ইন্টারনেট কি-ইন্টারনেট কত প্রকার ও কি কি

ইন্টারনেট এর সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আমাদের জীবনের প্রতিটি মূহূর্ত ইন্টারনেটের সাথে অতপ্রতভাবে জড়িত। আমাদের অনেকের দিনের শুরুটা হয় Facebook, Twitter, WhatsApp সহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম Check করার মাধ্যমে।
ইন্টারনেট কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি কিন্তু আমাদের অনেকেরই ইন্টারনেট সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই। যে জিনিসটা সবসময় ব্যবহার করি সে সম্পর্কে আমাদের ভালো ধারণা থাকা উচিত।ইন্টারনেট আমাদের দৈনন্দিন কাজের সাথে জড়িত। ইন্টারনটের মাধ্যমে আমাদের জীবন প্রতিনিয়ত প্রভাবিত হচ্ছে।

সূচিপত্রঃ- ইন্টারনেট কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি

ইন্টারনেট কাকে বলে

ইন্টারনেট হলো একটি বিশাল নেটওয়ার্ক যা সারা বিশ্বের কম্পিউটারকে সংযুক্ত করে রেখেছে। মানুষ ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে যেকোনো জায়গা থেকে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে এবং যোগাযোগ করতে পারে। ইন্টারনেট হলো পৃথিবীর বিস্তৃত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। এটি অসংখ্য নেটওয়ার্কের সংযোগে তৈরি নেটওয়ার্ক। এটা বিশেষ ধরণের গেটওয়ে বা রাউটারের মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্কগুলো একে-অপরের সাথে সংযোগ করার মাধ্যমে গঠিত হয়।
তথ্য কি-উপাত্ত কি-তথ্য ও উপাত্তের মধ্যে পার্থক্য
বিস্তারিত পড়ুন
১৯৮২ সালে বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্যে সংযোগের উপযোগী টিসিপি/আইপি (TCP/IP: Transmission Control Protocol/ Internet Protocol) প্রোটোকল উদ্ভাবনের সাথে ইন্টারনেট শব্দটি চালু হয়। ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রধানত নিম্নলিখিত উপাদানগুলো প্রয়োজন-
১. কম্পিউটার, ২. মডেম, ৩. টেলিফোন লাইন, ৪. ইন্টারনেট সংযোগ এবং ৫. সফটওয়্যার।

ইন্টারনেট এর পূর্ণরূপ কি

ইন্টারনেট একটি ইংরেজি শব্দ। ইন্টারনেট বা Internet এর পূর্ণরুপ হচ্ছে Interconnected network (ইন্টারকানেক্টেড নেটওয়ার্ক)। ইন্টারনেট বা Internet শব্দটি এসেছে ‘Inter’ এবং ‘net’ এই দুইটি শব্দ থেকে। ‘Inter’ শব্দের অর্থ ভেতরে এবং ‘net’ শব্দের অর্থ জাল। সুতরাং, Internet শব্দের অর্থ হলো ভেতরের জাল বা অন্তর্জাল। Internet কে সংক্ষেপে ‘Net’ নামে পরিচিত।

ইন্টারনেটের উপাদান

ইন্টারনেটের উপাদানগুলো হলো User বা ব্যবহারকারী, তথ্য, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা এবং কম্পিউটার ইত্যাদি।

ইন্টারনেট এর জনক কে

ইন্টারনেট আবিষ্কৃত হয় ১৯৮৩ সালের ১লা জানুয়ারী। ১৯৮৩ সালের পূর্বে অনেক নেটওয়ার্ক থাকলেও সেগুলোর নির্দিষ্ট স্ট্রাকচার না থাকার কারণে সেই নেটওয়ার্ক গুলো সফলতা পায়নি। তবে Internet আবিষ্কারের কথা বলতে গেলে দুইজন ব্যক্তির নাম প্রথমেই আসে তাঁরা হলেন রবার্ট ই কান এবং ভিনটন জি কার্ফ। এই দুইজনের মধ্যে ইন্টারনেট এর জনক হলেন Vinton Gray Cerf. ইন্টারনেট আবিষ্কারের মূলে রয়েছে Transmission Control Protocol (TCP) এবং Internet Protocol (IP) এই দুইটি জিনিস। (TCP) এবং (IP) আবিষ্কারের মাধ্যমে গোটা বিশ্ব ইন্টারনেট জগতে প্রবেশ করে। প্রযুক্তির উন্নতির ধারার ফলে নতুন নতুন সংযোজনের ফলে ইন্টারনেট আজকে দ্রূতগতি সম্পন্ন এবং ব্যাপক সুবিধাসম্পন্ন হয়েছে।

ইন্টারনেট আবিষ্কার এর ইতিহাস

ইন্টারনেট আবিষ্কারের গোড়াপত্তন হয়েছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট এর যাত্রা শুরু হয়েছিলো। প্রথমবারের মতো আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় যোগাযোগের জন্য ১৯৬৯ সালে ১৪ ই জানুয়ারি একটি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার তৈরি করা হয়। এই যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করেছিলো মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের গবেষণাকারীরা। ইন্টারনেটের পূর্বনাম ছিলো “আর্পানেট” (ARPANET)।
স্যাটেলাইট কি-স্যাটেলাইট কত প্রকার ও কি
বিস্তারিত পড়ুন
“নিউক্লিয়ার ইবেন্ট” এর মাধ্যমে মার্কিন সামরিক বাহিনী ও সরকারের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করার উদ্দেশ্য “আর্পানেট” (ARPANET) আবিষ্কার করা হয়েছিলো। পরবর্তিতে ১৯৭৪ সালে “আর্পানেট” (ARPANET) নামক নেটওয়ার্ক সিস্টেমটি ইন্টারনেট নাসে পরিচিতি লাভ করে। ইন্টারনেট একটি নিদ্দিষ্ট সময়ে আবিষ্কৃত হয়নি তাই ইন্টারনেট আবিষ্কারের সঠিক সময় বলা সম্ভব নয়। একটি প্রযুক্তি আবিষ্কারের পর ধীরে ধীরে সম্প্রসারণের ফলে ইন্টারনেট ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটেছে। ১৯৯০ সালের দিকে Internet service provider এর আবির্ভাব ঘটে। ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি সময়ে Internet বাণিজ্যিক রূপ আত্নপ্রকাশ করে।

ইন্টারনেটের প্রকারভেদ

সাধারণত ব্যবহারকারীগণ দুভাবে ইন্টারনেট গ্রাহক হতে পারেন। যথা-
(১) অনলাইন ইন্টারনেট। (২) অফলাইন ইন্টারনেট।

অনলাইন ইন্টারনেটঃ

Online Internet হচ্ছে একটি কম্পিউটারে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটে সংযোগ রাখা। এর জন্য কম্পিউটারের একটি নির্দিষ্ট IP (Internet Protocol) Address-এর প্রয়োজন পড়ে। অনলাইন ইন্টারনেটে সাধারণত বড় বড় কোম্পানি সংযোগ স্থাপন করে থাকে।

অফলাইন ইন্টারনেটঃ

ব্যবহারকারীর নিকটবর্তী কোনো ISP (Internet Service Provider)-এর সার্ভারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করার প্রক্রিয়াই অফলাইট ইন্টারনেট বলে পরিচিত।
এছাড়াও ইন্টারনেটকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কয়েকভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-
  • ডায়াল-আপ (Dial-up)
  • ডিএসএল (DSL)
  • স্যাটেলাইট (Satellite)
  • ক্যাবল ( Cable)
  • ওয়ারলেস (Wireless)
  • সেলুলার (Cellular)

ডায়াল-আপ ইন্টারনেট (Dial up internet)

স্ট্যান্ডার্ড মোবাইল লাইন ব্যবহার করে যে Internet সংযোগ পাওয়া যায় তাকে ডায়াল-আপ ইন্টারনেট বলে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মোবাইলে ইন্টারনেট কানেকশন পেতে ১০ সেকেন্ড সময় লাগে। এই ইন্টারনেট সংযোগ ধীরগতি সম্পন্ন। তাই এটি ব্যবহারকারীর কাছে এই সংযোগটি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

ডিএসএল ইন্টারনেট (DSL internet)

ব্যবহারকারীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ধীরগতির ডায়াল-আপের পরিবর্তে দ্রুতগতি সম্পন্ন ডিএসএল ইন্টারনেট বাজারে আসে।
বুটিং কি - বুটিং কত প্রকার ও কি কি?
বিস্তারিত পড়ুন
ডিএসএল ইন্টারনেটটি ছিলো মূলত cable connection. ডিএসএল ইন্টারনেটের গতি ছিলো ডায়াল-আপের চেয়েও ১০০ গুণ বেশি। এটি ব্যবহারকারীর কাছে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট (Satellite internet)

Satellite হলো তারবিহীন দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট পরিসেবা। ব্যবহারকারীরা স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ইন্টারনেট পরিসেবা পেয়ে থাকে।

ক্যাবল ইন্টারনেট (Cable internet)

ক্যাবল ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপে Internet সংযোগ দেওয়া হয় যেটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ নামে পরিচিত। এটি ব্যবহারকারীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং দ্রুতগতিসম্পন্ন একটি মাধ্যম।

ওয়ারলেস ইন্টারনেট (Wireless internte)

দুটি মাধ্যম স্বল্প দূরত্বে অবস্থান করে একে অন্যের সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে যখন তথ্য আদান-প্রদান করে তখন তাকে ওয়ারলেস ইন্টারনেট কানেকশন বলে।

সেলুলার ইন্টারনেট (Cellular Internet)

আমরা মোবাইল ফোনে যে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করি তাকে সেলুলার ইন্টারনেট বলে। সেলুলার ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহারকারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। সেলুলার ইন্টারনেট কানেকশনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি যেকোন জায়গায় ব্যবহার করা যায়।

ইন্টারনেট সম্পর্কে কিছু/ইন্টারনেটের গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা

ইন্টারনেট ওয়ার্ক (Internet Work):
ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অনেকগুলো LAN পারস্পরিকভাবে সংযুক্ত হয়। এই ইন্টারকানেকটেড বা পরস্পর সংযুক্ত নেটওয়ার্কগুলোকে সাধারণত ইন্টারনেট ওয়ার্কস বলে। ইন্টারনেট হলো সবচেয়ে বড় ইন্টারনেটওয়ার্ক এ ধরণের নেটওয়ার্কগুলো এন্ড ইউজারকে অন্যান্য LAN এর ওয়ার্কস্টেশনে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করে অথবা অন্যান্য স্থানের অথবা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটিং রিসোর্সগুলোতে এবং ডাটাবেজে অ্যাকসেস করার সুযোগ প্রদান করে। এই পরস্পর সংযুক্ত নেটওয়ার্কগুলো ইন্টারনেটওয়ার্কি কানেকশন তৈরির জন্য ইন্টারনেটওয়ার্ক প্রসেসর যেমন সুইচ (Switches)। রাউটার (Routers), হাব (Hubs) অথবা গেটওয়ে (Gateway)- এর উপর নির্ভর করে।
রিপিটারস (Repeaters):
রিপিটার রিলে (Relay) হিসাবেও পরিচিত যা নেটওয়ার্ক সেগমেন্টকে সংযুক্ত করে এবং দুরত্বের কারণে সিগন্যালগুলো দুর্বল এবং অস্পষ্ট হলে এই ছোট ডিবাইসটি এগুলো পাঠানোর পূর্বে রিফ্রেস বা উজ্জীবিত করে এবং স্পষ্ট করে তোলে। এদের কাজ হলো নেটওয়ার্ককে যতদূর সম্ভব বড়/বিস্তৃত করে তোলা, অন্তত আরও একটি বিল্ডিং পর্যন্ত।
ব্রিজ (Bridges):
ব্রিজ ডাটা লিংক রিলে হিসেবেও পরিচিত যা লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের সেগমেন্টকে সংযুক্ত করে।
রাউটার (Routers):
রাউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বার্তার চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। রাউটার অন্যান্য নোড (Node) দের ঠিকানা একটি টেবিলে/ ছকে রাখে। যদি বার্তার ঠিকানা রাউটারের মাধ্যমে নেটওয়ার্কে পাঠানো হয় তবে বার্তাটি ফরোয়ার্ড হয়। যদি নেটওয়ার্কে ঠিকানাটি না থাকে তবে রাউটার অন্য একটি রাউটারে পাঠিয়ে বার্তাটি অন্য নেটওয়ার্কে ফরোয়ার্ড করে।
গেটওয়ে (Gateways):
বিভিন্ন ধরণের নেটওয়ার্ক সংযুক্ত করতে গেটওয়ে ব্যবহৃত হয়। যেহেতু দু'টি নেটওয়ার্ক একটি সাধারণ প্রটোকল শেয়ার করতে পারে না তাই এটি প্রত্যেক নেটওয়ার্কের প্রটোকল অনুবাদ করে যাতে এক নেটওয়ার্ক অন্য নেটওয়ার্কের ডাটা বুঝতে পারে।
হাব (Hubs):
হাব হলো একটি সুইচিং প্রসেসর। কোন নেটওয়ার্কের রিসোর্সগুলোতে শেয়ারড বা অংশীদারিত্বমূলক অ্যাকসেস করার জন্য হাব কানেকশনগুলোর মধ্যে অটোমেটিক সুইচিং সুবিধা প্রদান যাকে পোর্ট বলে। ওয়ার্ক স্টেশন, সার্ভার, প্রিন্টার এবং অন্যান্য নেটওয়ার্ক রিসোর্সগুলো হাবের সরবরাহকৃত পোর্টের সাথে সংযুক্ত হয়।
ফায়ারওয়াল (Firewall):
অটোমোবাইলের যাত্রীর এলাকা এবং ইঞ্জিন কমপার্টমেন্ট এর মধ্যকার ধাতবকে ফায়ারওয়াল বলে কারণ এটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে যাত্রী কমপার্টমেন্ট ইঞ্জিনের আগুন ছড়িয়ে পড়া থেকে রক্ষা পায়। ফায়ারওয়াল লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের ফাইল এবং প্রোগ্রামের কাছে ইন্টারনেটের অনঅনুমিত ব্যবহারকারীর পৌঁছানো প্রতিহত করে। কোন বহিরাগত ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হওয়ার সাথে সাথে কম্পিউটার এর ভেতরগত লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হয়।

ফায়ারওয়াল ইন্টারনেট এবং লোকাল নেটওয়ার্কের মাঝে ইনস্টল হয়। যদি কোন প্রতিষ্ঠান বহিরাগতদের জন্য আন্তঃক্রিয়াশীল সেবা প্রদান করতে চায় তবে এটি ফায়ারওয়াল এর বাইরে একটি ফাইল রাখে। যেখানে ফায়ারওয়াল এর অবস্থানে কম্পিউটারে বহিরাগতদের পরস্পর ক্রিয়াশীল অ্যাকসেস থাকে না সেখানে ইমেইল, মেইলিং লিস্ট এবং নিউজ সার্ভিসগুলো হয় স্টোর-এন্ড ফরোয়ার্ড (Store and Forward) সার্ভিস। ইন্টারনেটে সংযোগের ফলে যে আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে তাকে প্রতিহত করার জন্য ফায়ারওয়াল প্রয়োজন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Timeline Treasures নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url