাকায় আসেন এবং আলোচনার ভান করতে থাকে এবং এর মাঝে প্রত্যেক দিন বিমানে করে ঢাকায় সৈন্য ও আনা হতে থাকে।
১৬ মার্চঃ ইয়াহিয়ার সাথে বঙ্গবন্ধুর রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
১৭ মার্চঃ মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক দ্বিতীয় দফায় চলে। বঙ্গবন্ধু তার ৫০তম জন্মবার্ষিক বাঙালির উপর পশ্চিম পাকিস্তানের জুলুমের প্রতিবাদে পালন করেনি। অন্যদিকে অস্ত্র বোঝাই সোয়াত জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছালে শ্রমিকরা অস্বীকার করে। লে. জেনারেল টিক্কা খান, মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী "অপারেশন সার্চলাইট' এর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে।
১৯ মার্চঃ পূর্ব পাকিস্তান ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্রীকরণ শুরু হয়।
⯁গাজীপুরের জয়দেবপুরে মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ হয়।
২০ মার্চঃ ইয়াহিয়া খান ভুট্টোকে ঢাকায় আসার আহ্বান জানান।
২১ মার্চঃ জুলফিকার আলী ভুট্টো ১১ সদস্যবিশিষ্ট দল নিয়ে ঢাকায় পৌঁছেন এবং ষড়যন্ত্রে যোগ দেয়।
২২ মার্চঃ প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খান, বঙ্গবন্ধু, ভুট্টোর সাথে আলোচনা হয়। ধারাবাহিক বৈঠকে কাঙ্ক্ষিত ফল না হওয়ায় ইয়াহিয়া খান আবারও ২৫ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেন।
২৩ মার্চঃ আওয়ামী লীগ ২৩ শে মার্চ পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে 'প্রতিরোধ দিবস' হিসেবে পালন করে। শুধু সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্ট ও গভর্নমেন্ট হাউস ছাড়া সারা দেশে পতাকা উত্তোলন করা হয়।
⯁সেদিন ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়িতে আমার বাংলা গানের সাথে সাথে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তোলা হয়।
২৫ মার্চঃ ২৫ শে মার্চ রোজ বৃহস্পতিবার রাত ১১.৩০ মিনিটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র এবং সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের হামলার মধ্য দিয়ে। ইতিহাসের এই জঘন্যতম রাতে নিরস্ত্র বাঙালির রক্তে উপর দাঁড়িয়ে পাকবাহিনী মৃত্যুর মিছিলকে শত থেকে হাজার আর হাজার থেকে লাখে রূপান্তর করার পৈশাচিক আনন্দে মেতে উঠে।
২৬ মার্চঃ বঙ্গবন্ধু ২৫ শে মার্চ দিবাগত রাত ১২.২০ মিনিট অর্থাৎ ২৬ মার্চ টিএন্ডটি ও ইপিআর (বর্তমান বিজিবি) এর ওয়ারলেস এর মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পাকিস্তানি আর্মির কর্ণেল জহির আলম খান ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুকে রাত ১.৩০ মিনিটে গ্রেফতার করা হয়। এই অপারেশন এর নাম দেয় অপারেশন 'বিগ বার্ড'।
⯁ওয়ারলেসের মাধ্যমে পাঠানো ঘোষণাটি ২৬ শে মার্চ দুপুরে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র হতে প্রচার করেন।
⯁১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়েছিল- ২মার্চ।
⯁১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন শেষ হয়েছিল- ২৫ মার্চ।
⯁অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতেই ২ মার্চ থেকে সংগঠনগুলো যে পরিষদ গঠন করেছিল- স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
⯁ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন- ১ মার্চ, ১৯৭১।
⯁ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে প্রথমবারের মত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়- ২ মার্চ।
⯁৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণা করে- ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
⯁আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি সঙ্গীতটি পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত হয়- ৩ মার্চ, ১৯৭১।
⯁ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে প্রতিরোধ দিবস পালন করে ২৩ মার্চ।
⯁স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হয়- অসহযোগ আন্দোলন।
⯁"লোকটি এবং তার দল পাকিস্তানের শত্রু, এবার তারা শান্তি এড়াতে পারবে না" উক্তিটি করেছিল- জেনারেল ইয়াহিয়া খান।
⯁বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক ঘোষণা করা হয়- ৩ মার্চ।

★স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণা★

১৯৭১ সালের ৩ মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে 'স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ' কর্তৃক 'স্বাধীনতার ইশতেহার' পাঠ করা হয়। এই ইশতেহারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে 'জাতির জনক' এবং 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি' গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
⮞১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়েছিল- ২ মার্চ।
⮞১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দেলন শেষ হয়েছিল- ২৫ মার্চ।
⮞অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতেই ২ মার্চ ছাত্রসংগঠনগুলো যে পরিষদ গঠন করেছিল- স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ
⮞ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন- ১ মার্চ, ১৯৭১
⮞অধিবেশন স্থগিতকরণকে বঙ্গবন্ধু আখ্যায়িত করেন- দুর্ভাগ্যজনক হিসেবে অধিবেশন স্থগিতকরণের প্রতিবাদে ঢাকায় ও সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল পালিত হয় যথাক্রমে- ২ মার্চ ও ৩ মার্চ।
⮞ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে প্রথমবারের মত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়- ২ মার্চ।
⮞৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে 'স্বাধীনতার ইশতেহার' ঘোষণা করে- ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ
⮞আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি- সঙ্গীতটি পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত হয়- ৩ মার্চ ১৯৭১।
⮞বঙ্গবন্ধু 'রেসকোর্স ময়দানে' ঐতিহাসিক ভাষণ দেন- ৭ মার্চ।
⮞অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম ছয়দিনে সরকারি প্রেসনোট অনুযায়ী হতাহতের সংখ্যা ছিল- ১৭২ জন নিহত এবং ৩৫৮ জন আহত।
⮞'ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ' পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে 'প্রতিরোধ দিবস' পালন করে- ২৩ মার্চ।
⮞স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হয়- অসহযোগ আন্দোলন।
⮞বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক ঘোষণা করা হয়- ৩ মার্চ

★৭-ঐ মার্চের ভাষণ★

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ১৮ বা ১৯ মিনিটের এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো ভাষণটিকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ভাষণে তিনি ৪টি দাবির কথা উল্লেখ করেন এবং প্রচ্ছন্নভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। দাবি চারটি হল।
ক) সামরিক শাসন প্রত্যাহার
খ) গণপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর
গ) সেনাবাহিনীর গণহত্যার তদন্ত করা
ঘ. সৈন্যদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া
এ ভাষণ রেডিও টিভিতে সম্প্রচার হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এ ভাষণ স্বাধীনতা আন্দোলন বেগবান করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ৭ মার্চের ভাষণ ছিল মূলত স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা মুক্তি সংগ্রামের ঘোষণা। এ ভাষণে তিনি ঘোষণা করেন- "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।"
⯁ বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ যেখানে দিয়েছিলেন তার বর্তমান নাম- সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
⯁ ৭ মার্চ ভাষণ প্রদানকালে যে আন্দোলন চলছিল- অসহযোগ আন্দোলন।
⯁ ৭ মার্চের ভাষণের মূল বিষয় ছিল- ৪টি।
⯁ অসহযোগ আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছিল- ৭মার্চ ভাষণের পর। 'এবারে সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম' উক্তিটি যে ভাষণের অংশ- ৭ মার্চ ভাষণের।
⯁ ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো এ ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
⯁ রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চের ভাষণ শুরু হয়েছিল- বিকাল ৩ ঘটিকায়।

☆৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি☆

⯁ বিখ্যাত বইয়ে ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব বিখ্যাত লেখক ও ইতিহাসবিদ জ্যাকব এফ ফিল্ডের বিশ্বসেরা ভাষণ নিয়ে লেখা বিখ্যাত বই "We shall Fight on the Beaches The speeches that Inspired the history" বইয়ে ৪১টি ভাষণের মধ্যে ২৫২ পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ স্থান পেয়েছে।
⯁ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি: ২৪-২৭ অক্টোবর ২০১৭ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে সংস্থাটির আন্তর্জাতিক পরামর্শক কমিটি ১৩০টি ঐতিহাসিক দলিল, নথিপত্র ও বক্তৃতা যাচাই- বাছাই করে UNESCO এর মহাপরিচালক 'ইরিনা বোকোভা' ৩০ অক্টোবর, ২০১৭: ৭৮টি বিষয়কে 'Memory of the World Register' এর অন্তর্ভুক্তর সুপারিশ করে। এরই মধ্যে ৭ মার্চের ভাষণ অন্যতম "বিশ্ব 'প্রামাণ্য দলিল' হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং 'Memory of the World Register' এ অন্তর্ভুক্ত হয়। এই স্বীকৃতি পেতে UNESCO-কে প্রয়োজনীয় দলিল ও তথ্য সরবরাহ করেন ফ্রান্সের প্যারিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোঃ শহিদুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।

★২৫ মার্চের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনা★

১৯ মার্চ, ১৯৭১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গাজীপুরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র গতিরোধ গড়ে তোলা হয়। পাকিস্তানি সেনারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যে গণহত্যামূলক অভিযান চালিয়েছিল তার নাম দিয়েছিল 'অপারেশন সার্চ লাইট।

★স্বাধীনতার ঘোষণা★

২৫ মার্চ ১৯৭১ রোজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ধানমন্ডির ৩২ নং বাসা হতে গ্রেফতার করা হয়। ওইদিন দিনের বেলা যে কোন জরুরি ঘোষণা প্রচারের উপলক্ষ্যে তিনি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রকৌশলী নিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনে একটি ট্রান্সমিটার স্থাপন করেন বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে উল্লেখ আছে। বন্দি হবার পূর্বে মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং এ ঘোষণা ওয়‍্যারলেস যোগে চট্টগ্রামে প্রেরণ করেন।

পরের দিন বিবিসি'র প্রভাতী অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি প্রচারিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণা হিসাবে ধরে নিয়ে ১৯৮০ সালে ২৬ মার্চকে স্বাধীনতা দিবস বা জাতীয় দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ২৬ মার্চ, ১৯৭১ দুপুরে তৎকালীন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র হতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি প্রচার করেন। ২৭ মার্চ, ১৯৭১ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র হতে মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পুনঃপাঠ করেন।
⯁ স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের শুরু- ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বা ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে।
⯁ আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি হয়- ১০ এপ্রিল, ১৯৭১।
⯁ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানে সংযোজন হয়- পঞ্চদশ সংশোধনীতে।
⯁ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন- অধ্যাপক ইউসুফ আলী।
⯁ ২৬ মার্চ অপরাহ্ণে লিফলেটের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক- আব্দুল হান্নান।
⯁ ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় সাড়ে সাতটায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠ করেন- মেজর জিয়াউর রহমান।

★স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র★

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে দেশের সকল রেডিও স্টেশন পাকিস্তানী সৈন্যরা নিয়ন্ত্রণে নেয়। ২৬ শে মার্চ দুপুর চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বেতার কেন্দ্র হতে এম.এ হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এ সময় বেতার কেন্দ্রের কয়েকজন বেতার কর্মী ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ স্বাধীনতার পক্ষে জনগণকে সচেতন করার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং নতুন নাম দেন "স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র।"
➤ ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন 'স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র' হতে।
➤ ২৮ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমানের অনুরোধে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র হতে বিপ্লবী কথাটা বাদ দিয়ে নামকরণ করা হয় 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র'।
➤ ৩০ শে মার্চ প্রায় ২টা ১০ মিনিটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বোমা বর্ষণের ফলে বেতার কেন্দ্রটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
➤ প্রতিষ্ঠাতা ১০ জন দুটি দলে বিভক্ত হয়ে আগরতলা ও ত্রিপুরার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন।
➤ মুজিবনগর সরকার নিকট হতে বেতার কর্মীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি শক্তিশালী ৫০ কিলোওয়াটের ট্রান্সমিটার প্রদান করে।
➤ ২৫ মে, ১৯৭১ কলকাতার বালিগঞ্জে ৫৭/৮ নং সার্কুলার রোডে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রটি পুনরায় স্থাপন করে সম্প্রচার শুরু করা হয়।
➤ ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবার পর এর নাম রাখা হয় 'বাংলাদেশ বেতার'।
➤ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বেলাল আহমেদ। (তৎকালীন চট্টগ্রাম বেতারের সম্প্রচারক) এছাড়াও আরও ৯ জন ছিলেন যাদের সহায়তা এই বেতার কেন্দ্র চালু হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url